সুরমা টাইমস ডেস্ক : দেশের পৃথক দুটি জঙ্গি সংগঠনে ‘শরিয়াহ বোর্ড’ নামে একই ধরনের উইংয়ের সন্ধান পেয়েছে র্যাব ও পুলিশ। এই উইংয়ের দুই শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব ও পুলিশের দাবি, দুই সংগঠনের উইংয়ের নাম এক হলেও তাদের কাজের ধরন, পরিকল্পনা ও কথায় ভিন্নতা পাওয়া যাচ্ছে। র্যাব বলছে, এই শরিয়াহ বোর্ড অনুবাদের কাজ করে। আর পুলিশ জানিয়েছে,
প্রথমে গত এপ্রিলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) শরিয়াহ বোর্ডের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে। তখন সিটিটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শরিয়াহ বোর্ড থেকেই ‘ব্লগার ও লেখকদের’ টার্গেট করে হত্যার অনুমোদন দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার দুই মাস পর জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শরিয়াহ বোর্ডের আমীর শায়েখ মামুনুর রশিদ ওরফে শায়েখ মামুনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তবে র্যাবের দাবি, জেএমবির শরিয়াহ বোর্ড সংগঠনের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের অনুবাদের কাজ করে থাকে।
র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারস্থ মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১০ ও ১১ জুন র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় জেএমবির কেন্দ্রীয় দাওয়াত বিষয়ক বোর্ডের শুরা সদস্য ইমরান আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। সে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংগঠনের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এছাড়াও র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১-এর একটি আভিযানিক দল সোমবার সকালে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে শায়েখ মো. মামুনুর রশিদ ওরফে শায়েখ মামুনকে (৩৪) গ্রেফতার করে। তার গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।’
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শায়েখ মামুনুর রশিদ ওরফে শায়েখ মামুন বর্তমানে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শরিয়াহ বোর্ডের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণেই সে দায়িত্বটি পেয়েছিল। ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি মাদ্রাসা থেকে দাউরা হাদিস সম্পন্ন করে মামুন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতের উত্তরপ্রদেশে দেওবন্দে দারুল উলুমে পড়াশোনা সম্পন্ন করে সে। এরপর ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মিরপুর হযরতপুর ১২ নম্বর পল্লবীতে হাদিস বিষয়ক গবেষণা করে। সে কোরআনে হাফেজ, হাদীস বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ও দক্ষ অনুবাদক।’
শায়েখ মামুন পেশায় একজন মাদ্রাসা শিক্ষক উল্লেখ করে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান বলেন, ‘মামুন ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাত বছর সায়েদাবাদের বায়তুন নূর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছে। গত বছর থেকে সে ডেমরার মারকাজুল হিকমা ওমর ফারুক কওমী মাদ্রাসায় ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।’
শায়েখ মামুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জবাব দিয়ে র্যাবের মুখপাত্র জানান, সে ২০১৪ সালে জেএমবি-সদস্য তৌহিদ ও ইমাম ওরফে দারা-কুতনির মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে জেএমবিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৫ সালে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপে যোগদান করে এবং শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে। কর্মদক্ষতার সুবাদে গত বছর জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শরিয়াহ বোর্ডের আমীর নির্বাচিত হয় সে।’
এবিটির শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য হাফেজ মাওলানা মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ
জেএমবির শরিয়াহ বোর্ডের গঠন ও কাজের বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শরিয়াহ বোর্ডে ১০-১৫ জনের একটি দল কাজ করে। এই বোর্ডের কাজ মূলত বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন, বই, লিফলেট এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন উগ্রবাদী মতাদর্শকে বাংলায় অনুবাদ করে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আলেম বোর্ডের মাধ্যমে প্রচার করা। আলেম বোর্ডের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে সুযোগ-সুবিধা বুঝে এসব অনুবাদকৃত মতাদর্শগুলো বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ, মজলিশ ইত্যাদি স্থানে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করে থাকে। এছাড়া দাওয়াতের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে অনুবাদকৃত মতাদর্শের নথি।’
এদিকে গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হাফেজ মাওলানা মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর ওয়াসিকুর রহমান বাবু, অন্তত বিজয় দাস, নীলয় চ্যাটার্জি এবং সর্বশেষ জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) শরীয়াহ বোর্ড। সুতরাং এই হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় তাদের, যারা এগুলোর অনুমোদন দিয়েছিল।’
সিটিটিসির প্রধান দাবি করেছিলেন, ‘এবিটির শরিয়াহ বা মুফতি বোর্ড-ই ব্লগার-লেখকদের হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিল। জঙ্গি সংগঠনটির এই বোর্ডই ঠিক করে দিতো কাকে, কখন, কোথায় ও কীভাবে হত্যা করতে হবে।’
তবে সোমবার জেএমবি শরিয়াহ বোর্ডের আমীর শায়েখ মামুনকে গ্রেফতারের পর র্যাব জানায়, জাহিদ, তৌহিদ এবং ইমাম বিভিন্ন দেশি-বিদেশি উৎস ও মাধ্যম হতে মূলত আরবী ভাষার উগ্রবাদী মতাদর্শের নথিপত্রগুলো শায়েখ মামুনের কাছে নিয়ে আসতো। তারপর অনুবাদ শেষে সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যেতো।
রবিবার (১১ জুন) র্যাব-১১’র অভিযানে গ্রেফতারকৃত জেএমবির কেন্দ্রীয় দাওয়াত বিষয়ক বোর্ডের শুরা সদস্য ইমরান আহমেদও ওই নথিপত্রের অন্যতম একজন উৎস ছিল। এছাড়া জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শুরা সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী সাজিদ প্রায়ই জেএমবির আমীর আবু মুহারিবের পক্ষে শরিয়াহ বোর্ডের কাজ তদারকির জন্য শায়েখ মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও গোপন বৈঠক করতো।’
র্যাবের হাতে গ্রেফতার জেএমবির এই শরিয়াহ বোর্ডের আমিরের বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে সে কোন পর্যায়ের নেতা তা ছবি না দেখে বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2sXw7UJ
June 13, 2017 at 07:21PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন