দেশে অনেক বিরোধী দল, কিন্তু সব ইস্যুতে বিরোধিতা চালিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসই যেন মোদী সরকারের আসল বিরোধী। লোকসভা, রাজ্যসভায় শক্তি নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী ইমেজই জাতীয় স্তরেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বেশি আলোচনায় রেখেছে গত তিন বছরে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রথম এনডিএ থেকে মনমোহন সিংহের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার পর্যন্ত, কেন্দ্রে টানা চলেছে শরিক নির্ভর দুর্বল সরকার। বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই একক সিদ্ধান্তে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি। কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে। এনডিএ সরকার রাজ্যসভায় দুর্বল হলেও গত তিন বছরে এমন ভাবে মোদী সরকার চালিয়েছেন যাতে কোনও ইস্যুতেই সে ভাবে সরকারকে পিছু হঠতে হয়নি। ক্ষমতায় আসার পরেই যোজনা কমিশন বাতিল করে নীতি আয়োগ গঠন করেছেন। এর পরে দীর্ঘ রীতি ভেঙে রেল বাজেট তুলে দিয়েছেন। গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বার ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালু করতে চলেছেন। কোনও পদক্ষেপেই বিরোধীরা এক কথায় সায় দেয়নি। বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিরোধিতার সুর চড়িয়েছে। কিন্তু দেশে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি ইস্যুতে বিরোধিতা করেছেন। কখনও কখনও একলা চলো নীতি নিয়ে চরম বিরোধিতার পথে হেঁটেছেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও পদক্ষেপ থেকেই বিরত করা যায়নি। এ বার জিএসটি ইস্যুতেও দেশের মধ্যে সব থেকে বিরোধী সুর উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। সৌজন্যে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোট বাতিল পর্বে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে এই দাবি নিয়ে বিরোধিতার পথে হাঁটেন মমতা। কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সত্ত্বেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়ায়। ৫০ দিন পার হওয়ার পরে কিছু কিছু সমস্যা নিয়ে জনসাধারণ সরব হলেও এখন তা নেই। কার্যত নতুন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতা করলেও তা দিনে দিনে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনুদানের টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়া নিয়ে সুর চড়ালেও এখন রাজ্য সরকারও সেই পথেই হাঁটছে। জিএসটি নিয়েও এ বার কখনও নরম, কখনও গরম মমতা, কার্যত বিপাকে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কী কী কারণে তাঁর আরও ভয়? কী বলছে রাজনৈতিক মহল? ১। ১ জুলাই জিএসটি চালু হবে বলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্র। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ৩০ জুন মধ্যরাতে উদ্বোধন করবেন। গোটা দেশে এই ব্যবস্থা চালু হলে রাজ্য আদৌ বাধা দিতে পারবে না। মেনে নিতেই হবে। আগামী ছমাসের মধ্যে আইন পাশও করাতে হবেই। তখন কী বলবেন মমতা? ২। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা বলছেন মমতা। সে কথা কেন্দ্রীয় সরকারও মানছে। ইতিমধ্যেই ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কেন্দ্র সেই ঘোষণা করে দিলে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছুই বলার থাকবে না। তাদের কথাতেই সময় বাড়ল এমন দাবিও করা যাবে না। কারণ, আগেই এই ভাবনা জানিয়ে রেখেছে অর্থমন্ত্রক। ৩। অর্থনৈতিক মহলের বক্তব্য, জিটিএ নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বেশির ভাগ সামগ্রীর ক্ষেত্রেই দামের ফারাক খুব বেশি হবে না। বরং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে অনেক ক্ষেত্রেই খরচ কম হবে। ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে এমন কথা বলে রাজনৈতিক সুবিধা কিছু মিলবে না। বরং, যে কোনও কাজে বাগড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ৪। জিএসটি ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের সঠিক নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রয়েছেন জিএসটি কাউন্সিলে। অধিকাংশ বৈঠকেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। সে কারণে, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার অভিযোগ তুললেও তা সঠিক নয়। মাঝে একটি বৈঠকে অমিত মিত্রকে যেতে না দিলেও পরবর্তী সময়ে সব বৈঠকেই হাজির ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। এক মাস আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে দিল্লিতে মমতা বলেছিলেন, তাঁর কোনও আপত্তিই নেই। রাজ্য বিধানসভায় তাঁর দল আইন পাশ করাতে তৈরি এমনটাও জানিয়েছিলেন তিনি। ৫। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শাসকদলের প্রার্থী নিয়ে সব থেকে বেশি অপছন্দ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী জোটের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেন তিনি। কিন্তু সঠিক সময়ে দার্জিলিং সমস্যা এবং নেদারল্যান্ডস সফরে ব্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত চুপ থেকেছেন। সনিয়ার ডাকা প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠকে যোগ দেন সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। রাষ্ট্রপতি ভোটে যে বিরোধী জোট মমতা বানাতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্ন কার্যত ভেঙে গিয়েছে। জোটে নেই নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক। তাঁরা মোদীর পক্ষে। আবার জিএসটি বিরোধিতা নিয়েও মমতার পাশে নেই অন্য কোনও দল। এমন কি আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও নয়। তবে কি জাতীয় রাজনীতিতে মমতা তথা তৃণমূলকে আরও একা করে দেবে জিএসটি-বিরোধিতা?
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2smxw5T
June 29, 2017 at 03:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন