কুমিল্লা বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয়ের কারন ‘ফেসবুক’

নিজস্ব প্রতিবেদক ● কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ঘটনা ঘটেছে ফেসবুকের কারনে। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। বিষয়টিকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না অভিভাবক এবং শিক্ষকরাও। তাদের মতে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তির কারনে তারা দিন দিন পাঠ্যপুস্তক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিকভাবে খারাপ করেছে গণিত ও ইংরেজিতে। ৬টি জেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার পাশের হার ৫৯.০৩। যা গত ৫ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন এবং গেলবারের তুলনায় ২৪.৯৭ ভাগ কম।

ফলাফল প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে ফেসবুকে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এর কারন হিসেবে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক আসক্তিকেই দায়ী করেছেন তারা।

এদিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম ফলাফল প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো অঙ্ক ও ইংরেজি ভীতি দূর হয়নি। এবার প্রায় ৩৫ ভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে গণিতে, আর প্রায় ৩০ ভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে ইংরেজিতে। বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এই দুই বিষয়ে ফেল করার কারণেই আমাদের গড় ফলাফল পড়ে গেছে। তার ওপর এবার আমরা প্রথমবারের মতো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো পরীক্ষক আর প্রধান পরীক্ষকদের কঠোর মনিটরিংয়ে রেখেছিলাম। এটাও ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে।’

ফলাফলের এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণের উপায় কী জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘যেসব স্কুল গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ করেছে, তাদের নোটিশ দিতে বলেছেন চেয়ারম্যান মহোদয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের আমরা ডেকে কথা বলব। তাদের উত্তর আশাব্যঞ্জক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে এমন হচ্ছে। পাসের হার হ্রাসের পেছনে এটাও আরেকটি কারণ।

কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন প্রধান শিক্ষকের (যারা মূলত নবম-দশম শ্রেণির গণিত বিষয়ে ক্লাস নেন) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত ভিজিলেন্স টিম, সেই সঙ্গে এ বছর থেকে প্রথমে ৩০ নম্বরে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ ও পরে সাবজেক্টিভ প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভারসাম্যহীন করে তোলে।

কুমিল্লা জেলার স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন ইংরেজি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। ইংরেজি গ্রামার চর্চা না করার কারণে তারা রচনা, প্যারাগ্রাফ, আবেদনপত্রসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে শব্দ গঠনজনিত ভুল করেছে। এ ছাড়া উত্তরপত্রে মুখস্থ কিংবা বানানো উত্তর দেয়ার প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়।

এমন বিপর্যয় ঠেকাতে শিক্ষকরা জানান, প্রশ্নপত্রের কাঠামো, নম্বর বণ্টন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্খী-অভিভাবকদের সেতুবন্ধ তৈরি করতে হবে। অন্যথায় ফল বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব নয়।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে অতিরিক্ত আসক্তও ফলাফল বিপর্যয়ের কারন বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।

এবার কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ জন। যা গতবার ছিল ৬ হাজার ৯৫৪ জন। অর্থাৎ গেল বারের তুলনায় এবার জিপিএ ৫ কম পেয়েছে ২ হাজার ৫০৪ জন।

শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এবার কুমিল্লা বোর্ডে গত ৫ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন। এমন কি গতবার যেখানে শতভাগ পাস করা কুমিল্লা বোর্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১১৯টি। আর এবার শতভাগ পাস করেছে মাত্র ১৪টি প্রতিষ্ঠান।

এবার শুধু মাত্র একটি ক্ষেত্রে এগিয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। আর তা হল গেলবার একজনও পাস করেনি এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৩টি এবার তা ১টি কমে হয়েছে ২টি।

The post কুমিল্লা বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয়ের কারন ‘ফেসবুক’ appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2pcnwLx

May 04, 2017 at 07:23PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top