ঢাকা::প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার পর গত ৩ দিন ধরে সৌদি আরবগামী শ্রমিকদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বিদেশগামী প্রায় ২০ হাজারের মতো কর্মী। যাদের বেশির ভাগ সুদে ও জমিজমা বন্ধক রেখে লাখ লাখ টাকা রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির মালিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতারা এ প্রসঙ্গে বলছেন, অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পর একক ভিসায় বিদেশ যেতে কোনো কর্মীর নামেই দূতাবাস থেকে সত্যায়ন আনতে হতো না। আগেভাগে না জানিয়ে হঠাৎ মন্ত্রণালয় থেকে এমন একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ায় সৌদিগামী হাজার হাজার পুরুষ কর্মীর বিদেশগমনে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এ মুহূর্তে ইচ্ছা করলেই কি সৌদি আরব থেকে শ্রমিকের সত্যায়ন নেয়া সম্ভব? এখনতো কর্মীর নামে ভিসা, মেডিক্যাল, টিকিট সবকিছুই হয়ে গেছে। শুধু বাকি রয়েছে ম্যানপাওয়ার কিয়ারেন্সটুকু।
বায়রা নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা দ্রুত সৌদি সরকার, দেশটিতে থাকা রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করার দাবি জানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির (বায়রার) নেতারাপ্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সাথে দেখা করতে দিনভর অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু তাকে না পাওয়ায় পরে একটি লিখিত আবেদন দিয়ে এসেছেন।
গত ৬ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজার কাছে।
জরুরি ওই আদেশটি পরে পাঠানো হয় সৌদি আরবের জনশক্তি রফতানি ব্যবসার সাথে জড়িত রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির সাধারণ সদস্যদের কাছেও।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়ন, যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া একক/দলীয় ভিসায় কোনো কর্মী যাতে সৌদি আরব যেতে না পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
চিঠির এক স্থানে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর এডিজিকে বিষয়টি অতীব জরুরি উল্লেখ করে ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনপূর্বক ছাড়পত্র প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজার সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে মন্ত্রণালয় অথবা আমার ডিজি মহোদয় বক্তব্য দেবেন। আমি কিছু বলতে পারব না। তবে ২০ হাজার কর্মীর ফাইল আটকা পড়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি শুধু বলেন, ৩-৪ হাজার হবে কি না সন্দেহ। তবে এর বেশি যদি থেকে থাকে তাহলে সেগুলো ব্যুরোতে জমা হয়নি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব থেকে একক ও দলীয় ভিসার ডিমান্ড সবই এখন অনলাইন সিস্টেমে আসছে। তাই ভিসা নিয়ে সন্দেহ করা বা জালজালিয়াতি হওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। আর ভিসা যদি সঠিক থাকে তাহলে দূতাবাসের সত্যায়ন লাগার কথা না।
গতকাল শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী নোমান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌদি আরবগামী পুরুষ কর্মীদের ভিসাসহ সবকিছু ঠিক থাকার পরও শুধু দূতাবাসের সত্যায়নের দোহাই দিয়ে আমাদের ১৫-২০ হাজার শ্রমিকের বহির্গমন ছাড়পত্র এখন ব্যুরোর বহির্গমন শাখায় আটকে আছে। তারা বলছেন, এসব ভিসার বিপরীতে সত্যায়ন নিয়ে আসতে। এ মুহূর্তে কি সত্যায়ন আনা সম্ভব? এটি আনতে আনতে কর্মীদের ভিসা, টিকিট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে? শুধু ম্যানপাওয়ার কিয়ারেন্সটাই এখন বাকি আছে আমাদের। আমরা কেউ আইনের বাইরে না। তবে নতুন কোনো নিয়ম চালুর আগে অন্তত আমাদের সময় তো দেয়া উচিত। হুট করেই একটি নিয়ম চালু করে দিলেই তো আর হবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টির দ্রুত সুরাহার জন্য বৃহস্পতিবার দিনভর প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেছি। তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে থাকায় তার বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়ে এসেছি। আগামী রোববার আমরা আবার তার সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাব।
এ দিকে গত ৯ জুন নয়া দিগন্তের প্রথম পাতায় ‘উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে শ্রমিক রফতানি, শীর্ষ ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির কার্যক্রম স্থগিত’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসর মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বিষয়টি মোটেও সঠিক নয়। আমরা টাকা বেশি নিয়ে শ্রমিক রফতানি করছি এমন একটি ঘটনারও সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। আমরা ১৩ এজেন্সির প্রতিনিধি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ও সচিবের সাথে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করি। তখন তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, যেহেতু এই বিষয়টাতে কোনো ধরনের মেটারিয়াল নেই তাই মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংশোধনী আমরা বিএমইটিতে পাঠাবো বলে।
from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2snQ35A
June 10, 2017 at 10:30AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন