লন্ডন, ১৮ জুন- ৩৫৬ রান করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে। করেছে ৩৪৯ রানও। আবার ৩৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করেও জিতেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু ওভালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের সাথে এ কি হচ্ছে! ৩৩৯ রানের লক্ষ্য পাহাড় পেরিয়ে যে আরো বড় দেখাচ্ছে এখন! তাও ভারতের ইনিংস অর্ধেক না যেতেই! এই প্রতিবেদন লেখার সময় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত একটু একটু করে হার দেখছে। আর প্রথমবার ফাইনালে উঠেই শিরোপা দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তান। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারত রীতিমতো ধুঁকছে। ১৮ ওভারে ৬ উইকেটে ৮০ রান ভারতের। পাকিস্তানের করা ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের জবাবে। ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানরা আউট। হার্দিক পান্ডিয়া ১৭ রানে ব্যাট করছেন। এখনো রানের খাতা খোলা হয়নি রবীন্দ্র জাদেজার। এই পরিস্থিতিতে এখন একটা কথা বলতেই হয়। তাতে ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই। ভারতকে শিরোপা ধরে রাখতে, রেকর্ড তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিততে অলৌকিক কিছু করতে হবে। কিন্তু অলৌকিকতারও তো একটা সীমা আছে। এখান থেকে উজ্জীবিত পাকিস্তানি বোলারদের সামনে ভারতের লোয়ার অর্ডার কতোটা কি করতে পারে তা নিয়ে আছে বিরাট এক প্রশ্ন। মাত্র চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামা ফখর জামানের এক সেঞ্চুরিই সম্ভবত ব্যবধান গড়ে দিল। পাকিস্তান টস হারার পর প্রবল সাহসী ফখর অভিজ্ঞদের দেখিয়েছিলেন ভারতের বোলিং লাইন আপ হয়তো বিশ্বসেরা, কিন্তু অজেয় নয়। ১০৬ বলে তার চোখ জুড়ানো ১১৪ রানের ইনিংসের পর আরো দুটি ফিফটি। সাথে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের আগুন। তাতে পুড়ে ছাই ভারতের বোলিং। আর ব্যাটসম্যানদের থেকে বোলারদের মাঝেও প্রবাহিত বিশ্বাসের সেই বারুদ। যে পাকিস্তানের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হয়ে যাওয়ার অবস্থা শুরুতেই, চিরশত্রু ভারতের সামনে সেই তারা প্রচণ্ড প্রতিপক্ষ। চোট থেকে ফিরে মোহাম্মদ আমির প্রথম ওভারেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মাকে (০) তুলে নেন। দুই ওভার পরেই দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি (৫) আমিরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শাদাব খানকে। ওই শাদাবই পরে স্পিনে আরো সর্বনাশের কারণ ভারতের। তবে তার আগে ইনিংসের নবম ওভারে আরেক উইকেট আমিরের। ইনফর্ম শিখর ধাওয়ান (২১) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। যুবরাজ সিং, এমএস ধোনিরা আছেন। কিন্তু তরুণ স্পিনার শাদাব অভিজ্ঞ যুবরাজকে (২২) এলবিডাব্লিউর শিকার বানিয়ে ফেলেন। ৫৪ রানে ৪ উইকেট নেই ভারতের। কি হবে? পরের ওভারেই ধোনি (৪) টুর্নামেন্টের সেরা বোলার হাসান আলিকে উইকেট দিয়ে ফিরলে পাকিস্তান দল যেন ম্যাচ জেতার উৎসবই করে ফেলে! ১৭তম ওভারে শাদাবের দ্বিতীয় শিকার কেদার যাদব (৯)। ভারতের বিশ্বখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম ৬ জনের মধ্যে দুজন ২০ পেরিয়ে সামান্য হাঁটলেন। বাকি ৪ জনের কেউ দুই অংক ছুঁতে পারলেন না। কি আশ্চর্য এক ব্যাপার! এর আগে যেটা ভাবা যায়নি ফাইনালের আগে তাই হয়েছে। এই আসরের গ্রুপপর্বে দুই দলের দেখা হয়েছিল। সেখানে বৃষ্টির ঝামেলার ম্যাচে প্রতাপেই জিতেছিল ভারত। তাদের সামনে ফাইনালে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান খুব বড় প্রতিপক্ষ ছিল? ছিল বলেই প্রমাণ হচ্ছে। ফখর ও আজহার মিলে ২৩ ওভারে ১২৮ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে দিয়ে গেছেন পাকিস্তান টস হারার পর। দুর্দান্ত ব্যাটিং তাদের। আর তাদের দেখাদেখি পরে আরো জুটি গড়েই ভারতকে বিপাকে ফেলেছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বোলিংয়ের ধারের দেখা মেলেনি। দ্বিতীয় উইকেটে ফখর ও বাবর ৭২ রানের জুটি গড়েছেন। তৃতীয় উইকেটে বাবরের সাথে শোয়েব মালিকের ৪৭ রানের জুটি। চতুর্থ ওভারটা ২০ রানের। কিন্তু শেষ ৭.৩ ওভারে মোহাম্মদ হাফিজ ও ইমাদ ওয়াসিমের ৯.৪৬ গড়ে অবিচ্ছিন্ন ৫ম উইকেটের জুটিটা দলের টিলাটাকে পাহাড় বানিয়েছে দ্রুত। সবাইকে ছাপিয়ে অবশ্য ওপেনার ফখরের নামটা আসে আগে। ১০৬ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংস খেলে গেছেন। শেষে ছিলেন দারুণ মারমুখী। ভারতীয় বোলাররা ছন্দ হারিয়েছেন। ফর্মে থাকা আজহার ৭১ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে ফখরের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট। বাবর আযম এই ক্ষণকেই রান করার জন্য বেছে নিলেন। ৫২ বলে ৪২ তার। শোয়েব মালিক কিছু করতে না পারলেও আরেক অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ দারুণ খেললেন। ৩৭ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত তিনি। ২১ বলে ২৫ রানে অপরাজিত ইমাদ ওয়াসিম। পাকিস্তানের ইনিংসের সবচেয়ে আলোচিত নাম ফখর আউট হতে পারতেন চতুর্থ ওভারেই। ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। কিন্তু জসপ্রিত বুমরাহ নো বলে কিভাবে উইকেট পাবেন? তারপর আজহার ও ফখরের আক্রমণের শিকার তিনি। বদলে বিরাট কোহলি রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আনলেও লাভ হয়নি। ভুবনেশ্বর কুমার নতুন বলে প্রথম ৫ ওভারে ২ মেডেনে ১০ রান দিলেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে বোলাররা দাঁড়াতে পারলেন না। দ্রুত ছোটে রানের চাকা। দুই ওপেনারেরই ফিফটি হয়ে যায়। সাবলীল ফিফটি। এরপর আজহার লেগ সাইডে বল ঠেলে চলে আসেন অন্যপ্রান্তে। তখনো ফখর বল দেখছেন। রান আউট আজহার। রাগ চেপে যায় বুঝি এই আসরের আবিস্তার ফখরের। পরের ৩ ওভারে ৪ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ৯০ এর ঘরে পা রাখেন। এরপর অশ্বিনকে সুইপে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে নিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির উল্লাসে মাতেন। মারতে মারতেই শেষে ১১৪ রানে বিদায় ফখরের। কিন্তু ততক্ষণে রানের ছন্দটা পেয়ে গেছে পাকিস্তান। ভারতের বোলাররা ঠিক ধরে উঠতে পারেন না। বুঝে উঠতে পারেন না। রান উঠতে থাকে। সেনসেশনাল বাবরের রানের দরকার ছিল। পেলেন। জুটির দরকার ছিল পাকিস্তানের। পেল তারা। আর দরকার ছিল স্লগ ওভারে দারুণ ব্যাটিংয়ে রানটাকে পাহাড়ে তুলে নেওয়া। হাফিজ আর ইমাদের জুটি তাও করলো। ভারতের বোলারদের মধ্যে ১০ ওভারে ভুবনেশ্বের সবচেয়ে কিপটে ১০ ওভারে ৪৪ রানে ১ উইকেট নিয়ে। ৯ ওভারে বুমরাহ দিয়েছেন ৬৮ রান। ১০ ওভারে অশ্বিনের অশ্বিনের খর ৭০ রান। ১০ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ৫৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজা ৮ ওভারে ৬৭ রান খরচ করেছেন। কেদার যাদব ৩ ওভারে ২৭ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2rJV4RG
June 19, 2017 at 03:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন