সুরমা টাইমস ডেস্ক: সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই বড় করে লেখা ‘হলি’। দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে গ্রোসারি শপের সারি সারি র্যাক। আর ডান দিকে তাকালে দেখা যাবে, বেকারির নানারকম আইটেম থরে থরে সাজানো। কাঠের বোর্ড কেটে সুন্দর করে আড়াল করা চেয়ার টেবিল। খুব বেশি নয়, মোটে ১০টি টেবিল। ক্রেতারা আসছেন, অর্ডার দিয়ে খাবার খাচ্ছেন, চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন যেন সেই আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য নেই। কিছুটা থমথমে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় সেই হত্যাযজ্ঞের পর নতুন জায়গায় নতুন করে খোলা হলি আর্টিজান বেকারিতে দেখা গেল এমনচিত্র।
গুলশান দুই থেকে এক শ’ গজ উত্তরে সড়কে এগোতেই হাতের বায়ে র্যাংগস আর্কেড ভবন। এই ভবনের দোতলায় পাঁচশ বর্গফুট জায়গায় ছোট আকারে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি চালু করা হয়েছে বেকারি। ১০টি টেবিলে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা। হলি আর্টিজানে গিয়ে দেখা যায় টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন দুই দম্পতি। একটু পর তারা চলে গেলে এলেন চার তরুণ। আধঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল এক বিদেশি দম্পতিকে। সবাই যার যার মতো খাবার খেয়ে চলে যাচ্ছেন।
নতুন এই হলি আর্টিজানের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শাহরিয়ার আহমেদ বলছিলেন, ‘বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভিড় হয় বেশি। আগের মতোই বিদেশিরা ভিড় করেন বেশি। তবে আগের তো সেই পরিবেশ নেই। সবুজ লন নেই। তবু আমরা আমাদের সাধ্য মতো সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করি।’
হলি আর্টিজানের সেই বাড়িটিতে চলছে সংস্কারের কাজ
হলি আর্টিজানের সেই বাড়িটিতে চলছে সংস্কারের কাজ
হলি আর্টিজান এখন গত বছরের ১ জুলাই আগের হলি আর্টিজান বেকারিতে যখন জঙ্গিরা হামলা করে, তখন রেস্তোরাঁর ভেতরেই ছিলেন শাহরিয়ার আহমেদ। সারারাত জিম্মি অবস্থায় থেকে সকালে বেরিয়ে আসেন অন্যদের সঙ্গে, সেনা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর। শাহরিয়ার বলছিলেন, ‘সেদিনের স্মৃতি মনে করতে চাই না। এত ভয়াবহ স্মৃতি যে এখনও তা তাড়া করে ফেরে। ভেবেছিলাম বাঁচবো না। নতুন জীবন পেয়েছি। আল্লাহর কছে হাজার শুকরিয়া।’
নতুন এই হলি আর্টিজানে দেখা গেল, শাহরিয়ারের আরও দুই সহকর্মী আকাশ ও সুহিনকে। তারাও জঙ্গি হামলার দিন আগের সেই সেই রেস্তোরাঁর ভেতরে জিম্মি ছিলেন। আকাশ বলেন, ‘নতুন এই বেকারি সন্ধ্যার দিকে জমজমাট হয়ে ওঠে। বিদেশিরা আসেন। তবে একটা ঘটনা যেহেতু ঘটে গেছে। আমরা সবসময় সতর্ক থাকি।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন তারা কয়েকজন সকাল পর্যন্ত ছোট্ট একটা বাথরুমে আটকা ছিলেন। সকালে জঙ্গিরা তাদের ডেকে নিয়ে অনেক কথা বলে। পরে বেহেশতে যাচ্ছে বলে তাদের ভেতরে রেখেই বেরিয়ে যায়। আর সেই মুহূর্তেই শুরু হয় অপারেশন।’ সেদিনের স্মৃতি মনে পড়লে এখনও শরীর শিউড়ে ওঠে জানিয়ে আকাশ বলেন, ‘আমরা সাধারণত সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে করতে চাই না। নতুন জীবন পেয়েছি। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বলেন, ‘হলির পাউরুটি-কেক অনেক সুস্বাদু। একারণে মাঝেমধ্যেই এখানে আসি। একটা ঘটনা ঘটেছে তাই বলে যে আসা যাবে না, তা তো নয় ।’ ওই ক্রেতা বলেন, ‘এখানে পরিবেশটা আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য নেই ঠিকই, তবুও ভিড় থাকে অনেক। এক বছরের ঘটনা তো, সবার সেই স্মৃতির কথা মনে হলে চুপচাপ হলে চলে যায়।’
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2txeiPZ
June 30, 2017 at 06:07PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.