ঢাকা, ২৯ জুলাই- দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। অভিনয়ের পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি একটি এফএম রেডিও স্টেশনে ক্রিকেটের ধারাভাষ্যও দেন। বাবা গোলাম মুস্তফার মতো কবিতা আবৃত্তিতেও আছে তার যথেষ্ট সুনাম। আর একসময় নিয়মিত নাট্যমঞ্চ কাঁপিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গুণী এই শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি বাংলা। সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো- পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজক হিসেবে কাজ করতেন আজকের সুপরিচিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার মা। সেই সুবাদে শৈশবে মায়ের সঙ্গে বেতারে নাটক করেছেন। ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, আমার সবকিছুই প্রায় একসাথে হয়েছে। টেলিভিশনে নাটক, ঢাকা থিয়েটারে সেলিম আল দ্বীনের নাটক জন্ডিস ও বিবিধ বেলুনে অভিনয়, আর তার বছর খানেকের মধ্যে ঘুড্ডি চলচ্চিত্রে কাজ। একটানা ২৫ বছর তিনি কাজ করেছেন মঞ্চে। ঢাকা থিয়েটারে সুবর্ণা মুস্তাফার অভিনীত অনেক চরিত্র এখনো অনেকের মনে ভাস্বর হয়ে আছে। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ঢাকা থিয়েটারে যারা কাজ করছেন, তারা আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার মেন্টরিং এখানে। আমি থিয়েটার করা শিখেছি নাসিরউদ্দীন ইউসুফের হাত ধরে। কিন্তু একটা সময় কাজ করতে-করতে মনে হচ্ছিল, আমার আরেকটু অ্যাডভেঞ্চারাস হওয়া দরকার। আর আমরা এক ধরনের নাটক করছিলাম - ন্যারেটিভ, সঙ্গীত-নির্ভর। সেলিম আল দ্বীন লিখছিলেন। আমার তো গানের গলা সেই রকম, মানে গান গাইলে ভূমিকম্প হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে মনে হলো আর না করি। কোন মাধ্যম কাজ করে আনন্দ বেশি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার আসলে অভিনয় করেই ভালো লাগে। মাধ্যম যেটাই হোক, অভিনয় করেই ভালো লাগে। আনন্দ দিয়েছে সবচেয়ে বেশি টেলিভিশন। টেলিভিশনে আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। ৩/৪ ক্যামেরার সামনে কাজ করেছি। আর কাজ শিখেছি মঞ্চে - চরিত্র কিভাবে নির্মাণ করতে হয়। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ হলো বেতারে। আর একজন অভিনেতার আল্টিমেট লক্ষ্য হলো সিনেমা-দ্য বিগ স্ক্রিন। মঞ্চ-টিভির মত চলচ্চিত্রে ততটা দাপুটে অভিনেত্রী নন- এমন সমালোচনা প্রসঙ্গে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, যারা বলে তারা মূর্খ। কারণ আমি যে কয়টি বাণিজ্যিক সিনেমা করেছি ৯৫ শতাংশ সুপার-ডুপার হিট। তবে সিনেমায় কাজ করা অনেক কঠিন। এত কষ্ট করতে হয়, আমি আমার বাবা গোলাম মুস্তাফাকে দেখেছি, পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন হুমায়ূন ফরীদিকে দেখেছি। লম্বা সময় দিতে হয়। কিন্ত আমার নিজের জন্য সময় দরকার। সুবর্ণা বলেন, আমি শর্টকার্টে কোনো কাজ করতে পারি না। যেটা করবো শতভাগ দিয়ে করবো। চলচ্চিত্রে শতভাগ দিয়ে কাজ করাটা খুব কঠিন। যারা করেছেন তারা নমস্য। বিয়ে বিচ্ছেদ ও নতুন সম্পর্ক প্রসঙ্গে সুবর্ণা মুস্তাফার অভিনয়ের শুরুর দিনগুলোতে তাকে ঘিরে সমসমায়িক অভিনেতাদের নিয়ে রোমান্টিক সম্পর্কের গুঞ্জনের খবর বেরুতো পত্রিকার পাতায়।দর্শকদের মধ্যেও বিশেষ করে তাকে আর আফজাল হোসেনকে ঘিরে প্রেমের অনেক গল্প শোনা যেত। রাইসুল ইসলাম আসাদকে ঘিরেও ছিল এমন গুঞ্জন। এ বিষয়ে সুবর্ণা বলেন, আমি সব সময়ই এটা এনজয় করেছি। তখনও করেছি, এখনও। আমাকে, আফজাল এবং ফরিদী- তিনজনকে ত্রি-রত্ন বলা হতো। আফজাল এবং আমার বন্ধুত্ব তো ছিলই। কেন বলবো যে ছিল না? ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই আমরা একসাথে কাজ করেছি। শুধু টিভিতে আমাদের দেখা হতো, তা না। আমাদের ঢাকা থিয়েটারেও দেখা হতো। কিন্তু সেটা কী রোমান্টিক পরিণতির দিকে যাচ্ছিল? এ প্রশ্নের পরিষ্কার কোনো জবাব মেলেনি। সুবর্ণা বলেন, জানি না। আমাদের বয়স তখন ছিল খুবই কম। কাজ করতে গিয়ে প্রেম করতে হবে, এটা কি একটা ব্যাপার? আফজালের সাথে, নূর ভাইয়ের সাথে আমার জনপ্রিয় অনেক নাটক আছে। ফরিদীর সাথে অনেক ভালো কাজ আছে। সুবর্ণা-আফজাল সম্পর্ক বিয়ের পরিণতিতে পৌঁছায় কিনা এ নিয়ে যখন জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই তেমনই সময় অনেকটা হঠাৎ করেই হুমায়ূন ফরিদী ও সুবর্ণা মুস্তাফা বিয়ে করেন। