নির্বাচনী সহিংসতায় জোড়া খুনের ঘটনায় ওসমানীনগর উত্তপ্ত, এলাকায় শোকের মাতম

7845122

মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ সিলেট প্রতিনিধি::সিলেটের ওসমানীনগরে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। এই উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনেই ইতিমধ্যে ঝরে গেছে দুুটি তাজা প্রাণ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে জোড়া খুনের ঘটনায় ওসমানীনগর এখন উত্তপ্ত। গত রোববার দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন। তারা হলেন-উপজেলার দক্ষিণ কালনীচর গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে সুহেল আহমদ, জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীচর গ্রামের শরফ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং সোমবার ভোর বেলায় সুহেল মিয়া সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ময়নাতদন্তে শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আর কোনো সংঘাত না হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের এখনও প্রায় ৬দিন বাকি। এরইমধ্যে ঝরে গেছে দুটি তাজা প্রাণ। এ নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী জগলু চৌধুরী ও আতাউর রহমানে ভাগ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিক্ষুব্দ মনোভাব কাজ করছে। যে কোনো সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ফের বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

তবে আর কোনো সংঘাত এড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেছে প্রশাসন। এজন্য সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার পরই গতকাল সোমবার বিকেলে ওসমানীনগরে ছুটে যান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সেখানে নির্বাচনে প্রার্থী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কোনো অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। কোনো ধরনের সংঘাতও কাম্য নয়।

খোজ নিয়ে জানাযায, নিহত মাদরাসা ছাত্র সাইফুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বাবা শরফ উদ্দিন মারা গেছেন প্রায় সাত বছর আগে। চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল সবার বড়। ভাইয়ের মৃত্যুত্বে এক সঙ্গে বসে ভাইয়ের শোকে বিলাপ করে কাঁদছে। সাইফুল যে মাদরাসায় পড়তো ঐ মাদরাসায় তার ছোট ভাই ও এক বোন মাদরাসায় লেখাপড়া করছে। আত্মীয় স্বজনের সাহায্য সহযোগীতা তাদের সংসারের চলে। আত্মীয় স্বজনের সহযোগীতায় বাবার ভিটের ওপর বাঁশপালার একটি ঘর তুলেছিল কিন্তু সেই ঘরটির কাজ শুরু করেই আর শেষ করতে পারেনি সাইফুল। সাইফলের মা শিরিন বেগমও ছেলের শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন।

অপর দিকে, নিহত সুহেল মিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের লোকজনরা বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাদের আহজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে পড়েছে।

নিহত সাইফুলের মা শিরিন বেগম বলেন, আমি কিছু বুঝি না। আমার ছেলেকে আইনা দেও, আমার ছেলের কী অপরাধ,তারে কেনে মারছইন।

আশারকান্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ আবু ঈমানী বলেন, নির্বাচনি সহিংসতার বলি মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যুত্বে এলাকাবাসী শোকাহত হয়ে পড়েছেন। আমরা এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

স্থানীয় বাংলা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস শহিদ ও আজিজুল হক বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর পরও তারা মারামারি করেছে। আমরা এলাকার লোকজনও আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এলাকাবাসী মনে করেন, আরও দুই-তিনদিন পড়ে হয়ত এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক হবে। প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী যাতে সুষ্টভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তারা আহবান জানান।

ওসমানীনগর থানার ওসি আবদুল আউয়াল চৌধুরী বলছেন, আর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে তিনি জানান।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2lpZJoP

March 01, 2017 at 07:18PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top