কলকাতা, ২৬ এপ্রিল- সাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূলকে কার্যত ঘুরিয়ে সাম্প্রদায়িক বলছে। যা এতদিন সিপিএম এবং কংগ্রেস বলার সাহস দেখায়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপির প্রতি সহানুভূতি এবং রাজনৈতিক ভরসা তৈরি হলেও বিজেপি কি শক্তিবৃদ্ধি করছে পশ্চিমবঙ্গে? বহুমূল্যের এ রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন খোদ মমতা ব্যানার্জি নিজেই। আগামী দুই বছরে পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও লোকসভার মত গুরুত্বপূর্ণ ভোটে দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির প্রভাব জেঁকে বসতে চলেছে। দুর্বল সাংগঠনিক শক্তির পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে রাজ্যটির শাসক তৃণমূল যেভাবে বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে তা থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতা ব্যানার্জির। একই সঙ্গে তিনি নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছ প্রশ্ন তুলে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ কী ছাগলের তৃতীয় ছানা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বুধবার কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তোষণের রাজনীতি করছে তৃণমূল সরকার। এখানে দুর্গাপূজার বিসর্জনের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি নিয়ে হয়। সরস্বতী পূজা হচ্ছে না স্কুলে। গত বছর মহররমের জন্য দুর্গাপূজার বিসর্জন বন্ধ করেছিল মমতার সরকার। কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে বিসর্জনের ছাড়পত্র পায় পারিবারিক পূজা। অমিতের কথায়, যেভাবে তোষণের রাজনীতি করছেন মমতা, তাতে বাংলার সংস্কৃতিতে আঘাত হানা হচ্ছে। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদি সরকার। কৃষি ও উৎপাদন শিল্পে পিছিয়ে বাংলা। নোট বাতিলের বিরোধীতা করেননি মমতা। তার রাজ্যের মালদায় অবাধে নোট পাচার হয়। রাজ্যে শুধুমাত্র বোমা তৈরির কারখানা খোলা রয়েছে। কলকাতায় পা রেখেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অমিত শাহ তথ্য-প্রমাণ দিয়ে জাতীয় স্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার অবনমনের ছবি তুলে ধরেছিলেন। পাল্টা হিসেবে আলিপুরদুয়ার থেকে তথ্য-প্রমাণ দিয়েই অমিত শাহর বক্তব্যকে খণ্ডন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রেসক্লাবে কাগজপত্র বের করে অমিত জানিয়েছিলেন, কৃষি থেকে উৎপাদন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়ানো সত্ত্বেও পিছিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এমনকি কৃষিতেও অগ্রগতি নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আছে সেখানে কৃষকদের অবস্থা ভালো। বাংলার কৃষকদেরও হাল ফিরবে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে। আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তার পাল্টা জবাব দিলেন মমতা। যে তথ্যের ভিত্তিতে তার সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো হয়েছে, সেই তথ্য দিয়েই তিনি নস্যাৎ করলেন সমস্ত অভিযোগ। মমতা বলেন, কৃষিতে বৃদ্ধির হার সারা ভারতে যখন ১ শতাংশ, তখন পশ্চিমবঙ্গে সেই হার ৬ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার ভারতে যখন ৭ শতাংশ, তখন বাংলায় ১০ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, তাহলে কে এগিয়ে? তিনি বলেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন না। উল্টাপাল্টা দাবিও করেন না। তথ্যের ভিত্তিতে কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে বাংলা পিছিয়ে আছে, তাহলে তিনি তার কান কেটে ফেলতেও রাজি। তার প্রশ্ন, বাংলা যদি কৃষিতে পিছিয়েই থাকবে, তাহলে ২০১১ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর খোদ ভারত সরকার বাংলাকে কৃষি সম্মান দিল কী করে? কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ বারবারই এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারই যৌক্তিকতা উড়িয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ। বোঝাতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্রের সদিচ্ছা থাকলেও বাংলা এগোতে পারছে না তৃণমূল সরকারের জন্যই। বাম জমানায় অবনতি তো হয়েছিল, এখন আরও হচ্ছে। বাংলার অরাজকতার পরিবেশ, এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বাংলার ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণের বোঝা নিয়েও খোঁচা দিয়েছিলেন। মমতার পাল্টা প্রশ্ন, এই ঋণ করা হয়েছিল বাম জমানায়। কেন্দ্র তার অনুমোদন দিয়েছিল কেন? সেই ঋণের টাকা শোধ করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। ঋণ শোধ করেও বাংলার উন্নয়ন করে চলেছেন তিনি। শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল দেয়া থেকে শুরু করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা তুলে ধরে তার প্রশ্ন, আর কোন রাজ্যে তা দেয়া হয়? কেন উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলো বাঁচিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা করা হল না। কেন টি-বোর্ডকে কলকাতা থেকে সরিয়ে অাসামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার দাবি, অাসামে যদি আর একটি টি-বোর্ড করা হত তাতে তার আপত্তি থাকত না। কিন্তু বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন? বাংলা কি ছাগলের তৃতীয় ছানা? পাশাপাশি গুজরাটে শিশুর অপুষ্টির খোঁচা দিয়ে তার দাবি, কোন রাজ্যে কী উন্নয়ন হচ্ছে তার তুল্যমূল্য আলোচনা করলেই বোঝা যাবে, বাংলায় কী উন্নয়ন হচ্ছে। তার সরকার কাজে বিশ্বাস করে জানিয়ে মমতা বলেন, বাংলার উন্নয়নকে হিংসা করে বিজেপি। তাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর/১০:১৪/২৬ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2pA0Bh0
April 27, 2017 at 04:59AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top