ঢাকা::
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে গতকাল সোমবার উত্তরাঞ্চলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত রোববার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গতকাল কয়েক দফা বৃষ্টিতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজারে অপরিবর্তিত থাকলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়ে চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।এগুলো হলো সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ও সাঘাটা, ফুলছড়ির উড়িয়া এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর। এ নিয়ে জেলাটির ১৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলো। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তারা আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গত এলাকায় এখনো ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানিও বেড়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন আমির আলী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১২০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারীরডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নে তিস্তা নদীবেষ্টিত প্রায় ৩০টি গ্রাম ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১০ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সদর, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, তিস্তাপারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করার কথা বলা হয়েছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারের আনুমানিক ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো গঙ্গাচড়া সদর, কোলকোন্দ, নোহালী, আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। জেলার কাজীপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও সদর উপজেলার প্রায় ৩৬টি ইউনিয়নের নিম্ন
াঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় নতুন করে আরও সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলায় বন্যাকবলিত মোট গ্রামের সংখ্যা ৫৭টি। এসব গ্রামের অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সিলেটের সুরমা নদীতে পানি বাড়লেও কুশিয়ারায় কমেছে। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বলেন, যেহেতু পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাই আবহাওয়ার ভালো-মন্দের ওপরই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতি নির্ভর করছে।
মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার হাওরসংলগ্ন এলাকায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী আছে।
জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মেলান্দহ-মাহমুদপুর সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জেলার সরিষাবাড়ীতে গত দুই দিনে যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীর পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ২৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2v5PeMF
July 11, 2017 at 08:13AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন