প্রিটোরিয়া, ৩১ জুলাই- ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ও আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সম্পদশালী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬০এর দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি লাভের পর বানিজ্যের উপযোগী স্থল হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে নিবীড় অরণ্য ও বিস্তৃীণ তৃণভূমির এই দেশটির। প্রথমে ইউরোপের অভিবাসীরা দেশটিতে ব্যবসায়ীক গোড়াপত্তন করে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়ার বড় একটি অংশ আফ্রিকার বাজারে বেশ দাপিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকায় অথনৈতিক মন্দা ও খনি ব্যবসায় দূরাবস্তা দেখা দিলে অথনীতিতে ধীরগতি নেমে আসে। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত হত্যা, হামলা ও ডাকাতির মত ঘটনা বেড়েই চলেছে দেশটিতে। বিশেষ করে যারা প্রবাসী ব্যবসায়ী তাদেরকে লক্ষ্য করে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে দুর্বৃত্তরা। প্রাণের ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সেখানকান অবস্থানরত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। আর এই নির্মমতার সবচেয়ে বড় শিকার সেখানকার প্রবাসী ব্যবসায়ী বাংলাদেশিরা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপর হামলা, হত্যা এবং অপহরণ এখন সেখানকার নৈমাক্তিক ঘটনা বলে জানান ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন। যিনি দ.আফ্রিকায় ব্যবসা করতে গিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে হামলার শিকার হয়েছেন ছয় বার।ডাকাতদের উৎপাত আর সেখানকার বাংলাদেশি দালালদের রেসারেসির শিকার হয়ে প্রাণনাশের ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে চলে এসেছেন বাংলাদেশে। ২০১৪ সালে গ্রামের এক বন্ধুর সন্ধানে ঢাকার এক দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে আফ্রিকার উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছিলেন।প্রথমে দুবাই তারপর কেনিয়া, ইথিওপিয়া,নাইজার,মোজাম্বিক হয়ে দ.আফ্রিকা।অতিরিক্ত মুনাফা আর নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাবার চাষের জমি ও বসতভিটার কিছু অংশ বিক্রিও করেছিলেন। তারপর সেখানে গিয়ে জোহানেসবাগের প্রত্যন্ত গ্রামে মুদির দোকান দেন। বাংলাদেশি টাকায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় একটি মুদির দোকান করে নিবিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকমাস পর হঠাৎ কিছু লোক তার দোকানে এসে চাঁদা দাবি করে, দোকানের মাল-পত্র ভাংচুর করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর কিছু দিন পরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র আরেক প্রবাসীর দোকানে এসে হামলা চালায়। কয়েকটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। এভাবে প্রতি মাসে কোন না কোন ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা ও চাঁদা আদায় করে তারা। কেউ না দিতে চাইলে গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেয়। তবে এখন আর হুমকি নয় সরাসরি গুলি করে হত্যা করছে। ৯০ এর দশকের পর দেশটিতে ব্যবসায়ীক অবস্থান ও অতিরিক্ত মুনাফা থাকায় দ. আফ্রিকায় পাড়ি জমাতে থাকে প্রচুর বাংলাদেশি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা অজন করা শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্ভব।কিন্তু বতমানে দেশটির অথনৈতিক অবস্থা আর মুদ্রাস্ফিতি কারণে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও অপহরণের মত ঘটনা বেড়েই চলেছে। এছাড়া দুবৃত্ত ও দেশিয় দালালদের চাটুকারিতায় ব্যবসায়ীক পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান সেদেশের অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীরা।আর এ কারণে প্রতিনিয়ত হত্যার মত জঘন্য ঘটনা ঘটছে। গত ২৭ মাচ, সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা না দিতে পারায় দ. আফ্রিকার লিমপোক শহরে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিমমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় নোয়াখালীর ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান সোহেলকে। ওই প্রতিষ্ঠানে কমরত তার খালাতো ভাইকে গুলি করে আহত করে সন্ত্রাসীরা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল হক সাগর নামের আরেক ব্যবসায়ীকে গত ৯ জুন গুলি করে হত্যা করে দুবৃত্তরা। গত ৯ জুন দ. আফ্রিকার ডারবানে প্রবাসী বাংলাদেশি তাইজুল ইসলামের দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে কালো সন্ত্রাসীরা। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২০ জুন প্রিটরিয়ায় মাউপানি লোকেশনে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতদের গুলিতে নিক্সন সাহা নামে নোয়াখালির এক প্রবাসী ব্যবসায়ী খুন হন।গত ১৩ জুন ডারবান শহরে নিজ ব্যবসা্ প্রতিষ্ঠানে কুমিল্লার প্রবাসী ব্যবসায়ী মাহবুব নামের আরেক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে দুবৃত্তরা। এর আগে ২০১৫ সালে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সুমন রায়,নোয়াখালীর আবরার হোসেন, হবিগঞ্জের কায়সার এলাহি নামে বাংলাদেশি প্রবাসীকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ববরভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।এভাবে প্রতি বছর দ. আফ্রিকায় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হত্যা করা হচ্ছে অনেক অভিবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে। ২০১৬ সালে এক তথ্যে বলা হয়েছে যে, নিজ কর্মস্থলে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুধু সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় তিনশ অধিক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। এছাড়া ব্যবসা ও নিজ দেশের নাগরিকদের বাকবিতন্ডা ও আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছে আরও একশো মত প্রবাসী বাংলাদেশি। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, ১৭ টি প্রদেশে ২০ লাখেরও বেশি অভিবাসী দ. আফ্রিকায় অবস্থান করছে। যারা নানা সময়ে ভাগ্যের অন্বেষণে সেখানে দ. আফ্রিকায় এসেছে। যাদের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে।যারা দ. আফ্রিকার কিম্বালী,জোহানেসবাগ, প্রিটোরিয়া,লুসিক্রিসি, কেপটাউন এবং ডারবানের মত বড় বড় শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে জীবিকা র্নিবাহ করে। জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদকদ্রব্য সংস্থার মতে, দ. আফ্রিকায় হত্যা ও ধষনের মত গুরুতর অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। তবে এ অবস্থার সবচেয়ে বড় কারণ দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশটির বহু ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে হত্যা ও হামলার মতো জঘন্য পথ বেছে নিচ্ছে । মৃত্যুপুরী নামে পরিচিত সাউথ আফ্রিকার বতমান অথনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। অথনীতিতে শক্তিশালী এই দেশটি বতমানে নিজ দেশের অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে প্রবাসীদের দুরাঅবস্থা অবননীয়। সুদুঢ় ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী উজ্জল জানান, এখানে টাকার মান এবং বেচাকেনার পরিমান যেকোন দেশের থেকে বেশি। লাভও অনেক। একজন ব্যবসায়ী মাসে ইচ্ছা করলে খরচ বাদ দিয়ে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা উপাজন করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোন কনস্যুলেট অফিস বা ভিসা আবেদন কেন্দ্র না থাকায়। শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকার হাই কমিশনের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এছাড়া তাইওয়ানে দ.আফ্রিকার কনস্যুলেট থেকে ভ্রমন ভিসা নিয়ে দ. আফ্রিকায় যাওয়া যায়। কিন্তু এতসব দৌরাত্ব ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া যাতে না পোহাতে হয় সেজন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন দালাল বা এজেন্টদের মাধ্যমে দ.আফ্রিকার পাশ্ববতী কোন দেশের ভ্রমন ভিসা নিয়ে সেদেশে প্রবেশ করছে বাংলাদেশিরা। দ. আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবী, দু-দেশের সরকার যদি কূটনৈতিক পযায়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে বৈধভাবে সেদেশে অনেক বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান হতে পারে। এছাড়া দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় দেশ লাখ বাংলাদেশির ভাগ্য অনেকটাই সুনিশ্চিত হতে পারে। তাছাড়া বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারলে সরকার এবং দেশের অথনীতির নতুন গতিপথ তৈরী হতে পারে। এমএ/ ১১:০৪/ ৩১ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tX2vLb
August 01, 2017 at 05:07AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন