সিডনি, ১৯ এপ্রিল- বাংলা নববর্ষ বরণ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পায়ে-পায়ে পথ চলতে চলতে শেষ হয়ে গেল ১৪২৩ বাংলা বছর। চলে এল ১৪২৪। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিপ্রবাসী বাঙালিরাও ভেদাভেদ ভুলে উৎসবের রঙে বরণ করে নিয়েছেন ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে। সিডনি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা শামিল হয়েছিলেন প্রাণের বৈশাখী উৎসবে। গত ১৬ এপ্রিল রোববার সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনকের উদ্যোগে সিডনির ইঙ্গেলবার্নে পালিত হয় বৈশাখী উৎসব। লাল সাদা রঙের এক অপূর্ব সমাবেশ দেখে মনে হয়েছে যেন সিডনির বুকে একখণ্ড বাংলাদেশের নববর্ষের প্রাণঢালা আয়োজন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের কবিতা ও গান দিয়ে সাজানো ছিল কমিউনিটি হলের চার দেয়াল। অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রজন্মের শিশুদের বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের তার সঙ্গে পরিচিত করার জন্যই এই উৎসবের আয়োজন। বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল শুরুতেই নিয়ে আসে ছোট বন্ধুদের পরিবেশনা। তারা একে একে চমৎকার কিছু দলীয় সংগীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে। স্কুলের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছেন আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সাজ্জাদ আনাম চৌধুরী। বাদ্যযন্ত্রে সাহায্য করেন বিজয় সাহা। এর পরের পরিবেশনা ছিল সিডনির খুবই পরিচিত শিশুকিশোরদের দল কিশলয় কচিকাঁচার দল। বাহারি রং ও মন মাতানো পরিবেশনা অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে একটি উদ্দীপনা। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে ধরে রাখার জন্য শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই দলটি সিডনি জুড়ে তাদের দলীয় সংগীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছে গত এক দশক ধরে। কিশলয় কচিকাঁচার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রোকসানা বেগম। বাদ্যযন্ত্রে সাহায্য করেন আনন্দ, মিজানুর রহমান, সাকিনা আক্তার ও লোকমান হোসেন। লিভারপুল স্যাটারডে কমিউনিটি বাংলা হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিবেশন করে দলীয় সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, একক সংগীত, বাংলার সংস্কৃতি (পালকি, মঙ্গল প্রদীপ, লুঙ্গি, গামছা, ধুতি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি, গ্রাম্য বধূ ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য) নিয়ে নৃত্য ও বৃন্দ আবৃত্তি। বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা ছিল খুবই আকর্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। বাংলা স্কুলের পরিবেশনায় বাদ্যযন্ত্র ও যান্ত্রিক সহায়তায় ছিলেন সীমা আহমেদ, সাকিনা আক্তার, লোকমান হোসেন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন নুসরাত হুদা। সংগীত পরিচালনায় সীমা আহমেদ। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রুমানা সিদ্দিকী। দ্বিতীয় পর্বে ছিল বড়দের পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন সিডনির সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সিরাজুস সালেকিন। যিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকগীতি শিল্পী প্রয়াত আবদুল লতিফের ছেলে। তিনি তার দল নিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই স্বনামধন্য শিল্পী হাবিব খান ও তৃপ্তি খান। দর্শক-শ্রোতারা তাদের গানগুলো মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে একক আবৃত্তি পরিবেশনা করেন শাহিন শাহনেওয়াজ ও রুমানা সিদ্দিকী। সংগীত পরিবেশন করেন মাসুদ হোসেন মিথুন ও সীমা আহমেদ। সবশেষে সমবেত কণ্ঠে এসো হয়ে বৈশাখ এসো এসো ও জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাক্তন ফেডারেল এমপি লরি ফারগাসন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অনুলাক চান্টিভং এমপি। তারা দুজনই তাদের বক্তব্যে আয়োজকদের প্রশংসা করেন বাংলা স্কুল, বাংলা ভাষা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অস্ট্রেলিয়ার বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের নিয়ে কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য। উল্লেখ্য, সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক প্রতি বছর চারটি ইভেন্ট নিয়ে কাজ করে। সেগুলো হলো পয়লা বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ক্যাম্বেলটাউন এলাকায় শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য সংগঠনটি স্থানীয় স্টেট এমপি আনুলক চান্টিভং ও মেয়রের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আনুলাক চান্টিভং তার বক্তৃতায় তা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও ছাপা পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের পোশাক ও এর ডিজাইনে ছিলেন বিলকিস খানম। পালকি সজ্জাতে ছিলেন মুসফিকার রহমান ইলা। খাবার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আশফাকুর রহমান, ইয়াকুব আলী। তাদের সহযোগিতা করে ছুট বন্ধু ঈশান। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মাসুদ হোসেন মিথুন, সাজ্জাদ আনাম চৌধুরী ও সৈয়দ হাসানউদ্দিন মাহাদী। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়াতে ছিলেন ঐহিক তারিক। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন নাজমুল খান এবং পরিচালনায় সেলিমা বেগম। আর/০৭:১৪/১৯ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2oqRbzp
April 19, 2017 at 01:21PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন