নিজস্ব প্রতিবেদক ● বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। আমাদের ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ পরিচয়টা এমনিতেই হয়নি। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই জনপদে ধোঁয়াওঠা, সৌরভ ছড়ানো গরম ভাত এবং মাছ ছিলো খাদ্য তালিকার শীর্ষে। আর দু’দিন পরেই পহেলা বৈশাখ।
আগে না থাকলেও পহেলা বৈশাখে একালে বাঙালির পাতে যুক্ত হয়েছে ইলিশ। এখন শহরাঞ্চলে নতুন কাপড়চোপড় পরে সবাই মেতে ওঠে পান্তা ইলিশ খাওয়ায়।
এই পান্তা-ইলিশের আয়োজন করার জন্য চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে কুমিল্লা শহরের নাম করা হোটেল কর্তৃপক্ষ ও মাছবিক্রেতারা বরফ দিয়ে এবং ফ্রিজে মজুদ করে রেখেছেন ইলিশ মাছ।পাশাপাশি রয়েছে রুই, কাতলা, বোয়ালসহ নানা দেশীয় মাছও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে পহেলা বৈশাখে আজকাল নতুন আইটেম ইলিশের যেন বিকল্প নেই।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতি বছর ইলিশের মূল্য বেড়ে যায়। অস্বাভাবিক মূল্য থেকে রেহাই পেতে শহরবাসী থেকে শুরু করে খাবারের হোটেলগুলো আগে-ভাগে বড় সাইজের ইলিশ সংগ্রহ করা শুরু করে।
হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে বড় সাইজের ইলিশ সংগ্রহ করে তা ফ্রিজে জমা করে রেখে দিয়েছেন। পহেলা বৈশাখের দিন পান্তা ভাতের সঙ্গে ঐ ইলিশ মাছ বিক্রি করবেন। একইভাবে ইলিশ মাছব্যবসায়ীরাও অধিক লাভের আশায় বরফ দিয়ে মাছ মজুদ করেছেন। পহেলা বৈশাখের এক-দু’দিন আগে ও পহেলা বৈশাখের দিন তা অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করবেন। ধনাঢ্য পরিবারগুলো থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো—সবাই পান্তা ইলিশ খাওয়ার জন্য মাছ সংগ্রহ করে ফ্রিজে রেখেছেন।
ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ৫শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি প্রতি ৯৮০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১২শ/১৩শ টাকা এবং দেড় কেজি থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজি প্রতি ১৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ ইলিশ ৭২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা শহরের চকবাজার, রাজগঞ্জ বাজার, রাণীর বাজার ও নিউমার্কেটের মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম। রাজগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাজারে এখন ইলিশের প্রচুর চাহিদা।তারা যে মাছ কিনে আনেন তা সকাল ৯/১০টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। শহরের বিভিন্ন বাজারের মাছব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা চাদঁপুরের ইলিশ বিক্রি করছেন।
কিন্তু সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। সূত্রমতে, তারা যে মাছ বিক্রি করছেন তা নোয়াখালি থেকে আনা হয়। চাদঁপুরের ইলিশ বলে দাবি করে মাছ ব্যবসায়ীরা আকাশছোঁয়া লাভে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নোয়াখালির ইলিশ।
এদিকে অনেকে আবার ইলিশ মাছ কিনতে না পেরে রুই, কাতলা এবং বোয়াল মাছ কিনছেন।
রায়হান নামের এক চাকরিজীবী সোমবার চকবাজারে মাছ কিনতে এসে বলেন, ইলিশ মাছের যে চড়া দাম, তাতে হাতই দেয়া যাচ্ছে না। তাই কাতলা মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছি।এখন এটাও যদি না কিনি, পরে পহেলা বৈশাখের দিন দেখা যাবে ইলিশ তো দূরের কথা,কাতলা-রুই-বোয়ালের দামও আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।
ইলিশের বাজারে দামের উত্তাপ ছড়ালেও থেমে নেই কুমিল্লাবাসীর পান্তা-ইলিশের আয়োজন। যে যার সার্মথ্যমতো চেষ্টা করছে, পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশের রেসিপিটি সংযোজন করতে।
from ComillarBarta.com http://ift.tt/2p5PADD
April 12, 2017 at 08:08PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন