সভাপতি দিয়েই চলছে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ!

16.07.=1মো.আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে দীর্ঘ এক যুগ পর। ২০১৫ সালের ৮ জুন অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। এ সম্মেলনে কণ্ঠভোটে আলহাজ্ব পংকি খান সভাপতি ও পুণরায় বাবুল আখতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর প্রায় দুই বছর ফিরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। দুই সদস্যের এই কমিটি দিয়েই চলছিল বিশ্বনাথ উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি। কিন্তু চলতি বছরের ৮ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার সৌদি আরবে ওমরা হজ্ব পালনকালে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে বর্তমানে সভাপতি দিয়েই চলছে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ। সম্মেলনের পরপরই আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলকে এলাকায় আরও সুসংগঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্ঠা শুরু করেন।

কিন্তু হঠাৎ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করলে সভাপতি পংকি খান অনেকটা বেকায়দায় পড়েন। তারপরও তিনি একাই দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সভাপতির আপ্রাণ চেষ্ঠায় দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় সফলভাবে রমজান মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কবে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে এখনও তা বলা মুশকিল। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।

জানাগেছে, সম্মেলনের প্রায় দুই বছরেও হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের। দলীয় কোন্দল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জহুর চৌধুরী সুফিয়ানের মৃত্যুবরণসহ নানা কারণে বিগত দিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছেন। যার ফলে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে জেলা আওয়ামী লীগ হিমশিম খাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পংকি খান ও সাবেক সভাপতি মজম্মিল আলী, সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম মতছিন নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ উপজেলা পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলে দলীয় কোন্দল থাকলে দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত ও বেগবান হবে। একদিকে সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা, অন্যদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরেকটি অংশের নেতাকর্মীরা মাঠে সরব রয়েছে। উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাদের গ্রুপ বড় করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন মানে শফিক চৌধুরী কিংবা আনোয়ারুজ্জামন চৌধুরী। এখানে গ্রুপের মধ্যে রয়েছে আবার উপগ্রুপ। উভয় গ্রুপের নেতাদের রয়েছে এসব উপগ্রপ। গ্রাম থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের দেখভাল ও কন্ট্রোল করেন উপজেলা পর্যায়ের এসব নেতারা।

জানাগেছে, ২০১৫ সালের ৮ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কণ্ঠভোটে আলহাজ্ব পংকি খান সভাপতি ও পুনরায় বাবুল আখতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ওই কমিটি মেনে নিতে নারাজ আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতারা। তারা ওই কমিটি প্রত্যাখান করেন। কিন্তু কমিটি গঠনের পর আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতারা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়াভাবে বৈঠক করে আসছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজপথে তাদের কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগের কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী নেতারা জেলা ও কেন্দ্রে বিভিন্ন অভিযোগ প্রেরন করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়। জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগের ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছেনা বলে দাবি করে আসছেন পদবঞ্চিত নেতারা। ফলে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি আজ পর্যন্ত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করায় একা দলকে সামাল দিতে হচ্ছে। তবে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।

তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার পূর্বে জেলার আরও চারটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোধন হয়নি বিধায় আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগে পূর্নাঙ্গ কমিটি হচ্ছেনা। দলে কোনো গ্রুপিং নেই বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা আ.লীগের সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম মতছিন বলেন, বর্তমান কমিটি গঠনতন্ত্রমূলকভাবে হয়নি। তাই ওই কমিটির কোনো বৈধতা নেই। এ কমিটি ঘোষনার পরই আমরা প্রত্যাখান করেছি। ইতিমধ্যে আমরা দলের সভানেত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দে কাছে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি। দলের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করার জন্য কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি আহবান জানান।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2uonkyw

July 16, 2017 at 11:35PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top