ঢাকা::আমাদের স্বাধীনতার ৪৬তম বছর চলছে। এতটি বছরে আমাদের মাতৃভূমি যতটুকু উন্নতি বা দেশবাসী যতটুকু প্রত্যাশা করেছিলেন, তা হয়নি। একটি গোষ্ঠী তা হতে দেয়নি এবং তারা বাধা দিয়েছে প্রত্যাশিত উন্নয়নের পথে। এরা হলো- দুর্নীতিবাজেরা! যারা জনসাধারণের অর্থসম্পদ চুরি করে, যারা কালোবাজারি এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসা করে, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, যারা রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদ অবৈধ পথে দখল করে এবং ঘুষ খায় তারা দুর্নীতিবাজ। এরা দেশের সাধারণ মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে খাচ্ছে এবং ব্যক্তিগত সহায়সম্পত্তি, অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ছে। এরা দেশবাসীর চরম শত্রু। রাষ্ট্র এদের রুখতে পারেনি। বরং এরা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পেয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে আসছে। সরকার যদি এদের রুখতে না পারে বা বিচারের ব্যবস্থা না করতে পারে, তাহলে জনগণই কি এদের বিচারের ভার নেবে?
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল- মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ প্রজাতন্ত্রের বিশেষ বিশেষ কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের অর্থসম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে, কিন্তু জাতির বড়ই দুর্ভাগ্য, মন্ত্রী পরিষদের কেউ বা এমপিদের কেউই তাদের অর্থ সম্পদের হিসাব দেননি। যতদূর জানা যায়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ২০১১ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অর্থসম্পদের হিসাব বিবরণী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়ার ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রীদের আয় ও অর্থসম্পদের বিবরণীসহ ১৭টি তথ্য দিতে বলা হয়। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে আয়, গৃহ-সম্পত্তির আয়ের অর্থ, ব্যবসার পুঁজি ও মূলধনের জের, অকৃষি জমি ও অর্জিত মোট তহবিল ইত্যাদি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাদের অর্থ ও সম্পদ বিবরণী জনসমক্ষে কিংবা ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত ছিল। প্রজ্ঞাপন অনুসারে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন অথবা তুলনীয় মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, যারা সরকার অথবা প্রজাতন্ত্রের কাজে নিযুক্ত, তারা প্রতি বছর আয়কর জমা দেয়ার এক মাসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আয় ও অর্থ-সম্পদের বিবরণী জমা দেয়ার কথা। স্থির হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজ বিবেচনায় আয় ও অর্থসম্পদের বিবরণী প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০১১ সালের মার্চে জারি করা এই প্রজ্ঞাপন বহাল আছে এবং পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের একাধিকবার নির্দেশ দেয়ার পরও বেশির ভাগ মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আয় বা অর্থ-সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেননি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে মন্ত্রিসভার ২৫ জন সদস্য তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেন বলে জানা যায়। অন্যরা তাদের অর্থ ও সম্পদের বিবরণী জমা দেননি।
সংসদ সদস্যদের অর্থ ও সম্পদ বিবরণী স্পিকারের কাছে জমা দেয়ার জন্য বলা হলেও তাতে কেউ সাড়া দেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের অর্থসম্পদ এবং আয়ের উৎস প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করার। ওই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের অর্থসম্পদ, আয়রোজগার সম্পর্কে সর্বস্তরের নাগরিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বড়ই লজ্জাকর বিষয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আবার সরকার গঠনের পর মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সমপর্যায়ের পদস্থ ব্যক্তিরা গত তিন বছরেও অর্থসম্পদের হিসাব দেননি। সরকারের এ মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং সমমর্যাদার ব্যক্তিদের অর্থ-সম্পদের হিসাব দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তাগিদও নেই। এর ফলে কেউই অর্থসম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেননি। অথচ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতিই হচ্ছে- অর্থসম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়া। সাবেক এবং বর্তমান এমপি, মন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীসহ ক্ষমতাশালীদের অর্থসম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
দুর্নীতি চলছে এবং এর সাথে যারা জড়িত তারা অপরাধী, দেশের শত্রু ও মানবতার শত্রু। যারা দুর্নীতিবাজ তারা যুদ্ধাপরাধীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ব্যক্তি। যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষতি করেছে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, কিন্তু দুর্নীতিবাজেরা ক্ষতি করে যাচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। দুর্নীতিবাজ যারাই হোক বা যে দলেরই হোক, তারা মা-মাটি-মানুষের শত্রু। তাই তাদের বিচার করতেই হবে এবং তা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে।
স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুর্নীতিবাজদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা জরুরি। আশা করছি, এ দাবির সমর্থনে সচেতন দেশবাসী এগিয়ে আসবেন।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2s0UVup
May 27, 2017 at 07:03PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন