ঢাকা, ১৭ এপ্রিল- কাঁধে বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে কেঁদেছিলেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে স্বর্ণ এনে দিয়ে সব কষ্ট, আক্ষেপ আর সংগ্রাম যেন অশ্রু হয়ে নেমেছিলো। তাতে বদলায়নি গরীব বাবার সংসার। কিন্তু নতুন ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দিয়ে আক্ষেপের কিছুটা ঘোচালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সীমান্ত স্বপ্নেও এমনটা ভাবেননি। শেষপর্যন্ত পরিবারকে কিছু দিতে পেরেছেন, লক্ষ্য এবার দেশকে দেওয়া। রোববার এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে যারা দেশের হয়ে গেল ছয় মাসে বিশেষ অবদান রেখেছে তাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বর্ণজয়ী তিনজনকে, শুটার শাকিল আহমেদ, সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ও ভারোত্তলক মাবিয়া আক্তার সীমান্তকে দিয়েছেন নতুন ফ্ল্যাট। এমন প্রাপ্তিতে দারুণ উচ্ছ্বাসিত সীমান্ত বলেন, আমার স্বপ্নেও এমনটা ছিলো না। চেয়েছিলাম খেলোয়াড় হবো। কিন্তু সেই জায়গা থেকে দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেওয়া, তার প্রাপ্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন পুরস্কার পাওয়ার কথা কখনই চিন্তা করিনি। পারিবারিক অবস্থার দিক থেকে দরিদ্র মাবিয়া। বাবার মুদি দোকান আছে। মূলত, মায়ের ইচ্ছাতেই এই খেলাতে আসা তার। ১৭ বছর বয়সী এই নারী মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এশিয়ান গেমসের ২০১৬ আসরে ৬৩ কেজি বিভাগে পুরস্কার স্বর্ণ জেতেন তিনি। একই আসরে দুটি রৌপ্যপদকও জিতে নেন মাবিয়া। শুরু থেকেই পরিবারের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিলো মাবিয়ার। বাবা-মা, ভাই-বোনের সংসারে শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও দিতে পেরেছেন, এতেই খুশি তিনি। এবার লক্ষ্য শুধুই দেশকে কিছু দেওয়ার। বললেন, আগে অনেক দুশ্চিন্তা ছিলো। পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে, উপরে উঠতে হবে। এখন পরিবার সেটেলড। তাদের জন্য আমার উপর যে দায়ভারটা ছিলো তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি। এবার দেশের দায়টা নিতে চাই। দেশ আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটা পূর্ণ করতে চাই। প্রধামনন্ত্রীর দেওয়া এমন উপহার নিজের পারফরম্যান্সকে অনুপ্রাণিত করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এই মুহূর্তে যে অবস্থানে আছেন, সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা দরকার তাই করতে চান। বললেন, আমি সবসময়ই পারফরম্যান্সকে বর্তমান অবস্থা থেকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। সেভাবেই এগোচ্ছি। মে মাসের ১০ তারিখে ট্যুর আছে, সেখানে গিয়েও ভালো কিছু করতে চাই। ক্যারিয়ারটা সহজ ছিলো না মাবিয়ার জন্য। অর্থের অভাবে পড়াশোনাটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ভারোত্তলনের শুরুটা করেছিলেন মা শাহাদত কাজীর হাত ধরে ২০১০ সালে। এরপর ২০১২ সালে দক্ষিণ এশীয় ভারোত্তলন প্রতিযোগিতায় জিতে নেন ব্রোঞ্জ পদক। পরের বছর, ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ ভারোত্তলন প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক জয় করেন। ২০১৬ এর ২০১৬ সালের গল্পটা সবার জানা।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2oFkS32
April 17, 2017 at 10:42PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top