বর্ধমান, ২৫ জুলাই- দেশের সর্বোচ্চ আসন প্রাপ্তি আপন আত্মীয়ের, তবুও আনন্দের মধ্যেও কোথাও যেন একটি কিন্তু রয়ে গেল বর্ধমানের বিসিরোডের কলি পরিবারের কাছে। আজ সকাল থেকে গোটা দেশ যখন তাকিয়ে রয়েছে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে, তখন বর্ধমানের এই কলি পরিবারের গুটিকয়েক সদস্য মাঝে মাঝেই কাজের ফাঁকে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন। দেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে আজ যিনি শপথ গ্রহণ করলেন সেই রামনাথ কোবিন্দ এই কলি পরিবারের অত্যন্ত নিকট আত্মীয়। রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে কোবিন্দজীর অনেক আত্মীয়ই ডাক পেয়েছেন অনুষ্ঠানস্থলে থাকার। কিন্তু ডাক আসেনি তার এই বড়-শ্যালকের বাড়িতে। কিন্তু তাতে কি? সকাল থেকেই দফায় দফায় কাজের ফাঁকে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন গঙ্গাদেবীরা। আজকের এই আনন্দ আর গর্বের কোনো সীমা পরিসীমা নেই বর্ধমান শহরের বিসি রোডের বাসিন্দা প্রয়াত ওমপ্রকাশ কলির পরিবারের সদস্যদের। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাড়িতে লোকের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় রীতিমত মা গঙ্গা কলি এবং দুই ছেলে বরুণ ও অরুণ কলির ছোট এক চিলতে বাড়িতে পা ফেলার জায়গা নেই। এই কলি পরিবারের জামাই আজ দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এই কলি পরিবারের মেয়ে সবিতা কোবিন্দ আজ দেশের ফার্ষ্ট লেডি। ১৯৭৪ সালের ৩০ মে রামনাথ কোবিন্দ প্রয়াত ওমপ্রকাশ কলির সেজো বোন সবিতা কলিকে বিয়ে করেন। স্বাভাবিকভাবেই দুটি পরিবারের মধ্যে হৃদ্যতাও বেশ ভালই গড়ে ওঠে। যদিও সেই জায়গাটা ছিল দিল্লি। এরপর ব্যবসায়িক কারণে ওমপ্রকাশ কলি বর্ধমান শহরে চলে আসেন। বর্ধমান শহরের বিসিরোডে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। প্রায় ২০ বছর আগে মারা যান ওমপ্রকাশ কলি বর্তমান রাষ্ট্রপতির বড় শ্যালক। ওমপ্রকাশবাবুর ছোট ছেলে বরুণ কলি জানিয়েছেন, তাদের ইমিটেশনের ব্যবসা রয়েছে। আর এই ব্যবসার কারণেই তাকে প্রায়শই দিল্লি যেতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, সেজো পিসেমশাই রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর আগে দিল্লির বাড়িতে। কথাও হয়েছিল। ওমপ্রকাশবাবুর স্ত্রী গঙ্গা কলি জানিয়েছেন, গত শনিবারই ননদ সবিতা কোবিন্দ তাকে ফোন করে সুখবরটা দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে বড় বৌদি গঙ্গা কলি মিঠাই খাওয়ানোর কথা বলেছিলেন ননদকে। বৌদি আর ননদের মধ্যে প্রায় ১০ মিনিটের কাছাকাছি ফোনে অনেক কথাই হয়েছিল। তারপর মঙ্গলবার সকাল। সকাল থেকেই গঙ্গাদেবী এবং ছোট ছেলে বারবার টিভির সামনে এসে দেখেছেন তাদের সেই পরম আত্মীয় আজ দেশের প্রধান। গোটা দেশের চালিকাসনে বসতে চলেছে। আবেগ বিহ্বল হয়ে চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠেছে গঙ্গাদেবীর। যদি আজ তিনি (ওমপ্রকাশবাবু) বেঁচে থাকতেন, অনেক আনন্দ পেতেন। তার প্রিয় বোন আজ থেকে ভারতবর্ষের প্রথম মহিলার সম্মানে সম্মানিত হতে চলেছেন। গঙ্গাদেবী জানিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় ২২ বছর আগে রামনাথ কোবিন্দ এসেছিলেন তাদের এই বাড়িতে। ওই বছরেই তিনি দুবার এসেছিলেন। প্রথমবার এসে এক রাত কাটিয়েও গেছেন কলি পরিবারের এক চিলতে বাড়িতে। আর্থিক অবস্থা তখনো কলি পরিবারের স্বচ্ছল ছিল না। আজও নেই। তবুও ননদাইকে আপ্যায়নে তিনি সামর্থ্যের ত্রুটি করেননি। কোবিন্দ সাহেব রুটি খেতে ভালবাসেন। তাই রাতে তিনি নিজের হাতে রুটি আর ডাল সঙ্গে কিছু সব্জি রান্না করেছিলেন। নিরামিষাশী কোবিন্দ সাহেবের জন্য সেদিন ভাতও রান্না হয়েছিল কিন্তু তিনি রুটিই খেয়েছিলেন। গঙ্গাদেবী জানিয়েছেন, ভদ্র, শান্ত স্বভাবের মানুষ। দ্বিতীয়বারের জন্য এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেবার আর বেশিক্ষণ থাকেননি। মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েই বিমানের সময় হয়ে যাওয়ায় চলে গেছিলেন সেদিনের সাংসদ রামনাথ কোবিন্দ। আজ তিনিই দেশের রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে তার আত্মীয়রা ডাক পেলেও অবশ্য বর্ধমানের এই কলি পরিবারে আসেনি কোনো আমন্ত্রণ। তাতেও খেদ নেই এই কলি পরিবারে। যদি কখনো ডাক আসে রাষ্ট্রপতি ভবনে? ডাক এলে ভাববেন জানিয়েছেন গঙ্গাদেবীরা। আর যদি স্বপ্নের মতই কখনো খোদ দেশের রাষ্ট্রপতি তার এই বড়শ্যালকের বাড়িতে এসে হাজির হয়, তখন? গঙ্গাদেবীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বরুণ কলি জানিয়েছেন, উনি আসবেন না। আসতে পারবেন না। প্রোটোকলে বাধবে যে। আর মঙ্গলবার যখন দেশের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের সেন্ট্রাল হলে রামনাথ কোবিন্দ শপথ নিলেন তখন গঙ্গাদেবী আর বরুণ কলিরা বললেন, দেশের জন্য ভাল কাজ করুন এটাই আমরা চাই।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tAaz0j
July 26, 2017 at 07:44AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন