দেশের প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয়ে সুন্দরী নারী তদবির পার্টির আনাগোনা আগের মতো নেই। সচিবালয়ের সামনে দর্শনার্থীদের অপেক্ষা কক্ষে তাদের তৎপরতাও খুব একটা চোখে পড়ে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বারান্দায় দামি পারফিউম মেখে ও দেহে রংচটা মেকাপ করে সচিবালয়ের করিডোরে পায়চারি করতে সুন্দরীদের খুব একটা দেখা যায় না। আগের মতো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার রুম থেকে নারীদের খিল খিল হাসি খুব একটা শোনা যায় না। তাদের দৃশ্যমান এসব উপস্থিতি না থাকলেও সুন্দরী তদবির পার্টি ভিন্ন কৌশলে তাদের কাজ আদায় করে নিচ্ছে। অনুসন্ধান জানা গেছে, সুন্দরী তদবির পার্টির পরিচিত বিভিন্ন পর্যায়ের আমলারা এখন ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা ইমোতে যোগাযোগ করে অজানা গন্তব্যে চলে যায়। বিনিময়ে ওই সব সুন্দরীদের এজেন্টরা দিনে সচিবালয়ে ঢুকে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এরপর সবকিছুর দফারফা হচ্ছে অফিস সময়ের মধ্যে বা আগে পরে। জরুরি কাজে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীরা সিনিয়র আমলাদের খোঁজ করলে বলা হয়, স্যার জরুরি মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেছেন। তখন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আর সিনিয়র আমলাদের খুব একটা খোঁজ খবর নেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তদবিরবাজ সুন্দরী তরুণীরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চোখে চোখে থাকেন। গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এসব সুন্দরীরা সচিবালয়ে প্রবেশে ইতস্তত বোধ করেন। অন্যদিকে সিনিয়র আমলারাও কোনো কিছুর সাক্ষী রাখতে চান না। ফলে সচিবালয়ে সুন্দরী তদবির পার্টি এখন ভিন্ন কৌশলে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। আমলারাও তাদের সুবিধা আদায় করে নিতে ভুলছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি ও গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারির পরও মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মরত গুটিকয়েক কর্মকর্তাদের হরহামেশা সুন্দরীদের নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিংয়ের নাম করে লাঞ্চ করেন। এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দপ্তরে গেলে তাদের কর্মচারীরা হেসে বলেন, স্যার জরুরি মিটিং করছেন। এখন কোনোমতেই ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সচিবালয়ে ৬নং ভবনে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী তদবিরবাজদের আনাগোনা চোখে পড়ে। এ ভবনের লিফটম্যানরা গুটিকয়েক সুন্দরীদের দেখেই হেসে বলেন, ম্যাডাম কোন ফ্লোরে যাবেন। লিফট ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি। সুন্দরীরা লিফটম্যানদের বলামাত্রই লিফট সরাসরি উপরে উঠিয়ে দেয়া হয়। লিফটম্যান সূত্রে জানা গেছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে সবচেয়ে বেশি নারী দর্শনার্থী যান। ওই কর্মকর্তা ১নং ভবনে অফিস করার সময়েও নারীদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপে মত্ত থাকতেন। বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টিতে এলে বারণ করা হলেও তিনি শোনেননি। প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, অফিসার্স ক্লাবে ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠানে নাচ, গান নিয়ে ন্যক্কারজনক কাণ্ড ঘটান ওই কর্মকর্তা। একই ভবনের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে তদবিরবাজ নারীদের আনাগোনা চোখে পড়ে। ওই তদবিরবাজ নারীরা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের রুমে প্রবেশ করে কাজ বাগিয়ে নেন। তদবিরবাজ নারীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের ১০-১৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তার নারীদের প্রতি আলাদা প্রীতি রয়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তাকে তারা ভাই বলে সম্বোধন করেন। সন্ধ্যার পর সচিবালয়ের বাইরে অন্য কোথাও একসঙ্গে আড্ডা দেন তারা। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সচিবালয়ে সবার প্রবেশের অধিকার রয়েছে। তবে তদবিরবাজদের প্রতি সবসময় আমাদের আলাদা দৃষ্টি থাকে। তবে বাইরে কেউ কিছু করলে আমরা আটকে রাখতে পারি না। (মানবজমিন)
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2qTQS4X
May 24, 2017 at 09:09AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন