মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ একাংশ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তিন উপজেলা জুড়ে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তায় দলের কর্মী ও সমর্থকরা।
সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগেই সরকারি দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভানেত্রী পুনরায় হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলিত বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রথম ধানমন্ডিতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীকে বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর এমন ঘোষণার পরপরই সারাদেশে ন্যায় সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নড়েচড়ে বসেন। প্রাকাশ্য না হলেও তারা নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের লবিং।
গতবারের মতো এবারও সিলেট-২ আসনে কে পাবেন আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কে হবেন সিলেট-২ আসনের নৌকার কান্ডারী? দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার হাতে নৌকার দায়িত্ব দেন। না কি গত নির্বাচনের মতো সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে আবারো দেওয়া হবে মনোনয়ন তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চলছে গুঞ্জন।
বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। এই আসনকে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সঙ্গে সমঝোতায় এখানে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ প্রার্থী হননি। বরাবরই এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য লড়াই করেন। আর এতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে লড়তে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিন উপজেলায় তাদের অনুসারীরা নিজ নিজ নেতার মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ২৪ ঘন্টার রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত শফিকুর রহমান চৌধুরী। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিক চৌধুরী। তার অনুসারী নেতা কর্মীরা মনে করেন ক্লীন ইমেজের ত্যাগী এই নেতার মনোনয়ন না পাওয়ার কোন কারণ নেই।
শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এমপি হওয়া সাবেক এমপি হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচিত শফিক চৌধুরীর জনপ্রিয়তা, দলে অবস্থান এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। দলের প্রয়োজনে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে রাত-দিন পরিশ্রম করে দলের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি বর্তমানে এমপি না হলেও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করে আসছেন। তার নির্বাচনী এলাকা প্রতিদিন তিনি চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতিও লক্ষণীয়।
অপর দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বহিঃবিশ্বের বাংলাদেশি রাজনীতিতে খুবই পরিশ্রমী নেতা। নির্বাচন করার তাড়না থেকেই বেশ কিছুদিন ধরে তিনি নিয়মিত এলাকার আসছেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন। এলাকায় তরুন নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ ইতোমধ্যেই তার বলয়ে যোগ দিয়েছে। তিন উপজেলায় নিজস্ব বলয় ঠিক করতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া ব্রিটেনে অবস্থানরত শেখ রেহানার স্নেহধন্য হিসেবে তিনি রয়েছেন পুরো আলোচনায়। একজন অমায়িক, ভালো ও পরিশ্রমী সংগঠক হিসেবে তার দেশে ও বহিঃবিশ্বের রয়েছে সুনাম।
জানা যায়, দল আন্তপ্রাণ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সর্বশেষ দলীয় সম্মেলনে দলের কোন পদ পাওয়ার ব্যাপারে তদবির লবিং করেননি। উদ্দেশ্য সংসদ নির্বাচনে দলের টিকেট চাওয়া।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে শেষ মুহূর্তে লড়াই জমে ওঠার আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আনোারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নবীন ও প্রবীন নেতাকর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয় ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট-২ আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী। ১৯৮৩ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনামুল হক চৌধুরী (বীর প্রতিক) এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোয়ন পেয়ে মকসুদ ইবনে আজিজ লামা এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ না করায় একক প্রার্থী হিসেবে এম ইলিয়াস আলী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান এমপি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এম ইলিয়াস আলী এমপি নির্বাচিত হন, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি নির্বাচিত হন।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2sM7c62
July 11, 2017 at 09:28PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন