ঢাকা::
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের বিক্রয় কেন্দ্রে দুদফা শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৮০ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার জব্দ করার পর স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে জোরেশোরে প্রশ্ন উঠছে।
শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, আপন জুয়েলার্স থেকে যেসব স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর পক্ষে মালিকপক্ষ বৈধ কোন কাগজ দেখাতে পারেনি।
বাংলাদেশে শহর ও গ্রামাঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ১০হাজারের মতো স্বর্ণের দোকান আছে। বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে বৈধপথে ব্যবসার জন্য কোন স্বর্ণ আমদানি হয়না । কিন্তু তারপরেও এত হাজার-হাজার দোকানে স্বর্ণের ব্যবসা কীভাবে চলছে?
বাংলাদেশের ভেতরে প্রতিবছর স্বর্ণের চাহিদা এবং জোগান কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে স্বর্ণব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার একটি আংশিক ধারণা পাওয়া যায়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি দেশের ভেতরে মানুষজন সেসব পুরনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করে সেগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে স্বর্ণের একটি বড় জোগান আসে। এছাড়া কোন বাংলাদেশী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম স্বর্ণ কোন শুল্ক ছাড়া দেশে আনতে পারে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহ-সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, “প্রতিদিন বাংলাদেশে ব্যাগেজ রুলের আওতায় চার থেকে পাঁচ হাজার ভরি স্বর্ণ আসে। সে স্বর্ণগুলি মানুষ প্রয়োজনে বিক্রি করছে। সেগুলো আমাদের দোকানে আসে।”
মি: খান দাবী করেন, প্রতিদিন বৈধভাবে যে পরিমাণ বাংলাদেশে আসছে সেটির চাহিদা নেই। সুতরাং অবৈধ-পথে স্বর্ণ আনার কোন প্রয়োজন নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু জুয়েলার্স সমিতির এ পরিসংখ্যানের নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে অর্থনীতিবিদদের। তারা মনে করেন ব্যাগেজ রুলে আওতায় আনা স্বর্ণের পরিমাণ আরো অনেক কম হতে পারে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির আইন এবং সেটির উপর আরোপিত শুল্ক বেশ কঠোর। সে কারণ সীমিত আকারে সুযোগ থাকলেও ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ আমদানিতে উৎসাহিত নয়।
তবে ব্যবসায়ীরা যাই দাবী করুক না কেন, বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজার যে বেশ অস্বচ্ছ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বর্ণ আমদানি না হলেও বড় শহরগুলোতে অভিজাত দোকান মার্কেটের দোকানগুলো কিভাবে চলছে, তাদের দোকানে সাজিয়ে রাখা স্বর্ণ কোথা থেকে আসছে সেটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।
পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করে বাজার টিকিয়ে রাখার যে কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন সেটিকে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য মনে করেন না অর্থনীতিবিদরা। বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে চোরাইপথে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা স্বর্ণ বিক্রি হয় বলে ধারণা করা হয়।
অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর মনে করেন, পুরোটা না হলেও, বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারে চোরাচালানের অস্তিত্বের বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। এছাড়া পুরনো স্বর্ণে ক্রয়-বিক্রয় এবং বিদেশ থেকে ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা স্বর্ণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মি: মনসুর বলেন, ” যেহেতু এসব স্বর্ণের সোর্সিং (উৎস) দেখানো মুশকিল, সেজন্য এ খাতটা সবসময় আতংকের মধ্যে থাকে। আমি মনে করি এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দার খুব বেশি বাড়াবাড়ি না করাই ভালো।”
তিনি মনে করেন স্বর্ণ আমদানি উদার করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাহলে এ ব্যবসায় যে ‘ধোঁয়াশা’ আছে সেটি দূর হবে। স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে কড়াকড়ি থাকায় পুরো বিষয়টি অবৈধ পথের দিকে ধাবিত হয়েছে।
“সরকার কিন্তু কোনদিন এক পয়সা রেভিনিউ পায়নি স্বর্ণ থেকে। তাহলে স্বর্ণের উপর কড়াকড়ি করার কী দরকার?” প্রশ্ন তোলেন মি: মনসুর।
স্বর্ণের বাজারে নিয়ে যে সমস্যা আছে সেটি স্বীকার করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি বিষয়টিকে কিভাবে সহজ করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মাহপরিচালক ড: মইনুল খান বলেন,”বৈধভাবে গোল্ড হয়তো সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা। কিছু বৈধ কারণ আছে। কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। সেগুলো আমরা আমলে নিচ্ছি।”
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qobWjX
May 16, 2017 at 09:08PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.