কলকাতা, ১৫ জুলাই- ২১ জুলাই, ১৯৯৩। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা। মমতা তাঁর বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় মহাকরণ দখল করতে এসেছেন এমন মনোভাব নিয়ে পুলিশ তৎপর হয়। চলে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, গুলি। মৃত্যু হয় ১৩ যুবকের। ইতিহাস বলছে সেই সময়ে বাম সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব মণীশ গুপ্ত পরে হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, বহু সশস্ত্র দুষ্কৃতী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জড়ো হয়েছিল। সেই মণীশ গুপ্ত মমতা মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়ে বিধায়ক হওয়া মণীশ গুপ্ত এখন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। আর তাঁকে কেন্দ্র করেই দলনেত্রীকে এক গুচ্ছ প্রশ্নের সামনে ফেললেন তৃণমূল কংগ্রেসের আর এক রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ। ১৯৯৩ সালে সেই ঘটনার সময়ে সাংবাদিক হিসেবে কাছ থেকে দেখা ঘটনার বিবরণ আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জানিয়েছেন কুণাল। এ বার সেই রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া-সহ বেশ কয়েকটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুললেন বিতর্কিত সাংসদ কুণাল ঘোষ। শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সেই গুলি চালনার ঘটনা নিয়ে বাম সরকারের দাবিকে নাকচ করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ও দাবি তুলেছেন বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। সুপারিশ আখ্যা দিয়ে কুণালের বক্তব্য এই রকম ১) সেদিনের গণহত্যায় জড়িতদের শাস্তি হোক। ২) বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হোক। কেন প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না?? ৩) গুলি চালনার এলাকাগুলির বাহিনী ও পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারদের নাম, মহাকরণ ও লালবাজার থেকে নিয়ন্ত্রণকারীদের নাম প্রকাশ্যে আনুক সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস। আইনি ব্যবস্থা তো পরের কথা, আগে এদের সামাজিকভাবে চিহ্ণিত করে মানুষকে দেখান, কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল। ৪) যদি দেখা যায়, পরিবর্তনের পর এদের কেউ কেউ বিভিন্ন পদ পেয়েছে, তাহলে প্রকাশ্যে তার জন্য কৈফিয়ত দিক তৃণমূল। সেদিনের অভিযুক্ত মণীশ গুপ্ত যদি মমতার মন্ত্রী বা সাংসদ হন, তাহলে কি ধরে নেওয়া হবে মণীশ সেদিন ঠিক ছিলেন, ভুল ছিল মমতার। মণীশবাবু কিংবা পরে নগরপাল হওয়া গৌতম চক্রবর্তী, বা এরকম কেউ থাকলে কারণ ব্যাখ্যা করতেই হবে শাসকদলকে। কারণ শহীদ স্মরণ রাজনীতি আর অভিযুক্তদের সঙ্গে সহাবস্থানের দ্বিচারিতা চলতে পারে না। ৫) শহিদদের পরিবারের সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন মমতা। তবু, সরকারিভাবে নিহত পরিবার এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। বিলম্বের জন্য আজকের মূল্যে টাকা বা পরিবারের কাউকে চাকরি দিতে হবে। এই নজির থাকা দরকার। ৬) কমিশনের রিপোর্টে দোষীরা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না থাকলে সময় নষ্ট না করে আবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানেই না থেমে আগামী একুশে জুলাই সমাবেশে যোগ দিতে আসা তৃণমূল কর্মীদের কাছেও কিছু প্রশ্ন তোলার আবেদি জানিয়েছেন। কুণাল লিথেছেন যাঁরা ২১ জুলাই ধর্মতলা যাবেন, আজকের রাজনীতি নিয়ে নিশ্চয়ই শ্লোগান তুলবেন, কিন্তু একটা শ্লোগান যেন অবশ্যই থাকে, গণহত্যায় জড়িতদের শাস্তি চাই। শুধু শহিদ তোমায় ভুলছি না, ভুলব না এটা বিরোধী দলে থাকাকালীন ঠিক ছিল। আজ মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী। কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ে গেছে। তাহলে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? শহিদদের মৃত্যু বিচার পাবে না কেন? শহিদের আবেগে সমাবেশ হবে, রাজনীতি হবে, বিজেপি, সিপিএমকে তুলোধোনা হবে, হোক। কিন্তু, শহিদ দিবসের আসল বিষয় যেন ভুলে থাকা না হয়। দয়া করে শ্লোগান তুলুন, শহিদদের হত্যার বিচার চাই। গণহত্যায় জড়িতদের শাস্তি চাই।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tqqo8V
July 15, 2017 at 07:42PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন