কুয়ালালামপুর, ১৮ জুলাই- জীবনে একটু আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনতে বা পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে যুগ যুগ ধরে স্বদেশ ছেড়ে অচেনা-অজানা বিদেশে পাড়ি দিয়ে আসছেন বাংলাদেশের তরুণ ও যুবকেরা। প্রবাসজীবনের শুরুতেই সঙ্গী হয় জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা প্রিয় মাটি ও প্রিয় মানুষগুলো ছেড়ে দূরে যাওয়ার কষ্ট। শুধু কী মাটি ও মানুষ! স্বদেশের মায়াময় আলো, বাতাস প্রতিটি ধুলো কণাকেও পেছনে ফেলে যেতে হয় দূর দেশে। বুকভরা রাশি রাশি স্বপ্ন আর তারুণ্যের শক্তি-সাহসই হয় তরুণ-যুবক প্রবাসীর সহযাত্রী। প্রথম দিকে বিদেশে শত প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হয়। বিদেশে আগে থেকে নিজের আপনজন কেউ থাকলে তার জন্য প্রতিকূলতা মোকাবিলা করা মোটামুটি সহজ হয়। যার আপনজন থাকে না, তার জন্য বিদেশে প্রতিটা সমস্যা পাহাড় হয়ে দাঁড়ায়। সমস্যার পাহাড় ডিঙিয়ে সফলতার অমসৃণ পথে হাঁটার প্রাণপণ চেষ্টা করেন অদম্য বাংলাদেশি প্রবাসীরা। ভিন দেশের অচেনা মাটিতে হোঁচট খেতে খেতে সফলতার পথের খোঁজে জীবনসংগ্রামে এগিয়ে যান প্রবাসীরা। দেশে থাকা অবস্থায় যে সব কাজকে ছোট মনে হতো প্রবাসে এসে সে সব কাজেও নিজেকে মানিয়ে নেন। কেউ কেউ দেশে কখনো পরিশ্রমের কাজ না করেও পরদেশে এসে কঠোর পরিশ্রমে লিপ্ত হন নির্দ্বিধায়। প্রবাসে ছোট কাজ বড় কাজ-যে কাজই হোক করতে দ্বিধা করেন না। ১০ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা বা এর চেয়েও বেশি লম্বা সময় হাড়ভাঙা ঘামঝরা শ্রম দেন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে। ছুটির প্রয়োজন নেই, কাজের প্রয়োজন। যত কাজ তত বেশি টাকা। তাই শুধু চান কাজ আর কাজ! শ্রমে-ঘামে কাজে অর্থ আসে। সেই অর্থে এক সময় পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যও আসে। বুকে জমানো স্বপ্নগুলোর কিছু কিছু আস্তে আস্তে আলোর মুখ দেখে। যদিও সব স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়। শুরুতেই নিজের স্বপ্ন নয় পরিবারের সদস্যের স্বপ্ন পূরণেই ব্যস্ত থাকেন প্রবাসী। পরিবারের স্বপ্নই নিজের স্বপ্ন, পরিবারের চাহিদাই নিজের চাহিদা হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যের মুখের হাসি দেখে প্রবাসীর শরীরে কষ্টের ঘাম শুকিয়ে শীতল অনুভব হয়। কাজের কষ্টগুলো মনেও থাকে না আর। পরবাসে কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে প্রাপ্য পারিশ্রমিকেই দেশ সেই প্রবাসীর কাছ থেকে পায় রেমিট্যান্স। যে রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। যে রেমিট্যান্স দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। যে রেমিট্যান্স বাংলাদেশকে সাহস জোগায় নিজস্ব অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্প শুরু করতে। যে রেমিট্যান্স ভিশন ২০২১ বা ভিশন ২০৪১ পূরণের স্বপ্ন সারথি। পরিবারের জন্য, দেশের জন্য ভিন দেশে এই কঠোর সংগ্রামরত অবস্থায় যদি হঠাৎ করে কোনো প্রবাসী অভিবাসন আইনে আটক হয় তার কষ্টের ধরন কী রকম হয়, তা সেই-ই সবচেয়ে ভালো জানেন; যে ভুক্তভোগী। সংশ্লিষ্ট দেশে অন্য কোনো সামাজিক অপরাধ না করেও শুধুমাত্র ভিসার কারণে যে সব প্রবাসী আটক হন, এর মধ্যে প্রবাসে যাদের কোনো আপনজন থাকে না, তার অবস্থা কি হয়? বাইরে আপনজন থাকলে দৌড়াদৌড়ি করে আটক হওয়া প্রবাসীর ভালো-মন্দ খোঁজখবর নেওয়া যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ ও চেষ্টা তদবির করে আটক হওয়া প্রবাসীকে ছাড়ানো বা দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। যে প্রবাসীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব থাকে না তার অবস্থা হয় সমুদ্রের মাঝখানে ভাসার মতো। যেখান থেকে কূলকিনারা অতি সহজে দেখা যায় না। প্রবাসে স্বজনহীন এ রকম বিপদে থাকা প্রবাসীদের খোঁজখবর নেওয়ার দায়বদ্ধতা বাড়ুক আমাদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালেই অকূল দরিয়ায় হাবুডুবু খাওয়া প্রবাসীরা কূলে উঠতে পারেন সহজে। দূর প্রবাসে বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় রাষ্ট্র আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসুক-আজকের লেখায় এটাই একমাত্র প্রত্যাশা। পুনশ্চ: সম্প্রতি (১ জুলাই থেকে) মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ধরপাকড় অভিযানে আটক হওয়া সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা চিন্তা করে এ লেখা। আর/০৭:১৪/১৮ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2u4c4Xn
July 18, 2017 at 02:19PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top