রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দুই জঙ্গির যোগাযোগের চেষ্টা

fঢাকা::নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আইইডি তৈরির রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করতেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি ইমরান ও তার সহযোগী রফিক। গ্রেপ্তারকৃত দুই জঙ্গি মায়ানমারের আরাকানের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

আজ সোমবার দুপুরে র‌্যাবের কাওরানবাজারের গণমাধ্যম শাখায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ১০ এপ্রিল র‌্যাব-১৪ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিযানে জেএমবির এক নারী সদস্য গ্রেপ্তার হয়। ওই জঙ্গি নারী সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির বিস্ফোরক সংগ্রহ ও সরবরাহের কিছু তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ মে রাত সোয়া ১০ টার সময়ে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ইমরান হোসেন এবং রফিকুল ইসলাম ওরফে জুনায়েদ রফিক গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দুই বোতল সালফিউরিক এসিড, বিভিন্ন ধরনের স্পিন্টার উপযোগী বল পাঁচ প্যাকেট এবং বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক তৈরির উপযোগী রাসায়নিক পদার্থ (সালফার সদৃশ্য পাউডার, পটাসিয়াম সদৃশ্য পাউডার, পটাসিয়াম ক্লোরেট সদৃশ্য পাউডার) এক কেজি ৬৫০ গ্রাম সহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে তারা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে জড়িত এবং উপরোক্ত বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সমূহ সংগঠনের চাহিদার ভিত্তিতে সংগ্রহ করেছিল কিন্তু সরবরাহ করার পূর্বেই গ্রেপ্তার হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ইমরান হোসেন মূলত বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রেতার নিকট থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এবং তার সহযোগী রফিক বিতরণকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নিকট থেকে কয়েকজন বিস্ফোরক বিক্রেতার তথ্যসহ তাদের দলের আরও কয়েকজন সংগ্রাহক ও বিতরণকারীদের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ইমরান হোসেন বিভিন্ন কেমিক্যাল নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে বলে জানায়। সে ২০০১ সালে জনৈক ফরিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হুজি(বি)তে যোগদান করে। সে হুজি(বি)র একজন সক্রিয় সদস্য ছিল। ২০০১ সালে বুড়িরচরে তার মতো ২০-২৫ জন যুবক বয়সীদের নিয়ে একটি প্রাথমিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

ময়মনসিংহের বুড়িরচরের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সে জানায়, শহিদুল্লাহ এবং রুম্মন নামে দুইজন প্রশিক্ষক তাদেরকে শারীরিক ও জঙ্গি মতাদর্শের উপরে প্রশিক্ষণ দিত। সে সংগঠনের জন্য নিয়মিত ইয়ানত সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ জেলার সংগঠনের কোষাদক্ষ জনৈক তারিক ওরফে আব্দুল্লাহর নিকট পাঠাত। অতপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে সে জেএমবির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে।

ইমরান হোসেন ২০১১ সাল থেকে জয়দেবপুরের কয়েকটি কেমিক্যাল নির্ভর শিল্প কারখানায় চাকুরী সুবাধে বৈধ কেমিক্যাল সংগ্রহ ও সরাবরাহ চেইন সম্পর্কীয় তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনের জন্য বিস্ফোরক তৈরিতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করত এবং বাহক কুরিয়ারের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক চট্টগ্রাম এলাকায় জঙ্গিদের নিকট পাঠাত। মূলত তার সরবরাহকৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদির মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষনার্থীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এ লক্ষ্যে সে ঢাকা থেকে কেমিক্যাল দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে রফিকের নিকট পাঠাত। রফিক ওই কেমিক্যাল গুলো চাহিদা মোতাবেক চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম ওরফে চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। রফিক এবং ইমরান একই সমসাময়িক সময় থেকে হুজি(বি)’তে অন্তর্ভূক্ত হয়। ওই সংগঠনে থাকাকালীন তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সে বোমা তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ইমরান কর্তৃক রফিক প্ররোচিত হয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে জেএমবির অনুসারী হয়ে পড়ে। সে প্রতিনিয়ত সংগ্রহকৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংগ্রহ পূর্বক চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রশিক্ষণ এলাকাতে পাঠাত। সে মূলত কুরিয়ার বা বাহকের কাজে নারী সদস্যদের ব্যবহার করত। তার দুইজন স্ত্রীও বর্ণিত কাজের সাথে সম্পৃক্ত বলে রফিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী জয়নাব বিবি আত্মগোপনে রয়েছে এবং দ্বিতীয় তহুরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে নিখোঁজ হয়ে রফিককে বিবাহ করার পর বাড়িতে ফেরত আসে এবং পরবর্তীতে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হয়।

এছাড়া বিস্ফোরক বাহক হিসেবে আরো কয়েকজন নারী জঙ্গি সদস্য সম্পর্কে রফিকুল তথ্য দিয়েছে।



from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qgYQWr

May 08, 2017 at 05:22PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top