সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুধু নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত নয়, জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য উচ্চবিত্তরাও সেবা নিতে ছুটে যান সরকারি এই হাসপাতালটিতে। দিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি জনবল ও অন্যান্য সুবিধা। প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক জনবল নিয়ে হাসপাতালটিতে সেবাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চিকিৎসকদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অন্যান্য জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রায়ই চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অর্ন্তদ্বন্দ্বের কারণে হাসপাতালটিতে কখনো বন্ধ হয়নি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। তবে জনবল সংকট ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এতে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বিশেষ করে সিরিয়াল পেতে দিনকে দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে অপারেশনের রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু শয্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে ১ হাজার ৫০৭ জন এবং ৯০০ শয্যার জন্য ২ হাজার ২৬৩ জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৮ জন। হাসপাতালে শূন্য রয়েছে ১ হাজার ২০৫টি পদ। শূন্যপদ পূরণে বারবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হলেও এখনো পদ পূরণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, হাসপাতালটি কাগজে কলমে ৯০০ শয্যায় উন্নীত হলেও গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালের ইনডোরে (ভর্তিকৃত রোগী) চিকিৎসা নেন প্রায় ২ হাজার রোগী। শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে বেড না পেয়ে অনেক ওয়ার্ডে রোগীরা বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে মেঝেতে। এছাড়া বর্হিবিভাগেও প্রতিদিন চিকিৎসা নিয়ে থাকেন প্রায় তিন হাজার রোগী। হাসপাতালের ৯০০ রোগীর জন্য সরকার থেকে যে ঔষধ বরাদ্দ দেয়া হয় তা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেবা দিতে হয় অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিভাগের প্রায় ৫ হাজার রোগীকে। এতে হাসপাতালে দেখা দেয় ঔষধ সংকট।
চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অপারেশন করতে আসা রোগীদের। অপারেশনের তারিখ (সিরিয়াল) পেতে অনেক রোগীকে মাসখানেক পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ছেলেকে নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে এসেছিলেন ছাতকের ইবরাহিম আলী। তিন সপ্তাহেও অপারেশন করাতে পারেননি ছেলের পায়ে। অপারেশনের জন্য চিকিৎসকরা আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান ইবরাহিম আলী।
এছাড়া হাসপাতালের এমআরআইসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মেশিন নষ্ট থাকায় বিভিন্ন পরীক্ষা করানো নিয়েও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের মেশিন নষ্ট থাকায় তারা বাধ্য হয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে চড়া মূল্যে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক গণমাধ্যমকে জানান, প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক জনবল নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বাড়তি রোগীদের চাপ সামলিয়ে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বাড়তি রোগীর কারণে ঔষধ সংকটও দেখা দেয়। জনবল সংকট নিরসন হলে রোগীদের আরো ভালো সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2sphlVz
June 01, 2017 at 08:35AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন