বিয়ে বিচ্ছেদ। এ নতুন কিছু নয়। ভাঙা-গড়ার নামই জীবন। তবু বেঁচে থাকতে হয় নতুনের আশায়। দুটি মনের মিল হলেই একটি সম্পর্ক মিষ্টি হয়। কিন্তু একটা সময় এসে সেই মিষ্টি সম্পর্কই তিক্ততায় রুপান্তরিত হয়ে থাকে। কিন্তু কেন? সম্প্রতি বাংলাদেশের দুটি সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণে বিয়ে বিচ্ছেদের জরিপে উঠে এসেছে একমাত্র প্রধান কারণ পরকীয়া প্রেমে নিজেদের জড়িয়ে ফেলা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে পরকীয়া কেন? তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে সম্পর্কের বিশ্বাস, সেক্রিফাইস, ঠিকমতো সময় না দেওয়া। এসব কারণেই আরও নানা কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে শুধুমাত্র মানসিক শান্তি পাওয়া আশায়। এখন মূল কথায় আসি। গত ছয় মাসে দেশে তারকা দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে মোট তিনটি। তারা হলেন কণ্ঠশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ও রেহান চৌধুরি, অভিনেতা নিলয় আলমগীর ও অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ, কণ্ঠশিল্পী তাহসান খান ও অভিনেত্রী মিথিলা। এই তিন বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে বলতে দেশে জন্ম নিয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে বেশি উত্তেজনা কাজ করেছে। তার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। হাবিব ও রেহান: নানা গুঞ্জনের পর এ বছরের শুরুতেই ১৯ জানুয়ারি হাবিব তার ফেসবুক পেইজ থেকে রেহানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করে নেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস পর এ মাসে রেহান হাবিবের সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে বলেন, সংসার ভেঙে গেছে হাবিব ও মডেল ও অভিনেত্রী তানজিন তিশার প্রেমের কারণে। এক কথায় বলতে গেলে পরকীয়া প্রেমের রেশেই বিচ্ছেদ হয়েছে হাবিব ও রেহানের। নিলয় ও শখ: নানা গুঞ্জন, অভিমান, বন্ধুত্ব, প্রেম থেকে পড়ে ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয় নিলয়-শখের জীবন। আর তাই বিয়েও করেছিলেন তারা। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত তিন মাস ধরে আলাদা থাকছেন। গোপন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেই বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। এবং সেখানে শখের ইচ্ছাটাই বেশি ছিল। তবে তারা এখনও বিষয়টি স্বীকার করে নেননি বিষয়টি। বা অফিসিয়ালি এখন বিচ্ছেদের খবর জানাননি। খুব শিগগিরই তাদের দুই জনের একজন মুখ খুলে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এই দুই অভিনয় শিল্পীরও পরকীয়া প্রেমে জড়ানো অভিজ্ঞতাই সম্পর্কে ইতি টেনেছেন বলে ঘনিষ্ঠসূত্র জানিয়েছে। তাহসান ও মিথিলা: বিয়ে বিচ্ছেদের তালিকায় সবশেষে সামিল হলেন কণ্ঠশিল্পী তাহসান খান ও মিথিলা। প্রায় মাস তিনেক তারা আলাদা থাকলেও গতকাল ২০ জুলাই তাহসান ও মিথিলা দুজনের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে তাহসান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে বিয়ে বিচ্ছেদের কথা জানিয়ে দেন। আর এই বিচ্ছেদ নিয়ে এক তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল। ১১ বছরের এই সম্পর্ক নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন তাদের ভক্তরা। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে দিয়েই বিচ্ছেদটা ঘটেই গেল। আর এর কারণ হিসেবে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সব শেষে বোঝা গেল, তিন জনপ্রিয় তারকা দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়ার প্রধান কারণ পরকীয়ার অভিযোগ। কিন্তু এই পরকীয়া জড়িয়ে শুধু যে তারকারা সংসার ভাঙছেন তা কিন্তু নয়। লেখার প্রথমেই বলছিলাম রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জরিপের কথা। এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে জরিপটা কেমন? তাদের জন্যই আবারও বলা। এ বছরের শুরুতে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী দুটি সিটি কর্পোরেশেনে প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। তালাক দেয়ার দিক থেকে এগিয়ে সবচেয়ে বেশি নারীরা। মোট তালাকের ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ স্ত্রী এবং ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ স্বামীকে দেয়া হচ্ছে। গত ৬ বছরে দুই সিটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৮৫৫। দৈনিক হিসেবে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ১৫ দম্পত্তির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। দুই সিটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত ৬ বছরে দুই সিটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ৩৬ হাজার ৩৭১টি। এর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি। স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাকের নোটিশ পড়েছে ২৪ হাজার ৮০৩ এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ ১২ হাজার ১৮। এ হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১৫টি, মাসে ৪২৯টি এবং বছরে পাঁচ হাজার ১৪৩টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। উত্তর সিটির হিসাব মতে, ২০১১ সালে ১৬ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির ৫টি অঞ্চলে সর্বমোট ২০ হাজার ৫৮৪টি তালাকের নোটিশ পড়েছে। এর মধ্যে স্বামীর পক্ষ থেকে ৭ হাজার ১৯ এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৩ হাজার ৪৬৫টি নোটিশ পড়েছে। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৪৬৫টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৬ হাজার ৬২১টি। ৩ হাজার ৫১৮ নোটিশ চলমান। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির ৫টি অঞ্চলে পড়েছে বিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭টি। এর মধ্যে স্বামীর পক্ষ থেকে ৪ হাজার ৯৯৯টি, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ হাজার ৮০৩টি নোটিশ পড়েছে। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৮টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৪ হাজার ২৩৪টি। বিচ্ছেদের ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিবাহ বিচ্ছেদে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে পরকীয়া অন্যতম। এছাড়া আধুনিকতার একটা বিষয়ও রয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনচেতা নারীর জন্য বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার অবকাশ রয়েছে।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tmq24c
July 22, 2017 at 01:58AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top