কলকাতা, ১৬ জুলাই- গুলশান লিংক রোডে রিকশা ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন বয়স্ক এক নারী। পা ভেঙে যায়, মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। দুর্ঘটনার শিকার ওই নারীর সাহায্যে তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসেনি কেউ। ও পথেই যাচ্ছিলেন রাহাত হোসেন। তিনি দ্রুত মহিলার দিকে এগিয়ে যান। তার প্রচেষ্টায় সে যাত্রা বেঁচে যান মহিলাটি। এভাবেই গত দুই বছর ধরে দুর্ঘটনায় শিকার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রাহাতের ক্রিটিকালিংক। ক্রিটিকালিংক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মাধ্যমে রাহাত হোসেন সমাজ বদলে ভূমিকা রাখার জন্য পেয়েছেন দ্য কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড ২০১৭। এই পুরস্কার পাওয়া ৬০ জন তরুণই ছিলেন কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশের। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরেক তরুণ সাজিদ ইকবাল। ২৯ জুন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে এই পুরস্কার নিয়েছেন ক্রিটিকালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী তরুণ রাহাত হোসেন। ক্রিটিকালিংকের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে রাহাত হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছি। অনেকেই সেদিন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছুটে এসেছিলেন। তবে তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না বলে উদ্ধারে অনেক সময় লেগেছে। ফিরে আসার পর এমন বোধোদয় হয় আমার। ভাবলাম একটি সংগঠন গড়ে তুলে যদি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে ভালোভাবে কাজটি সবাই মিলে করা যাবে। সেই ভাবনা থেকেই ক্রিটিকালিংকের স্বপ্ন মনের মধ্যে দানা বেঁধে উঠেছিল। এরপর রাহাত নিজের আগ্রহের কথা জানালেন ফেসবুকে স্ট্যাটাসে। বেশ সাড়াও পেলেন। আগ্রহীদের থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে শুরু করলেন প্রশিক্ষণের কাজ। তাদের নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা, আগুন থেকে রক্ষা ও ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। কিছুদন পর ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলো। সেখানে জেনিফার ফেরেলের সঙ্গে পরিচয়। দুজনেই দুর্ঘটনায় আহত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান, তাঁদর সাহায্য করতে চান। কিছুদিন আলাপের পরে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি ভিত্তিতে প্রথামিক সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করবেন। যাতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। এরপরই বাস্তব রূপ নিলো ক্রিটিকালিংক। রাজধানীর গুলশান, বনানী, রামপুরা-বনশ্রী, বারিধারা-বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পুরোনো ঢাকায় ক্রিটিকালিংক কাজ করছে। প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৩০-৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল আছে। প্রত্যেক দলে দুজন টিম লিডারের একজন নারী, অন্যজন পুরুষ। মোহাম্মদপুর টিমে আছেন তানভীর ও তাসনীম। একজন জগন্নাথ ও অন্যজন বেসরকারি ডেন্টালের ছাত্রী। তানভীর বললেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র আমরা সেখানে পৌঁছে যাই। তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে সাহায্য করি। রাহাত জানালেন, যে কোনো দুর্ঘটনায় তারা স্বেচ্ছাসেবক পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। আরো আহত হলে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় আহত খেলোয়াড় ও দর্শকদের সেবা দেওয়ার জন্য তারা স্টেডিয়ামে হেলথ বুথও স্থাপন করেন। কেবল চিকিৎসা সেবা নয়, মানবিক কাজেও এগিয়ে যাচ্ছে ক্রিটিকালিংক। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোরার আঘাতের পর মহেশখালী দ্বীপে ত্রাণ বিতরণ করেছে ক্রিটিকালিংক। তাছাড়া প্রতি বছর দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণও করা হয় এই সংগঠন থেকে। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি ক্রিটিকালিংক থেকে সেবা নিতে পারেন দুইভাবে। এক কল সেন্টারে ফোন করে (০৯৬৭৮৭৮৭৮৭৮) এবং ক্রিটিকালিংক অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ক্রিটিকালিংক (Criticalink) অ্যাপ নামিয়ে শুরুতেই নিবন্ধন করতে হবে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে। এরপর অ্যাপটিতে ঢুকলেই কল করা যাবে সাহায্যের জন্য। দুর্ঘটনার তথ্য জানানোর জন্য রিপোর্ট অ্যাকসিডেন্ট বিভাগে গিয়ে তথ্য দিতে হবে। সাহায্য চাওয়া ব্যক্তি নিজেই আহত নাকি প্রত্যক্ষদর্শী, কীভাবে আহত হয়েছেন মূলত এ ধরনের তথ্যই জানাতে হবে। ঘটনাস্থলের ঠিকানা জানা না থাকলেও সমস্যা হবে না। গুগল ম্যাপসের সাহায্যে খুঁজে পাওয়া যাবে কোন জায়গা থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এরপর বার্তা চলে যাবে ক্রিটিকালিংকের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন তারা। এই মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কাছের থানাতেও জানানো যাবে দুর্ঘটনার খবর। একই সঙ্গে জানা যাবে সবচেয়ে কাছে রয়েছে কোন হাসপাতাল। অ্যাপ নামানোর ঠিকানা: goo.gl/Rqlnsm ক্রিটিকালিংকের এই অ্যাপ জাতীয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন পুরস্কার ও ডেভলপার সম্মেলন-২০১৫ জিতেছে। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের সম্মেলনে ক্রিটিকালিংক স্বাস্থ্য বিভাগে ১৭৮টি দেশ পেছনে ফেলে সেরা পুরস্কার লাভ করেছে। রানির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া প্রসঙ্গে সাথে আলাপকালে রাহাত হোসেন বলেন, ব্রিটেনের রানির সাথে প্রথম দেখা, এটা ছিল অপ্রত্যাশিত, অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি। রানির সাথে সরাসরি দেখা, রানির হাত থেকে অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার অনুভূতিটা এখনো মনে করলে নিজের ভিতর অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। নিজের দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মতো প্রশান্তি সত্যি আর কিছুতেই নেই।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tY5eRy
July 16, 2017 at 07:41PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top