আমেরিকা ::যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনের ফলাফলে কনজারভেটিভ পার্টি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ঝুলন্ত সংসদ হতে চলেছে। থেরেসা মে হঠাৎ করে সাধারণ নির্বাচন ডাকার আগে সংসদে দলের যত আসন ছিল এই নির্বাচনে আসন সংখ্যা তার চেয়েও কমেছে এবং মে-কে তার সিদ্ধান্তের জন্য লজ্জায় পড়তে হয়েছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী টোরিরা (কনজারভেটিভ) ৩১৮টি আসন পাচ্ছে, লেবার ২৬১ এবং এসএনপি ৩৫ আসন।
লেবার নেতা জেরেমি করবিন মে-কে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে মে বলেছেন, দেশে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন এবং তার দল সেই স্থিতিশীলতা ‘নিশ্চিত’ করবে।
লেবারের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ২৯টি নতুন আসেএবং কনজারভেটিভ ১৩টি আসন হারিয়েছে।
নিকোলা স্টারজেনের স্কটিশ ন্যাশানালিস্ট পার্টি, এসএনপি, খুবই খারাপ ফল করেছে। তারা ২২টি আসন হারিয়েছে। তাদের আসনগুলো গেছে টোরি, লেবার এবং লিবারেল ডেমোক্রাটদের কাছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ভোটের ৪২শতাংশ পেয়েছে কনজারভেটিভরা, লেবার ৪০ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রাট ৭ শাতংশ এবং গ্রিন পার্টি পেয়েছে ২ শতাংশ ভোট।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভোট দিয়েছে ৬৮.৭ শতাংশ ভোটার- ২০১৫র তুলনায় এই হার শতকরা ২ ভাগ বেশি। তবে দেশের অনেক জায়গায় দেখা গেছে রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে শুধু বড় দুটি দলকে কেন্দ্র করে। কনজারভেটিভ আর লেবার যত ভোট পেয়েছে, ১৯৯০এর পর শুধু দুটো দলেরএত ভোট পাওয়ার এটা রেকর্ড।
ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পাটি (ইউকিপ) পার্টি হারিয়েছে প্রচুর আসন, তবে যেমনটা মনে করা হচ্ছিল তাদের ভোটগুলো পাবে শুধু টোরিরা, সেটা হয়নি। টোরদের পাশাপাশি তাদের ভোট পেয়েছে লেবারও।
উত্তর লন্ডনের ইসলিংটন নর্থ আসন থেকে পুর্ননির্বাচিত হবার পর লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন মে-র “ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর” সময় হয়েছে। তার উচিত সরে গিয়ে এমন একটা সরকারকে জায়গা করে দেওয়া যারা “দেশের জনগণের সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্ব করবে।”
তিনি বলেন, তিনি এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল নিয়ে ‘খুবই গর্বিত’ এবং তার ভাষায় এটা ‘ভবিষ্যতের আশার প্রতি ভোট’। তিনি বলেছেন দেশের জনগণ ‘ব্যয়সঙ্কোচ থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি।’
কনজারভেটিভ বলেছে ঝুলন্ত সংসদ হলে মে আগে সরকার গঠনের সুযোগ পাবেন।
ইউকে-র সাবেক একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা লর্ড ওডনেল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে আপাতত তার পদে থাকতে হবে- সেটা তার দায়িত্ব। তিনি তাকে পরামর্শ দেবেন শুক্রবার যেন তিনি রানির সঙ্গে দেখা করে তিনি কী করতে চান তা ব্যাখ্যা করেন।
তবে ব্রিটেনের ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে এই গ্রীষ্মের শেষের দিকে আরেকটা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রেক্সিট নিয়ে যে আলোচনা হতে যাচ্ছে এই ফলাফল তার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মে-র রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। একজন কনজারভেটিভ মন্ত্রী বিবিসির বিশ্লেষক লরা কুয়েন্সবার্গকে বলেছেন এই ফলাফলের পর কীভাবে ক্ষমতায় থাকা থেরেসা মে-র জন্য কঠিন হবে।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো দলকে ৩২৬টি আসনে জিততে হবে। তবে তারা ৩১৮টি আসন পেলে এবং উত্তর আর্য়াল্যান্ডের ডেমোক্রাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সমর্থন পেলে তারা সরকার গঠনের জন্য রানির অনুমতি পাবে।
ব্রেক্সিট বিরোধী কনজারভেটিভ এমপি অ্যানা সোব্রি বলেছেন, খুবই খারাপ নির্বাচন হয়েছে এবং মে-র উচিত এখন তিনি কী করবেন তা ভাবা।
তবে ব্রেক্সিট-পন্থী এমপি স্টিভ বেকার বলেছেন দলের উচিত থেরেসা মে-কে সমর্থন করা যাতে ‘স্থিতিশীলতা বজায় থাকে’।
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে জেতার পর থেরেসা মে বলেছেন, পুরো চিত্র এখনও পরিস্কার হয়নি, এবং ‘এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
যদি পূর্বাভাস সঠিক হয় এবং কনজারভেটিভ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পায় এবং সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে থাকে, তাহলে আমাদের দায়িত্ব হবে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা এবং আমরা সেটাই করব, তিনি বলেন।
বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন বলেন, মে সম্ভবত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
ডিইউপিরএম পি সাইমন হ্যামিল্টন বলেছেন, তার দলের ভোট টোরিদের সরকার গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইইউ ছাড়ার সময় উত্তর আর্য়াল্যান্ডের জন্য ভাল সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার ব্যাপারে তারা দরকষকষি করবেন।
কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি তাদের আসন হারিয়েছেন। যেমন এসএনপির অ্যালেক্স স্যামন্ড হেরে গেছেন এক টোরি প্রার্থীর কাছে এবং লিবডেম নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ পরাজিত হয়েছেন একজন লেবার প্রার্থীর কাছে।
লিবারেল ডেমোক্রাটরা বলে দিয়েছে কনজারভেটিভ বা লেবার কারো সঙ্গেই তারা কোয়ালিশনে যাবে না।
from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2sKtoy2
June 09, 2017 at 04:03PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন