শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গাজীপুরের শ্রীপুরে অসংখ্য শিল্পকারখানায় শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শিশু শ্রমের কারণে এদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় শিশুরা অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে। নামমাত্র বেতনে শিশু শ্রমিক পাওয়া যায় বিধায় কারখানার মালিকেরা শিশুদের কাজে নিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। শিশুদের মাসিক বেতনের টাকাও সঠিক সময়ে পরিশোধ করছে না কারখানার মালিকরা। অপরিপক্ব বয়সে কাজের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে তারা অপুষ্টির শিকার হয়েই বেড়ে উঠছে। কারখানা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। যে বয়সে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে থাকার কথা, সেই বয়সে ঘুরাতে হচ্ছে কারখানার চাকা। যাদের বয়স ৮ বছর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এমন একটি কারখানার সন্ধান মিললো গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতির বাজার এলাকায় গোদারচালা গ্রামে। কম বেতনে কাজ করানো যায় বিধায় এমন বয়সী শিশুদের দিয়ে চলছে পুরো একটি কারখানা, অথচ কারখানা কর্তৃপক্ষ শিশুশ্রমের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতির বাজার এলাকার গোদারচালা গ্রামের এ.আর.আই কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি প্যাকে কারখানা শিশু শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। কারখানায় ২৬ জনের মতো শিশু শ্রমিক দৈনিক দুই শিফটে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করছে। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে একারখানা। সংবাদকর্মী আসার খবরে কারখানার মূল ফটকে ১০-১২ জন বহিরাগত নিয়ে পাহারা বসিয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আলাল মিয়া। ওই প্রতিষ্ঠানে কাগজ থেকে সুতার কুন্ডলির জন্য কোনো উৎপাদন করা হয়। যেখানে রয়েছে বৈদুুতিক মোটর সমৃদ্ধ ভারি মেশিনপত্রাদি, ঝুঁকিপূর্ণ এসব মেশিনের স্টিয়ারিং রয়েছে শিশুদের হাতে। শিশুদের দিয়ে টানা ১০ ঘণ্টা করে কাজ করানো হয় বেতন দেওয়া হয় নামমাত্র ২০০০ টাকা। কারখানার শিশু শ্রমিক তামিম (১১) জানান, বছর খানেক আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে শ্রীপুর আসে। বাবা-মা পাশের অন্য কারখানায় চাকরি নেয়। সে মাসিক ২০০০ টাকা বেতনে কাজ নিয়েছে। ত্রিশালের এলংজানি গ্রামের আতাউর রহমানের ১২বছরের ছেলে মিনহাজ তিন হাজার টাকায় ওই কারখানায় কাজে আসে প্রায় বছর খানেক আগে। মিনহাজের মা তাসলিমা বেগম জানান, সংসারে অভাবের তাড়নায় তাকে কাজে দিলেও কোন উপকারে আসছে না। কারখানার মালিক সঠিক সময়ে বেতন না দেয়ায় সংসারে অভাব লেগেই রয়েছে। কারখানার শিশু শ্রমিক দুই সহোদয় মোমিন (১৩) ও শাকিল (১১) বাবা দুলাল হোসেন স্থানীয় ডিবিএল কারখানার শ্রমিক, মা গৃহিনী। এসময় স্থানীয় ছাতিরবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও এ.আর.আই কটেজ কারখানা মালিকের অনুরোধে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবা-মা তাদের মাসিক ২হাজার ৫শত টাকায় কারখানায় চাকুরীতে বাধ্য করছেন। পড়ালেখা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। তাকেও সঠিক সময়ে বেতন দেয়া হয়। প্রতিবাদ করলে কারখানার মালিকের ছেলে আল-আমিন মারধরের ভয় দেখায়। শ্রীপুর উপজেলার সাইটালিয়া গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে সোহাগ (১৪) উক্ত কারখানায় শ্রমিক। মাসিক তিন হাজার টাকায় প্রায় ৯মাস যাবত কাজ করেছে কোন ফিনিশিং অপারেটর পদে কাজ করছে উক্ত কারখানায়। এব্যাপারে সোহাগের বাবা কফিল উদ্দিন জানায়, অভাবের সংসার থাকায় ছেলেকে পড়াশোনা থেকে বাদ দিয়ে কারখানায় চাকুরী দিয়েছি। শিশু শ্রমে নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানান, কারখানায় মালিক যাবতীয় লাইন ক্লিয়ার করেই, কোন সমস্যা হবে না বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। এব্যাপারে কারখানার ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন কারখানার মালিকের সাথে দেখা করে কথা বলার অনুরোধ জানায়। কারখানার অপর শ্রমিক শাহনাজ পারভীন (২৭) বলেন, তাকে ৬হাজার টাকা করে বেতনের কথা বলে চাকুরীতে আসলেও এখন চার হাজার টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে। আবার ৪হাজার টাকা হতে প্রতিমাসে সিকিউরিটি মানি হিসেবে এক হাজার টাকা করে কেটে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারখানার মালিক।
কারখানার মালিক আল আমিন বলেন, এব্যপারে ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলাল ও তেলিহাটি ইউনিয়নের দুই নং ওয়ার্ড সদস্য হাসান হাফিজুর রহমান দিপক সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে মুঠোফোন কেটে দেন। (মানবজমিন)
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2qTUvrG
May 24, 2017 at 09:10AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন