মিশিগান, ২৬ মে- প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি শিক্ষার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলা গানের স্কুল। একুশ বছর আগে মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে বাংলাদেশি অধুস্যিত এলাকায় বাংলা স্কুল অফ মিউজিক নামের গানের স্কুলের যাত্রা শুরু। সময়ের আবর্তে অনেক চড়াই উতড়াই পেড়িয়ে আজ স্কুল বাংলাদেশীদের কাছে এক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। প্রবাসে বাংলার সব উৎসব এখানে বেশ ঘটা করে পালিত হয়। বাংলা স্কুল সকলের স্কুল, সব বয়সের জন্যে এ স্কুলের দরজা খোলা। প্রবাসে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য বাংলা শেখানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই অবস্থানে থেকে বাংলা গান ও গানের সব বাদ্যযন্ত্র শেখানোর কঠিন কাজ করে যাচ্ছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল আকরাম হোসাইন। নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষা ও শেখার ব্যাপক আগ্রহ আকরাম হোসাইনকে এ স্কুল প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ জুগিয়েছে বলে জানালেন।বাংলা সংস্কৃতি বিকাশে এ কাজ করে আসছেন তিনি তার ব্যাক্তিগত ভালোবাসার জায়গা থেকে। রবীন্দ্র, নজরুল গীতি লালনের গান, ভারতীয় ক্লাসিক, আধুনিক বাংলা ও ভারতীয় বাংলা গানের ছন্দ, তা্ লয় ও অন্ত্যমিল এ স্কুলের প্রধান বিষয়। এছাড়া প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চাদের জন্য বাংলা অক্ষরের সাথে পরিচয়, বাংলা ভাষা পড়া, লেখা, ও সঠিক ভাবে বাংলা বলতে পারার শিক্ষা দেয়া হয়। ছবি আঁকার মাধ্যমে গ্রাম বাংলার অপরূপ দৃশ পৌছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে এ গানের স্কুল। বাংলা টাউন খ্যাত হামট্রামাক শহরের উত্তর পার্শ্ব ও ডেট্রয়েট শহর সীমানা ঘেঁষে ডেভিসন ফ্রীওয়ের পাশে ছোট এক বাসায় এ স্কুল। স্কুল, বন্ধু টিভি সহ চারপাশে যেখানে ইংরেজি, তখন নিজের সন্তানকে শিকড় কে ধরে রাখতে, বাংলা ভাষার অভিজ্যাত বোঝাতে বাবা মা অনেকটা জোর করেই সন্তানকে এ গানের স্কুলে দিচ্ছেন বলে জানালেন গান ও গিটারের শিক্ষক এথেনা আকরাম। বাদ্যযন্ত্রের মাঝে হারমোনিয়াম, তবলা, হাওয়াই গিটার, স্প্যানিশ গিটার, পিয়ানো, ও কিবোর্ড শেখানো হয়। প্রথমে বাচ্চাদের অনেকটা জোর করে স্কুলে নিতে হলেও অল্প দিনেই এ স্কুল হয়ে উঠে বাচ্চাদের প্রিয় স্থান। নতুন নতুন বন্ধু, নাচে গানে বাংলা শেখা ও নিজেকে জানা ও বাংলা ভাষার মধুরতা সব কিছু মিলে ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা পড়ে এ স্কুলে। প্রিন্সিপাল আকরাম হোসাইন ৪৫ বছর থেকে গান গানের সব বাদ্যের সাথে তার সখ্য। ১৯৯২ সালে সহধর্মিণী ও মেয়ে সহ যুক্তরাষ্ট্রে ছয় মাসের জন্য বেড়াতে আসেন। সে সময় তার সহধর্মিণী মিশিগানে ফিজিক্যাল থেপারিস্ট হিসাবে চাকুরী পান। আমেরিকায় আসার আগে আকরাম হোসাইন দেশে বাংলাদেশ বেতারে সংগীত শিল্পী, কম্পোজার, ও সংগীত পরিচালনা করেন। বাদ্যযন্ত্রে তার দখল ছোটকাল থেকে। ১৭ বছর বয়েসে পাকিস্তানে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতায় গিটারে গোল্ড মেডেল জেতেন। তিনি সাধন সরকার, বিনয় রায়, আজিজ খানের মত ওস্তাদের সান্নিধ্যে সঙ্গীত জগতের হাতেখড়ি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনা রেডিওতে যোগদেন। যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করতে জীবন বাজি রেখে সংগীত প্রচারের কাজ করেন। যুদ্ধ জয়ের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খুলনায় সংগীত পরিচালক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে আকরাম হোসাইন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক করেন। এতে তিনি মাস খানেক প্যারালাইসিস আক্রান্ত হন। তবে তিনি বাংলা স্কুলের হাল ছাড়েননি। পাওয়ার হাউজ প্রডাকশনে অবাঙ্গালীদের সাথে কাজ করেন। বাংলাকে উপস্থাপনে সর্বদা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন। থিয়েটার গ্রুপ হিন্টারল্যান্ড এর সাথে মিলনায়ন শেয়ার করেন। এতে তার গানের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বড় পরিসরে পারফর্ম করার সুযোগ পায়। রাজ্যের যেকোন স্থান থেকে ডাক এলেই উনি তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন করেন, তৈরি করেন অনুষ্ঠানের জন্য। গানের স্কুলের যাত্রা আজ থেকে দুই দশক আগে ১৯৯৬ সালে বাংলা গানের স্কুলের যাত্রা শুরু। আকরাম হোসাইনের হাত ধরে এ স্কুলের পথ চলা। শুরু থেকেই প্রতি বছর বেশ কিছু অনুষ্ঠান করে থাকেন। প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবারে প্লে হাউজে (ভবনের নাম) মিলিত হন সকল সকল ছাত্রছাত্রীরা। গানের স্কুলে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা উৎসব, ভালবাসা ও বসন্ত উৎসব, মার্চে স্বাধীনতা উৎসব, এপ্রিলে বৈশাখ । এমনটি প্রতি মাসেই কোন না কোন উৎসবে গানের আয়োজন। বাংলাদেশ থেকে বড় কোন শিল্পী এলে তার আতিথিয়তা ছাড়া মিশিগান ছেড়েছেন এমনটি এখনো হয়নি। রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা থেকে এ যুগের বিউটি দাস সকলেই তার অতিথি। গানের স্কুলের হয়ে মিশিগানে গান করেছেন প্রথিতযসা সব শিল্পিগন। ফরিদ রহমান, তাজুল ইমাম, তপন মদক, ক্বাদরী কিবরিয়া, সৌমেন অধিকারি, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, রথিন্দ্র নাথ রায়, দুলাল ভৌমিক, ফেরদৌস আরা, রামা মণ্ডল সহ অনেকে। গান ও বাদ্যযন্ত্রের শিক্ষক হিসাবে এ গানের স্কুলে রয়েছেন প্রিন্সিপাল আকরাম হোসাইন নিজেই। রয়েছেন তার মেয়ে এথেনা আকরাম, শাম্মি আক্তার, নাজমুল আনোয়ার, লিজা, আক্তারুজ্জামান, আইরিন সুলতানা অ্যানি। গানের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎযাপনে রয়েছে শক্তিশালি এক কমিটি। প্রিন্সিপাল আকরামের নেতৃতে এ কমিটিতে রয়েছেন নাজমুল আনোয়ার, এথেনা আকরাম, জি এম আলী হায়দার, আহমাদুল হাসান রুশো, চিনু মৃধা, লিজা, উত্তম বড়ুয়া, শাম্মি আক্তার, সাঞ্জিব রায় চৌধুরী ও সুব্রত মোহান্তা। নাইট ফাউন্ডেশন পুরস্কার মিশিগানে বাংলা সংস্কৃতি চর্চা ও বিস্তারে কাজ করে যাওয়া বাংলা গানের স্কুল নাইট ফাউন্ডেশন পুরষ্কার লাভ করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা মুলত প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি হলেও আমেরিকারা বাংলা গানে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলা গান শিখতে, গানের সাথে গলা মেলাতে গানের স্কুল থেকে ২০১৫ সালে একটি বই প্রকাশ করে। নাজমুল আনোয়ারের সম্পাদনায় এ চন্দ্রতরু নামে বাংলা গান ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়। পাওয়ার হাউস প্রডাকশনের সহযোগিতায় এ বই ইংরেজি ফোনেটিকউচ্চারণএবংঅনুবাদপ্রকাশিতহয়। যা বাংলাদেশি আমেরিকান নতুন প্রজন্ম ও অবাঙ্গালীদের সহজবোধ। ২০১৫ সালে অলাভজনক এ গানের স্কুল ফাউন্ডেশন থেকে গ্রান্ট লাভ করেন, যা গানের স্কুলের উন্নয়নে ব্যায় করা হয়। বাংলা গানের স্কুলের দ্বিতীয় প্রকাশনা গীতিমালা যেকোন দিন বাজারে আসছে। বাংলা ও ইংরেজি ফোনেটিকউচ্চারণএবংঅনুবাদএ গানের বই সম্পাদনা করেছেন নাজমুল আনোয়ার। বাংলা স্কুল অব মিউজিকের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান জনাব আকরাম হোসেন ছিলেন সর্বাত্মক সহযোগিতায়। তার শিল্পী জীবনের সাফল্য উদযাপনের উপর একটি নিবন্ধ আছে এই বইতে। মিথুন চক্রবর্তী এবং অভ্র চট্টোপাধ্যায় বেশ কিছু কবিতার চমত্কার অনুবাদ করেছেন। লিজাবিল্বি ও জিনা রাইকার্ট ছিলেন এর প্রকাশনের সহযোগিতায়। বাংলা ও ইংরেজি ফোনেটিক উচ্চারনের পাশাপাশি বইয়ের ফ্রন্ট সাইজ এমন ভাবে নির্বাচন করা হয়েছে জাতে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনে এ বই রেফারেন্স হিসাবে কাজে আসবে। বাংলা স্কুলের সকলের বিশ্বাস এ বই নতুন প্রজন্মকে সহজ ভাষায় গান শেখায় উৎসাহ যোগাবে। আর/১০:১৪/২৬ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2r4zYyR
May 27, 2017 at 04:24AM
26 May 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top