লস অ্যাঞ্জেলস, ০৫ আগষ্ট- গতকাল মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত ছবি যাব হ্যারি মেট সেজল। এই ছবি প্রযোজনা করেছে শাহরুখের রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট। এর প্রচারে এই নায়ক শুরু থেকেই কোনো কমতি রাখেননি। ছবি মুক্তির আগের দিন প্রচারের শেষ চমক হিসেবে ছিল জনপ্রিয় মার্কিন সংগীততারকা ডিপলোর সঙ্গে কিং খানের ফুর গানের ভিডিও। ইমতিয়াজ আলীর যাব হ্যারি মেট সেজল-এর জন্য এই বিশেষ প্রমোশনাল ভিডিওটি তৈরি। আর এই ভিডিওটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশি তরুণ মাহফুজুর পাটোয়ারি। ইউটিউবে রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট ও সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার পোস্ট করা ভিডিওর বর্ণনায় তাঁকে পাওয়া যাবে সোমি পাটওয়ারি নামে। ফুর শিরোনামের এই গানের টিজার প্রকাশ পায় ১ আগস্ট। তখন থেকেই মার্কিন র্যাপার, সংগীত প্রযোজক, গায়ক ও ডিজে ডিপলোর সঙ্গে বলিউড বাদশার এই গানের পুরো ভিডিও দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। ছবি মুক্তির আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ফুর গানের ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটি মুক্তি পায়। এরই মধ্যেই গানটি দর্শক দেখে ফেলেছেন ১ কোটি বার। ফুর গানের ভিডিওর বর্ণায় সোমি পাটোয়ারি ছাড়াও রয়েছে আরেক বাংলাদেশির নাম। তিনি হলেন পুনম তানজিনা। গতকাল দুপুরে মেসেঞ্জারে ফুর নিয়ে কথা তাঁদের সঙ্গে। তখনই সোমি ও পুনমের বৃত্তান্ত জানা যায়। ভিডিও নির্দেশক সোমি পাটওয়ারি ও তাঁর স্ত্রী ও প্রযোজক পুনম তানজিনা ঢাকায় জন্ম নেওয়া সোমি ১৯৯০ সালে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তাঁর বয়স তখন আট। তাঁদের আদি বাড়ি চাঁদপুরে। বাবার চাকরি সূত্রে কিছুদিন সিলেটেও ছিলেন। সোমির স্ত্রী পুনম তানজিনা নোয়াখালীর মেয়ে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে তাঁদের বিয়ে হয়। এ দম্পতি এখন নিউ জার্সিতে আছেন। তাঁদের দুজনের গড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম শট বাই সোমি। এর পরিচালক সোমি আর পুনম প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজক। সোমি পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই নাকি আঁকাআঁকির প্রতি তাঁর ভীষণ ঝোঁক। ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে তিনি তাঁর ভাই-বোনদের নিয়ে ছোট ছোট মজার ভিডিও তৈরি করতেন। কিন্তু তা ছিল একেবারেই ঘরোয়া পরিসরে। পরিষ্কার বাংলায় সোমি বলেন, মা-বাবা চাইতেন না আমি ছবি বানাই। তাঁরা আমাকে অন্য পেশায় দেখতে চাইতেন। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়লে আমি ভিডিও গেমস তৈরি ও এই ধরনের ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) কিছু করতে পারব বলেই এই সাবজেক্টে পড়তে রাজি হই। ভিডিও নির্দেশনা বা চিত্রগ্রহণের ওপর সোমির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অন্য পরিচালকদের কাজ দেখে ও ইন্টারনেট ঘেঁটে কাজ শিখেছেন তিনি। এভাবেই এখন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় পরিচালক হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ। ভিডিও নির্দেশক হিসেবে সোমির যাত্রা শুরুর গল্পটা খুব মজার। জনপ্রিয় মার্কিন র্যাপার ও গায়ক ফ্যারেল উইলিয়ামসের মা ছিলেন সোমির কলেজশিক্ষক। তাঁর মাধ্যমে সোমির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ফ্যারেলের। ২০০৫ সালে ইন্টার্ন হিসেবে ফ্যারেলের স্টুডিও স্টার ট্রেকে কাজের সুযোগ পান। হ্যাপি তারকা ফ্যারেলের জন্য ওয়েবসাইট নকশা করে দিতেন সোমি। আর ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীর স্টুডিওতে আসা বড় বড় তারকাদের গান রেকর্ডিং ও মজার মুহূর্ত নিজের ছোট ক্যামেরায় ধারণ করতেন। এই কাজটি অবশ্য ছিল নিতান্তই শখের বসে করা। একটা সময় দেখা গেল, ফ্যারেলের মূল গানের ভিডিওর চেয়ে, সোমির বানানো গান তৈরির পেছনের সেই ভিডিও গুলোই ইন্টারনেটে বেশি জনপ্রিয়। এরপর থেকে সোমির কাছে অনেক ভিডিও বানানোর ফরমায়েশ আসতে শুরু করে। ২০০৬ সালে স্নাতক শেষ করে সোমি ভার্জিনিয়ার হ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণকালীন চাকরিতে যোগ দেন। এর পাশাপাশি তিনি বন্ধুর সঙ্গে ইল্যুসিভ মিডিয়া নামের একটি কোম্পানিও চালাতেন। তখন খুব অল্প বাজেটে কাজ করে দিতেন বলে ভিডিও নির্মাণের প্রস্তাবও পেতেন প্রচুর। সোমির কাজ দেখে ভালো লাগার পর আরেক মার্কিন গায়ক ও র্যাপার পুশা টি তাঁর গানের ভিডিও তৈরির জন্য একটি ভালো ক্যামেরা কিনে দেন বাংলাদেশি এই তরুণকে। ২০১০ সালে বিয়ের পর পূর্ণকালীন চাকরি ছেড়ে ভিডিও নির্মাণের কাজে পুরোদমে নেমে পড়েন সোমি। বাংলাদেশের সোমি আর যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড প্রোডিউসার ডিপলোর পরিচয় ২০১১ থেকে। তখনো এই ডিপলো এখনকার মতো বিশ্বখ্যাতি পাননি। শাহরুখ-ডিপলোকে নিয়ে ফুর তৈরির পেছনে রয়েছে ডিপলো-সোমির সখ্য। ফুর গানটি সোমির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন মিখেল মেহরা। মিখেল ভারতের ছেলে। তাঁর বহুদিনের ইচ্ছা ডিপলো ও শাহরুখকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবেন। আর মিখেল জানতেন ডিপলোর সঙ্গে সোমির যে ঘনিষ্ঠতা তাতে সোমিকে তিনি না করতে পারবেন না। তাই সোমির মাধ্যমেই ডিপলোকে শাহরুখের জন্য একটি গান তৈরির প্রস্তাব দেন। ভারতীয় সংগীত পরিচালক প্রীতম ও ডিপলো মিলে পরে বানান ফুর। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন মোহিত চৌহান ও তুষার জোশী। শাহরুখের সঙ্গে কাজ করা ছিল সোমির জন্য এক বিশাল সুযোগ। যাব হ্যারি মেট সেজাল-এর ইমতিয়াজ আলী পরিচালক ফুর এর ভিডিও নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে সোমিকে যেদিন ই-মেইল করেন সেদিনই ভিডিওর আইডিয়া লিখে ফেলেন সোমি। শাহরুখ তা দেখে একবারেই ওকে করে দেন। ইমতিয়াজ আলী ফুর এর শুটিংয়ের আগে সোমিকে আরেকটি মেইল পাঠিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল, আমি তোমার অনেক কাজ দেখেছি। তোমার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। শুভ কামনা রইল। সোমি বলছিলেন, ডিপলো আর শাহরুখ দুজনেই খুব ব্যস্ত। তাঁরা কিছুতেই শিডিউল মেলাতে পারছিলেন না। শাহরুখ গত জুলাইয়ে তাঁর বড় ছেলের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে আসেন। তখন অনেক হিসাব কষে ২২ জুলাই শুরু হয় ফুর গানের শুটিং। হলিউডের হুডিনি ম্যানশনে তিন দিনে শুটিং শেষ করেন তাঁরা। পরের চার দিন সোমি ভিডিও সম্পাদনা করেন। এত অল্প সময়ে এত বড় প্রজেক্টের কাজ আমি আগে কখনোই করিনি। প্রতিবেদককে বলছিলেন সোমি পাটওয়ারী। এই ভিডিওতে শাহরুখ খান যে জ্যাকেটটি পরেছিলেন সেটি তিনি শুটিং শেষে সোমিকে উপহার দিয়ে যান। কাজ শেষে বলিউডের এই মহাতারকা নাকি সোমি ও পুনমকে বলেছেন, তোমরা দুজন খুব পেশাদার। তোমাদের সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে। এর আগেও গ্র্যামিজয়ী শিল্পী বিয়ন্স, ড্রেক, কানিয়া ওয়েস্ট ও কাইলি জেনারের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সোমি। সোমির মা সুরাইয়া পাটোয়ারি ও বাবা মিজানুর পাটোয়ারি এখন থাকেন ভার্জিনিয়া বিচে। শুরুতে ছেলের ভিডিও নির্দেশনার নেশার বিপক্ষে থাকলেও এখন সোমিকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত তাঁরা। সোমি পাটোয়ারি বাংলাদেশি সার্ফার জাফর আলমকে নিয়ে এমটিভির জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। সোমি ও পুনম জানালেন, সামনে তাঁরা একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। যার অর্ধেক শুটিং হবে বাংলাদেশে আর অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রে। তবে আপাতত এই বাংলাদেশি দম্পতি এখন ফুর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন। আর ভেসে যাচ্ছেন প্রশংসায়। আর/০৭:১৪/০৫ আগষ্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vyI07p
August 05, 2017 at 01:15PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top