কলকাতা, ২৭ জুন- ঈদ মানেই আনন্দের উৎসব, ঈদ মানেই একে অপরের মধ্যে শুভকামনা ও শুভেচ্ছা বিনিময়৷ কিন্তু ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে দুটো দেশ এক হয়ে যাওয়া আগে কখনও দেখেছেন বা শুনেছেন? গল্প মনে হলেও ব্যাপারটি পুরোটাই সত্যি। ধর্মীয় বিশেষ এই দিনটিতে রীতিমত ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষ এক সঙ্গে বসে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময় করে যে যার ভূখণ্ডে যথারীতি আবার ফিরেও গেলেন। এবারেও দেশের অন্যান্য এলাকার মতো সোমবার খুশির ঈদ পালিত হল দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তেও। এই সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া হাঁড়িপুকুর গ্রামেও মহাধুমধামে রমজানের ঈদ পালিত হয়েছে। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া চন্দনকুরা মাঠে এপার ওপার দুই বাংলার মানুষ এক সাথে বসে নামাজ পড়লেন। জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তারা ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ঈদের শুভেচ্ছাও জানালেন। এমনকি দুপক্ষই পরস্পরের মধ্যে মিষ্টি ও সেওয়াই উপহার দিয়েছেন। বছরের অন্যান্য দিনগুলিতে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে হাঁরিপুকুর গ্রামে সীমান্ত নামক ভৌগোলিক এক রেখার বিভেদ ও দু-দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর করা নজরদারিতে কেউই সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেন না। কিন্তু পবিত্র এই উৎসবের দিন আবেগের তাড়নায় সমস্ত বাধা ও বিধি নিষেধ ভুলে বাংলাদেশের বাগমারা গ্রাম এবং ভারত ভূখণ্ডের হাঁড়িপুকুর গ্রামের মানুষের আত্মা একাকার হয়ে যায়। জিরো পয়েন্টে লাগোয়া ভারতের চন্দন্কুরা ঈদগার মাঠে এপার ওপার দুই বাংলার মানুষ এক সঙ্গে আজ সকাল নয়টার সময় নামাজ পরেন, সেই সঙ্গে উভয়ের মধ্যে শুভেচ্ছা ও উপহারও বিনিময় করলেন। এক কথায় দুই বাংলার মানুষের মিলনে আজ হিলি সীমান্তে অন্য ধরনের উৎসবই পালিত হল। হিলির ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের একেবারে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত হাঁড়িপুকুর গ্রাম। এই গ্রামের মধ্য দিয়ে দুদেশের সীমারেখা এমন ভাবে চলে গেছে যে যাতায়াতের সামান্য একটা গলির এক দিকে বাংলাদেশ আরেকদিক ভারত। প্রতিবছরের মতো এদিনও হারিপুকুর গ্রামে ঈদের উৎসব পালিত হয়। গ্রামে ঢোকার মুখে রাস্তার বাঁ-পাশে চন্দন কুড়ার মাঠে শুধু ভারতীয়রাই নন বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বাগমারা ও নপারা গ্রামের আরিফ মোল্লা জিয়াউর চৌধুরী এবং ১৪ বছরের কিশোর মইনুল মণ্ডলের মত অনেকেই এসেছিলেন। তাঁরা সকলেই একসাথে মৌলানা আব্দুল হোসেনের নেতৃত্বে ঈদের নামাজ পাঠ ও শান্তি কামনা করেন। মা-মাটি-মানুষ সরকারের তৎপরতায় স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর এই গ্রামটিতে বিদ্যুতের তার ও আলো পৌঁছেছে। মাত্র একহাত দুরে বাংলাদেশের বাগমারা গ্রামে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও সন্ধ্যের পর ভারতীয় এই গ্রামটি অন্ধকারেই ডুবে থাকতো। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে সময়কালে বিভিন্ন নির্বাচনের সময় বাম নেতা মন্ত্রী ও বিধায়ক হাঁড়িপুকুর গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও তা করে দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। অথচ ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদল হতেই এখানকার মানুষের বিদ্যুৎ-এর দাবি পূরণের চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। গ্রামের ভেতরে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার পৌঁছে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হাঁড়িপুকুরের প্রত্যেক ঘরে জ্বলে উঠেছে বিদ্যুতের আলো। ঘুচে ঘুচে গিয়েছে অনুন্নয়নের অন্ধকার। গ্রামে বিদ্যুতের তার পৌঁছানোর ব্যাপারটিকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ঈদের উপহার বলেই মনে করে আসছেন এখন বাসিন্দারা। চন্দন কুড়ার ঈদগার মাঠে নামাজে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা সালাম মণ্ডল জানিয়েছেন ছোট বেলা থেকেই ঈদের পবিত্র দিনে তারা এপারের এসে হাঁড়ি পুকুরের মানুষদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। এই একটা দিনে তাদের মাঝে কোনও সীমারেখা ও ভেদাভেদ থাকে না। নামাজ শেষে উভয় গ্রামের বাসিন্দারা একে অপরকে বুকে জড়িয়ে শুধু শুভেচ্ছা ও মিঠাই বিনিময়ই নয় দুই বাংলার শান্তি ও উন্নতির কামনাও করেন। এবারও দুই নাতি সিরাজুল ও সফিকুলকে সঙ্গে নিয়ে এপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খুশির ঈদের নামাজ পড়েছেন বলে বাংলাদেশী ওই নাগরিক জানিয়েছেন৷ হাঁড়িপুকুরের বাসিন্দা মহ: আতিয়ার রহমান মানিক শেখ সহ বাসিন্দাদের প্রত্যেকেই জানান যে স্বাধীনতার দীর্ঘ কয়েক দশক পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁদের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ পৌঁছনোর উদ্যোগকে প্রতি বছর ঈদের উপহার হিসাবেই তাঁরা মনে করেন। তিনি আরও বলেন যে তাদের গ্রামে ঈদের মজাই আলাদা কারণ বছরের এই একটা দিনে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দুই পাড়ের মানুষ এক হয়ে যান এবং একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বছরের অন্যান্য দিন গুলিতে তাঁরা কেউই ভৌগলিক সীমারেখাকে মান্যতা দিয়ে একে অপরের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন না। পবিত্র এই দিনটিতে সীমান্ত প্রহরার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জওয়ানরাও গ্রামের প্রত্যেককে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ও ছোটদের হাতে উপহার তুলে দেন৷ আর/১৪:১৪/২৭ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tfCQfR
June 27, 2017 at 08:15PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top