কলকাতা, ১৫ এপ্রিল- বাংলাদেশে উগ্র মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে ভারতে হাল আমলে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিকাশের চেষ্টা স্পষ্ট। আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাকে বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে বাংলাদেশে। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রস্তুতি চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। তারা লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। খবর ডয়েচে ভেলের। বাংলাদেশে নববর্ষ আজ ১৪ এপ্রিল পালিত হলেও কলকাতায় তা পালিত হবে পরদিন। তারা বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে শনিবার বর্ষবরণ উদযাপন করবে। তবে বাংলাদেশের মত কলকাতায় এই আয়োজন এত বিশাল হয় না। আবার বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনে ১৯৮৯ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হলেও কলকাতায় এতদিন তা ছিল না। প্রথমবারের মতো শনিবার কলতাকা শহরে একসঙ্গে তিনটি এলাকা থেকে এই শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক শক্তির ক্রমশ উত্থান ঘটছে৷ সদ্য সমাপ্ত কাঁথি উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জয়ী হলেও প্রচুর ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপি প্রার্থী দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে৷ ভোট কমেছে বাম প্রার্থীর৷ কাঁথিতে এর আগের তিনটি নির্বাচনেই দেখা যাচ্ছে ভোট কমছে বামদের, বাড়ছে বিজেপির৷ এই পরিস্থিতিতে যেখানে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং প্রখর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ পশ্চিমবঙ্গে প্রচার এবং প্রভাব বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে তথাকথিত গো-বলয়ের ধর্মীয় সংস্কৃতি রাম-নবমী পালনের ধূম পড়েছে, রীতিমতো সন্ত্রস্ত বোধ করছে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ৷ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির রাম-নবমীর পাল্টা হনুমান জয়ন্তী পালনের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা তারা আরও এক ভুল পথ বলে মনে করছেন৷ বরং তাঁদের মনে হচ্ছে, বাঙালির নিজস্ব যে সংস্কৃতি, যা ধর্মনিরপেক্ষ এবং সর্বজনীন, তাই এবার পালন করতে হবে প্রকাশ্যে, ধর্মীয় রাজনীতির পাল্টা হিসেবে৷ সেই কারণে এবার শুধু কলকাতা শহরে পয়লা বৈশাখের দিন তিনটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে। যেমনটা হয় প্রতিবছর ঢাকায়৷ এই তিনটি শোভাযাত্রার মধ্যে একটি অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে বাংলা ভাষা প্রসার ও চেতনা সমিতির উদ্যোগে৷ কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর লাগোয়া রাজ্য চারু ও কারু মহাবিদ্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা পয়লা বৈশাখ সকালে যাবে রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গন পর্যন্ত৷ সেখানে মেলা বসবে৷ বাংলাদেশের অনুকরণে এখানে ব্যবস্থা থাকবে পান্তাভাত, নোনা ইলিশ আর শুঁটকি মাছের৷ বাংলা পত্র-পত্রিকাও বিক্রি হবে৷ দিনভর হবে বাংলা কবিতা পাঠ, বাংলা গান৷ এদিন সকালের আরেকটি শোভাযাত্রা হবে যাদবপুরে। যার গন্তব্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়৷ বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ-এর নজর পড়েছে মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র বলে পরিচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সম্প্রতি সেখানে বেশ কিছু উপলক্ষ্যে এবিভিপির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, এমনকি হাতাহাতিও হয়েছে৷ তাই এবার সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যাদবপুরেও হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পয়লা বৈশাখের বিকেলে কলেজ স্ট্রিটে তৃতীয় শোভাযাত্রাটি হবে। এর নামকরণ হয়েছে পয়লা বৈশাখের জুলুস৷ সম্ভবত এটা বোঝাতেই যে, বাঙালির প্রাণের উৎসবে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতার স্থান কোনোদিন ছিল না, এখনও নেই৷ অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক শামিম আহমেদ যোগ দেবেন কলেজ স্ট্রিটের এই জুলুসে৷ তিনি মনে করছেন, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই ধরনের সার্বজনিক উৎসবের আরও বেশি করে প্রয়োজন আছে। যা ধর্ম নিরপেক্ষতার ভাবনাকে আরও মজবুত করবে৷ বাংলাদেশের শোভাযাত্রার ক্ষেত্রে যেমন সাজ-সজ্জায় যে ইসলাম বিরোধিতার অভিযোগ ওঠে, তাকেও অবান্তর মনে করেন শামিম৷ এতদিন পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের মঙ্গলযাত্রার কোনো প্রচলন ছিল না। বিষয়টা রাম-নবমীর মতোই নতুন। অধ্যাপক শামিমের মতে, এমন নতুন জিনিস, যা সকলের জন্যে ভালো, তার আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার আছে৷ অবশ্য পয়লা বৈশাখের উদযাপন অল্প স্বল্প আগেও হয়েছে। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা স্রোতা দত্ত জানালেন, এখন যেমন শান্তিনিকেতনে ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালিত হয়, ২০ বছর আগেও তেমনটা হতো না৷ গরমের ছুটি পড়ার আগে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখেই শান্তিনিকেতনে ২৫ বৈশাখ পালিত হতো৷ সকালের বিশেষ প্রার্থনার পর আশ্রমের একটা বিশেষ জায়গায় জড়ো হতো সবাই৷ যেখানে নানা মনীষীর লেখা থেকে পাঠ করে শোনাত ছাত্র-ছাত্রীরা৷ বিদেশ থেকে আসা গবেষকরাও নানা বই থেকে পড়ে শোনাতেন৷ দিনের শেষ হতো রবীন্দ্রনাথের কোনও একটি নৃত্যনাট্য অভিনয়ের মধ্য দিয়ে৷ রবীন্দ্রনাথের আমল থেকেই এমনটা হয়ে এসেছে৷ ধর্মের কোনো ছোঁয়া ছিল না সেই বর্ষবরণেও৷ আর/০৭:১৪/১৫ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2pkNFZd
April 15, 2017 at 01:55PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন