ঢাকা, ৩০ জুন- ছবির নাম রাজনীতি। কিন্তু মুক্তির সময় ছবিটি যে এতটা রাজনীতির শিকার হবে, সেটি মুক্তির আগেও টের পাননি ছবিটির নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী কিংবা কলাকুশলীরা। এবারের ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র দেশিয় প্রযোজনার ছবি বিগ বাজেটের রাজনীতি। যাতে জুটি বেঁধেছেন শাকিব-অপু। আর ঈদের ছবিতে একমাত্র বাংলাদেশি প্রধান নায়িকাও ছিলেন অপু। অন্য দুটি যৌথ প্রযোজনার বিতর্কিত চলচ্চিত্র নবাব ও বস-টু। প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে সর্বনিম্ন ৪০টি প্রেক্ষাগৃহে। অন্য দুটি পেয়েছে যথাক্রমে ১২৫ ও ১১২টি প্রেক্ষাগৃহে। এদিকে ঈদের চতুর্থ দিনে এসেও রাজনীতি ছবিটি দর্শক ও হল মালিকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, অনেক রাজনীতির পরও রাজনীতির জয়! আবার এও বলছেন, যৌথ প্রযোজনার কাছে হারবে না দেশিয় রাজনীতি। দেশের চলচ্চিত্রের সফল জুটি শাকিব খান-অপু বিশ্বাস দীর্ঘদিন পর দেশের পর্দায় ফিরে এসেছেন। তাই এ ছবিটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষদের আগ্রহ একটু বেশিই। যা সপ্তাহের এক একটি দিন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টের পাওয়া যাচ্ছে। দেশিয় চলচ্চিত্রের দুর্দিনে চলচ্চিত্রটি মুক্তিতে নতুন আশা সঞ্চারও হয়েছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। চলচ্চিত্রটির প্রচারে অপু বিশ্বাসকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে। কিন্তু ছবিটি নিয়ে কোনো কথাই বলেন নি শাকিব। এই ঈদে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত বিতর্কিত ছবি নবাব। যৌথ প্রযোজনার দুটি ছবির দাপটে ঢাকায় একটি হল পেয়েছে রাজনীতি। যার ফলে অপু বিশ্বাস সন্তান জয়কে নিয়ে স্বচক্ষে ছবিটিও দেখতে যাননি। এ কারণে কিছুটা অভিমানও প্রকাশ করেছেন এ অভিনেত্রী। ২৯ জুন দুপুরে কথা হয় অপু বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে আমার সিনেমাটির সঙ্গে অনেক বড় বড় বাজেটের দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে একটি মাত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো মুক্তির কিছুদিন আগে একটি ঘটনার কারণে প্রেক্ষাগৃহগুলো ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। এটাকে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির একতা বলে না। আর রাজনীতি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কেউ না। তাদের একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সুন্দর একটি সিনেমা ঈদের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলো না। এটা আসলে মাঝে মাঝে ভাবায় নিজেকে। কিন্তু যে কয়েকটা হলেই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে সেখান থেকে আশানুরূপ দর্শকদের মন্তব্য পাচ্ছেন অপু। এমনটা মন্তব্য করে অপু বিশ্বাস বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল ঈদের দিন সকালে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে আমার ছেলেকে নিয়ে সিনেমাটি দেখতে যাব। কারণ ওর সাথে এটা আমার প্রথম ঈদ। তার বাবা-মায়ের রক্ত যেখান থেকে তৈরি, সে জায়গাগুলো আমার ছেলেকে না দেখালে কি হয়? সেটি তো আর হলো না। সে আশাটা তো আর পূরণ হলো না। এটা আমার জন্য বেশ কষ্টের। তবে আমি কখনও হতাশ হই না। যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, যত বাঁধা আসবে, সেগুলো দূর করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। আমি সেভাবেই পথ চলি। এদিকে যৌথ প্রযোজনা দুটি ছবির দখলে বাংলাদেশের ২৩৫টি হল! আর সেখানে রাজনীতির দখলে মাত্র ৪০টি। তবে হল সংখ্যা কম হলেও দর্শকই রাজনীতি দিয়ে তাদের জবাব দিচ্ছে। রাজনীতি যে হল মালিকদের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছেন তা ইতোমধ্যে বোঝা যাচ্ছে। শুরুর দিন থেকেই রুপালি পর্দা কাঁপিয়ে যাচ্ছে সিনেমাটি। মুক্তির প্রথম দিনে প্রতিটা হলই ছিল হাউজফুল। ছবিটির নির্মাতা বুলবুল বিশ্বাস বলেন, অনেক রাজনীতির পর রাজনীতির জয় হয়েছে। এমনটা তো বলাই যায়। এটা তো হওয়ারই কথা ছিল। আমি তো আমার দর্শকদের কোনো ধোঁকা দিয়ে কেনো কাজ করিনি। সেহেতু দর্শক কেন আমাকে ধোঁকা দেবে? আমি আমার দেশের জন্য কাজ করেছি। চিত্রনাট্যের প্রত্যেকটা ডায়ালগ লিখেছি। চরিত্র তৈরি করেছি। দর্শক যে ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে চায়। আমি তার সর্বোচ্চ আমার মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দর্শক যদি বলে-বিগ বাজেট, বিগ কাস্টিং মানে ভালো সিনেমা। সেদিক থেকে আমি বলবো বিগত কয়েক বছরের সবচেয়ে ব্যয় বহুল ছবি রাজনীতি। আর দর্শক যে জায়গাটার অভাব দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করে আসছে। সেটি হলো দেশের গল্প তারা পায় না। সে জায়গা থেকে রাজনীতি সম্পূর্ন ভিন্ন গল্পের একটি ছবি। যেটা দর্শক লুফে নিয়েছে। এটা তো অবধারিত ছিল। এতো প্রতিকূলতার পরও দর্শক বিষয়টিকে গ্রহণ করেছে। আমি আমার জায়গায় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এদিকে ২৮ জুন বিকেলে প্রতিবেদকের এর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের। তিনি বলেন, রাজনীতি ছবিটি প্রথম সপ্তাহে হল কম পেলেও ছবিটি পরের সপ্তাহ থেকে আরও ভালো যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাকে বেশ কয়েকজন হল মালিক জানিয়েছেন রাজনীতির হল রিপোর্টও বেশ ভালো। গল্পটা সুন্দর। প্রত্যেকটি চরিত্রকে পরিচালক বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন। সাংবাদিক ও চিত্রনাট্যকার রুম্মান রশীদ খান ছবিটি নিয়ে তার ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন, সন্দেহ নিয়েই দেখা শুরু করলাম রাজনীতি। শুরুতেই যে বিষয়টি কানে লাগলো, তা হলো ছবির সাউন্ড। রাজনীতি ছবির শব্দগ্রহণ রীতিমত মুগ্ধ করেছেন পরিচালক। বলা বাহুল্য, শেষ পর্যন্ত প্রতিটি চরিত্রের চরিত্রায়ণের ব্যপারে ধ্যান দিয়েছেন তিনি। আর এখানেই তিনি সফল। সাধারণত দেখা যায়, দেশিয় বাংলা ছবিতে সাধারণত নায়ক, খুব বেশি হলে নায়িকা বড় হয়ে ওঠেন। বাকি চরিত্রগুলো অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে। কিন্তু রাজনীতিতে তা হয়নি। এ ছবিতে শাকিব খান কিংবা অপু বিশ্বাস নন, গল্প-ই এ ছবির হিরো। প্রতিটি চরিত্র নিজেদের জায়গায় দৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে। কেউ কারো চেয়ে বড় নন, ছোটও নন। রাজনীতি যতই এগিয়েছে, ততই মুগ্ধ হয়েছি। রাজনীতি ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও আনিসুর রহমান মিলন। এছাড়াও অমিত হাসান, আলী রাজ, সাদেক বাচ্চু, শিবা সানু, সাবেরী আলম, বিপাশা কবির, লাবণ্য লিসাসহ আরও অনেকে। রাজনীতির অডিও অ্যালবামটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশনা করেছে আর্টিস্টস্প্রেড। ছবিতে থাকা গানগুলো লিখেছেন কবির বকুল, মেহেদী হাসান লিমন, আবদার রহমান, বুলবুল বিশ্বাস ও অভি হাসান। গানগুলোর সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন ফুয়াদ, হাবিব, প্রীতম, শান শায়েখ। কণ্ঠ দিয়েছেন পারভেজ, মুন্নী, প্রীতম, কোনাল, তাহসিন, খেয়া ও শান। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন আশফাক আহমেদ। আর/১২:১৪/৩০ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tul7S8
June 30, 2017 at 07:01AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন