টোকিও, ০৮ মার্চ- রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে বাংলাদেশের দুই বিএনপিকর্মীর ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লীয় তেজষ্ক্রিয় দূষণ দূর করার কাজ নেওয়ার খবরে আলোচনা উঠেছে জাপানে। দুর্ঘটনাকবলিত ওই পরমাণু চুল্লীতে কাজ করাতে শ্রমিক না পাওয়ার কারণে ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি দুজনকে স্থায়ী ভিসা পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়েছিল বলে স্থানীয় সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে। তবে জাপানের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের কাজ নিয়ে দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ওই দুজন মিথ্যাচার করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই দুই বাংলাদেশি হলেন মনির হোসেন (৫০) ও দেলওয়ার হোসেন (৪২)। তারা বিএনপিকর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন বলে জাপানি সংবাদপত্র চুনিচি জানিয়েছে। তবে বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। ২০১৩ সালে পর্যটন ভিসায় জাপানে ঢোকার পর তারা জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন; যাতে তারা দুজনই বলেছেন, দেশে ফিরলে তারা রাজনৈতিক বিচারের ঝুঁকিতে পড়বেন। মনির ও ও দেলওয়ারকে টোকিও ইলেকট্রিক অ্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি (টেপ্পকো) নিয়ন্ত্রণাধীন দাইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পরিষ্কারের কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে নাগোয়া প্রদেশের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। দুই বাংলাদেশিই চুনিচিকে বলেছেন, ২০১৫ সালের শেষ দিকে তারা নাগোয়ার ওই কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেন। ফুকুশিমার তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য অপসারণ করলে শরণার্থী ভিসা পাওয়া যাবে বলে লোভ দেখানো হয়েছিল তাদের। আমাদের বলা হয়, এই কাজ জাপানের জাতীয় কাজ। এই কাজের বিবরণ ইমিগ্রেশন অফিসে দিলে সহজেই শরণার্থী ভিসা পাওয়া যাবে। আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করেছিলাম, কারণ তারা বলেছিল, জাপানিরা এই কাজটি করতে চায় না, বলেন মনির। তিনি জানান, গত বছরের ১৫ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত কাজ করার চুক্তি হয় তাদের সঙ্গে। ফুকুশিমার ইতাতে গ্রামে কাজ করার সুযোগ পান তারা। ফুকুশিমার তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য, যা সরানোর কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুই বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেওয়া নাগোয়ার ওই কোম্পানি উধাও হয়ে গেছে। জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তাকুয়া নমোতো রয়টার্সকে বলেছেন, চুনিচি পত্রিকায় ওই কোম্পানির নাম দেওয়া হয়নি। তাই আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারিনি। জাপানের বিচার বিভাগের আওতাধীন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বাংলাদেশিই মিথ্যা তথ্য দিয়ে শরণার্থী হতে আবেদন করেছেন। তাদের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অপব্যাখ্যাও দিয়েছে। সাধারণত জাপানে কেউ শরণার্থী ভিসার আবেদন করলে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। পরবর্তীতে ফলাফল ছয় মাসের মধ্যে ঘোষণা করা হয়। রয়টার্স বলছে, জাপান বিদেশি শ্রমিক প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলেও আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াকালীন সময়ে তাদের কাজের অনুমতি রয়েছে। আশ্রয় প্রার্থীদের অনেককেই থাকার ও কাজের অনুমতিও দেওয়া হয়; যদিও তা প্রতি ছয় মাস পরপর নবায়ন করতে হয়। মিসুশি আরাগামি নামে ইমিগ্রেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তেজস্ত্রিয় পদার্থ সরিয়ে জাপানের বাসিন্দা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তেজষ্ক্রিয় পদার্থ সরানো আর আশ্রয় পাওয়া দুটিই ভিন্ন জিনিস। কেউ যদি অসত্য ব্যাখ্যা দেয়, তাহলে সেটা বিরাট সমস্যা। কাজের সন্ধানে অনেক বাংলাদেশি আসছে উল্লেখ করে জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে অনেক বাংলাদেশি জাপানে কাজের সন্ধানে এসেছে। পর্যটক ভিসায় আসার পর এখানে তারা কাজ করার সুযোগ পায়। পরে তাদের অনেকে শরণার্থী হতে আবেদন করে। এই ধরনের প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি জাপানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে জোর করে ফুকুশিমার পারমাণবিক চুল্লির কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর কেউ যদি স্ব-ইচ্ছায় ওই ধরনের কাজ করে তাহলে আমাদের তো করার কিছু থাকবে না। রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে তারা মিথ্যাচার করছে কি না, তার খোঁজ নেওয়া হবে, বলেন জোবায়েদ। ২০১১ সালের ১১ মার্চ সুনামির আঘাতে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে চারপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তা দূর করায় সাধারণত সেই এলাকায় তেজস্ক্রিয় মাটির উপরের স্তর অপসারণ করতে হয়। দূষণ অপসারণে কাজ করা ১০২০টি কোম্পানির অর্ধেকের বেশি গত বছর শ্রম ও নিরাপত্তা আইন ভেঙেছে বলে ফুকুশিমা শ্রম ব্যুরোর বরাত দিয়ে জানায় রয়টার্স। নিজেদের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি জানায়, ২০১৩ সালে ঘরহীন মানুষদের তেজস্ক্রিয় মাটি ও আবর্জনা সরাতে ন্যায্য পারিশ্রমিকের কম দিয়ে ফুকুশিমায় কাজ করানো হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতে ফুকুশিমা দাইচির ১ নম্বর চুল্লীটির দ্বিতীয় রিয়াক্টরে ৫৩০ সিলভার্ট তেজস্ক্রিয়তা পাওয়ার কথা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সিলভার্ট হল তেজষ্ক্রিয়তা পরিমাপের একক। সাধারণত ১০০০ মিলি সিলভার্ট বা ১ সিলভার্ট তেজষ্ক্রিয়তার সংস্পর্শে যে কোনো প্রাণী মারা যেতে পারে। আর/১০:১৪/০৮ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2n6PZSA
March 09, 2017 at 05:58AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top