বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-বালাগঞ্জবাসী হাওরের মাছ খেতে অনিহা

78451-2

মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ (সিলেট ) থেকে :: সিলেটের বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে গত এক সপ্তাহ ধরে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড় মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠেছে। চৈত্রের শেষ দিকে অতি বৃষ্টিতে অকাল বন্যায় হাওরগুলোর কাঁচা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে হাওরগুলোতে পানি কমতে শুরু করলেও পানিতে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে।

পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান পচে বাতাসে এক ধরনের বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। ধান এবং মাছ পচা গন্ধ যেন আরো প্রকট হচ্ছে। মানুষের মধ্যে পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিষাক্ত পানি শরীরে লাগলেই চুলকানি শুরু হয়ে যায়। ফসলহানির পর এবার মাছে মোড়ক দেখে মৎসজীবীরা চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।

পানি বিশুদ্ধ করার জন্য বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বুধবার উপজেলার বিভিন্ন হাওরে চুন ছিটানো হয়। পানিতে ভেসে উঠা ওই সবমাছ না খাওয়ার ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়। সিলেটের বিভিন্ন হাওরে মড়ক শুরু হওয়ার পর হাওরের মাছ খেতে অনিহা এলাকাবাসী। এতে ওই তিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে মাছের ক্রেতা অনেকা শুণ্য হয়ে পড়েছে। ফলে মাছ ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। কমেছে সরবরাহও।

তবে গত কয়েকদিন ধরে ফিসারি মাছ-বয়লার মুরগী ও সুটকি চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রজাতির মাছের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ক্রেতারাও মাছ কিনতে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না। হাওরে ধান পচে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মৃত মাছ খাওয়ার আগ্রহও কমেছে। বিভিন্ন খাবার হোটেলের মালিকরাও হাওরে মাছের বিপরীতে ফিসারীর মাছ ক্রয় করছেন।

ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, গ্রীষ্মের শুরুতে এমনিতেই মাছের সরবরাহ থাকে কম। এর মধ্যে মড়ক শুরু হওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারাও মাছ কেনার প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মৎস্যজীবিরা বর্তমানে হাওরের মাছের পরিবর্তনে ফিসারির মাছ নিয়ে হাট-বাজারে আসছেন।

কিন্তু চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বিশ্বনাথ,বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় বেশ কয়েকটি হাওর রয়েছে। চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ডুবে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। এতে হাওরে ধান পচে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মারা যাচ্ছে মাছ।

হাওরের মাছ ও জলজ প্রাণীর মারা যাচ্ছে। এতে হাওরের বিরাট মৎস্য ভান্ডার পড়েছে ঝুঁকির মুখে। স্থানীয় নদীতেও বিভিন্ন জাতের মাছ মরে ভেসে যেতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাছের মড়কের বিষয়টি প্রকাশের পর আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ক্রেতারাও। বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্রেতারা। মাছে মড়কের কারণে বাজারে চলছে মাছের সংকট।

বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলায় এবার সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছিল। যার শতভাগই পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু উপজেলা কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে ১১ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্বনাথ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৭হাজার ৬শত হেক্টর বোরো ধান চাষ হয়েছে। এতে ৬৫৪৩ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়।

গত শনিবার বিকেলে বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে আগের মতো মাছ ওঠেনি। দেশীয় জাতের মাছ একেবারেই নেই বললেই চলে। বাজারের বেশিরভাগ মৎস্যজীবি ফিসারির মাছ নিয়ে আসতে দেখা যায়। তবে এসব মাছের দামও চড়াও। অনেকে বাধ্য হয়েও ক্রয় করছেন মাছ।

মাছ বিক্রতা কবির মিয়া বলেন, মাছ মরার খবরে বাজারে প্রভাব পড়েছে। ফলে হাওরের মাছের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। আগে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হতো। এখন কমেছে। বাজারে মরা বা পচা মাছ উঠছে না, কিন্তু মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। দু’দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় মাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ কমে আসছে।

উপজেলার বিশ্বনাথেরগাঁও গ্রামের সালাম মুন্না বলেন, মাছ খেলে সমস্যা হতে পারে সেজন্য মাছই ক্রয় করিনি। গত কয়েকদিন ধরে বয়লার মুরগী ও সুটকি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী বলেন, বিশ্বনাথের সব চেয়ে বড় হাওর চাউরধনী হাওর। হাওরে রোপনকৃত বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এবারে কৃষকের ঘরে নেই ফসল। পরবর্তীতে কৃষকদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবম্বল ছিল হাওরের মাছ। এবার মাছও মরে যাচ্ছে। তার ওপর কালবৈখাশী ঝড়। সবকিছু মিলে হাওরবাসীর মহাসংকটে পড়েছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বণিক বলেন, পানিতে ফসল পচে যাওয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হওয়ায় মাছগুলো গ্যাসের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। গুরাপুর হাওরে ২০ হাজার টাকার চুন ছিটানো হয়েছে।

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, রোগজীবাণু থেকে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে প্রশাসনের উদ্যোগে নদ-নদী, জলায়শ ও হাওরের বিলগুলো রক্ষা করতে চুন ছিটানো হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেছেন, বন্যার পানিতে ভেসে উঠা এসব মাছ না খাওয়ার ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2omNwaS

April 24, 2017 at 05:44PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top