কলকাতা, ২১ এপ্রিল- নারদকাণ্ড ও রাম-রাজনীতি নিয়ে জেরবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চ থেকে কী বলেন, তার দিকেই ছিল সবার চোখ। নারদকাণ্ডে হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশে দেওয়ার পরে রাজ্য সরকারই আগ বাড়িয়ে অভিযুক্ত নেতাদের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনায় মুখ পুড়েছিল মমতারই। এ বার সেই মামলায় তৃণমূলের ১২ নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর করায়, চাপে পড়েছেন তৃণমূলনেত্রী। দলের নেতাদের পাশে তিনি পুরোপুরি থাকবেন কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল দলের মধ্যেই। দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চে বক্তৃতা করার সময়েই মমতা হঠাৎ নারদ অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে দেন। অভিযুক্ত নেতারাও দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদেরকে অভয় দেন মমতা। বলে দেন কেউ ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। আসলে শুক্রবার মমতার বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই ছিল জেল-রাম-গ্রামের কথা। সংগঠনে রদবদলের কোনও ঘোষণা না করে, এ দিন তিনি কর্মীদের জন্য যে তিনটি প্রধান বার্তা দিলেন: নারদ-সিবিয়আই-জেল নারদকাণ্ড নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার চেষ্টা করলেন দলনেত্রী। কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য তিনি দলের নেতাদের আরও সাহসী হওয়ার পরামর্শ দেন। চিটফান্ড-কাণ্ডে জেলে গেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রসঙ্গ টেনেই মমতা বলেন, সুদীপদাকে অন্যায় ভাবে জেলে ভরেছে। দেখবেন যখন বেরোবেন তখন বীরের মতো বেরোবেন। অন্য নেতাদেরও যে গ্রেফতারির আশঙ্কা রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে মমতার কথাতেই। তিনি বলেন, যতই জেল বানাও। সব মন্ত্রীদের জেলে ভরো। কত বড় জেল বানাবে? যতই জেল বানাও এক দিন জেলের খেল খতম হয়ে যাবে। কিন্তু কর্মীদের উদ্দেশ্য তাঁর বার্তা, ভয় পাবেন না। কেউ এই সব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। মাথা উঁচু করে চলুন। তৃণমূলকে যত আঘাত করবে, তৃণমূল তত প্রত্যাঘাত করবে। বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, ক্ষমতায় আছে বলে এসব করবে? ভারতের রাজনীতিকে নষ্ট করছে। কোথা থেকে ওদের নির্বাচনী প্রচারের টাকা আসছে? আকাশ থেকে তো পড়ছে না! সিবিআই-কে নেংটি ইঁদুর বলে অভিহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, এ সিবিআই সেই সিবিআই নয়। এটা যেন ওদের ঘরের পোষা ইঁদুর। গুজুবাবুদের সিবিআই। রাম-রাজনীতি মমতার ভাষণে বারবার উঠে এসেছে হিন্দুত্ব ও রামের কথা। এই কদিন ধরে তাঁকে বারবার নিজের হিন্দুত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হচ্ছে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে মমতা বারবার বিজেপি-র হিন্দুত্বের রাজনীতিকে আক্রমণ করেন। মমতা বলেন, আমি আমার ধর্মের জন্য গর্বিত। আমি সব ধর্মের জন্য গর্বিত। এই প্রসঙ্গে বিবেকান্দ-রামকৃষ্ণের কথা টেনে, বিজেপি-র ধর্মের রাজনীতির সমালোচনা করেন তিনি। কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতার বার্তা সতর্ক থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে আক্রমণ হচ্ছে, তাঁর নামে যে মিথ্যে প্রচার হচ্ছে তার মোকাবিলার জন্যও তিনি দলের নেতা-কর্মীদের বার্তা দেন। দলের মধ্যে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তাঁদেরও এই আক্রমণের মোকাবিলা করতে নির্দেশ দেন মমতা। বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করছে অভিযোগ করে মমতা বলেন, আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ব। দেশকে এক রাখতে লড়ব। ওরা ঠিক করে দেবে আমরা কী খাব, কী পড়ব? পঞ্চায়েত-নির্বাচন সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনই মমতার সামনে সবচেযে বড় পরীক্ষা। বিজেপি-র হাওয়া ঠেকাতে পঞ্চায়েতে আধিপত্য ধরে রাখা মমতার পক্ষে খুব জরুরি। তাই কর্মীদের মমতা সরাসরি বলে দেন, যতই আক্রমণ আসুক, বুথে যান। ব্লকে যান। নেতাদেরও নিচু স্তরে গিয়ে কাজ করার পরামর্শ আগেই দিয়েছিলেন তিনি। এ দিন ফের সেই পরামর্শ দেন। তবে এর সঙ্গে মমতা লোকসভা নির্বাচনকেও পাখির চোখ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মমতার কথায়, তৃণমূলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, আগামী দুবছর চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপি-কে না সরানো পর্যন্ত ঘুম নেই আমাদের। যতই অত্যাচার হোক, চক্রান্ত করলেও একসঙ্গে লড়ব। বিজেপি-কে শূন্য করে দেওয়ার আহ্বান জানান মমতা। আর/১৭:১৪/২১ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2obmrY3
April 21, 2017 at 11:24PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top