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর তারা সংসার করেন। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদের খবর সূবর্ণা মুস্তাফা নিজেই মিডিয়াকে জানান। এর পরপরই আলোচনা শুরু হয় তার দ্বিতীয় বিয়ের খবরে। তবে সুবর্ণা মুস্তাফা মনে করেন, ভক্ত এবং দর্শকরা তার বিচ্ছেদ এবং নতুন বিয়ে নিয়ে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দেখিয়েছে মিডিয়ায় তার কাছের লোকজনই। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ার বয়স তো অনেক আগেই পার হয়ে গেছে দীর্ঘদিনের বিয়ের বিচ্ছেদ এবং পরে বয়সে ছোট সিনেমা নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে প্রসঙ্গে নিজের সাথে কতটা বোঝাপড়া করতে হয়েছিল সে সময়? এমন প্রশ্নে এই অভিনেত্রী সোজাসাপ্টা জানান, কোনো বোঝাপড়া করতে হয়নি। কারণ যখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর ফরিদী একসাথে থাকবো না, থাকিনি। যখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর সৌদ বিয়ে করবো, করেছি। এত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ার বয়স তো অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। আমার ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই ব্যক্তিগত রাখতে পছন্দ করি। একান্ত ব্যক্তিজীবন নিয়ে অন্যের আগ্রহকে তিনি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাই বলেন, হুমায়ূন ফরিদী আর আমি যখন বিয়ে করেছি তখন তো দর্শকদের অনুরোধে করিনি। তাহলে বিচ্ছেদের সময় দর্শকদের অনুমতি নিতে হবে বা কাউকে স্যরি বলতে হবে কেন? আবার দশর্কদের কৌতূহলকেও তিনি সম্মান দেখিয়ে বলেন, তবে হ্যাঁ একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আমি জানি একধরনের কৌতুহল দর্শকদের থাকবেই। তাই চেষ্টা করেছি সম্পর্কগুলো সম্পর্কে ওপেন থাকতে। আমি নিজেই বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিয়ের খবর মিডিয়াকে জানিয়েছি। কারণ আমি তো প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে কিছু করছি না। আর দ্বিতীয় বিয়ে যে পৃথিবীতে এই প্রথম ঘটলো তা নয়, আর কনের চেয়ে বরের বয়স কম এটাও প্রথম ঘটনা নয়। সুবর্ণা বলেন, এখন হুমায়ূন ফরিদীর কাজ নিয়ে কথা বলতে চাই, ব্যক্তি ফরিদী সম্পর্কে আমি খুব অল্পই বলবো যতটুকু বলতে চাই। কারণ তিনি তো নেই তার স্বপক্ষ সমর্থন করতে বা দ্বিমত প্রকাশ করতে। তাই তাকে নিয়ে কথা বলাটা অশোভন। তার সাথে ২২ বছর ছিলাম একসাথে। আর থাকার মত পরিস্থিতি ছিল না, তাই ছিলাম না। তবে যে বিষয়টি আমাকে ভাবায়, হুমায়ূন ফরিদীর মত এত বড় মাপের একজন অভিনেতা কেন মারা যাবে এত অল্প বয়সে? সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত এবং তার স্বামী নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র সেন্সর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। গ্রাম বাংলার জীবন-প্রকৃতি নিয়ে প্রেম-নির্ভর বাণিজিক এই সিনেমাটি দর্শকদের হলে টেনে আনতে পারবে এমনটাই তিনি বিশ্বাস করেন। ভবিষ্যতে তার নিজের চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছার কথা জানান তিনি। জীবনের এত চড়াই-উতড়াই নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই বলে অভিনয়ের বাইরে তিনি নতুন একটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন। ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ থেকে এখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে তার কণ্ঠ শোনা যায় রেডিও ভূমিতে। এমএ/ ০৯:৪৪/ ২৯ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uHINSu
July 30, 2017 at 03:46AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top