লন্ডন, ১২ আগস্ট- যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা সন্দেহভাজন এক আইএস জঙ্গির বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে অর্থ পাচার ও জঙ্গি অর্থায়নের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে নতুন তথ্য পেয়েছে, যার পেছনে ছিলেন সিরিয়ায় নিহত বাংলাদেশি জঙ্গি সাইফুল হক সুজন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দেওয়া এফবিআইয়ের একটি নথির বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেড় বছর আগে মেরিল্যান্ডে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ এলশিনাওয়ি নামের ৩০ বছর বয়সী যে সন্দেহভাজন আইএস সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তদন্তকারীরা জঙ্গিদের অর্থ পাচার নেটওয়ার্কের ক্লু পান। দীর্ঘ নজরদারির পর ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর এলশিনাওয়িকে গ্রেফতার করে এফবিআই। গত বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বাল্টিমোরের ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরি। সেখানে বলা হয়, এলশিনাওয়ি ইবের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রিন্টার বিক্রির নাটক সাজিয়ে পেপ্যালের মাধ্যমে আইএসের নেটওয়ার্ক থেকে অর্থ নেন। ওই অর্থ সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। ওই পদ্ধতি ব্যবহার করে আইএস নেটওয়ার্ক যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশেও টাকা পাঠিয়েছে। আর এর পেছনে ছিলেন আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশি কম্পিউটার প্রকৌশলী সাইফুল হক সুজন। আইএসের ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত বেশ কয়েকজন পরে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে গ্রেফতার বা নিহত হন বলে এফবিআইয়ের এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকার কাছে ড্রোন হামলায় নিহত হন সুজন। যুক্তরাজ্যে কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়াশোনা করা এই বাংলাদেশি সে সময় আইএসের কম্পিউটার অপারেশন বিভাগের প্রধান ছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের ভাষ্য। বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সাইফুল হক সুজনের বাড়ি খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামে। তার ভাই শরীফুল হক ইমন এবং দুই ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানরাও বেশ কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ। সিরিয়ায় সুজনের নিহত হওয়ার সপ্তাহ দুই আগে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কারওয়ানবাজারে তার প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস টেকনোলজিস কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই কার্যালয় থেকে সুজনের বাবা একেএম আবুল হাসনাত, ছোট ভাই হাসানুল হক ওরফে গালিব মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে জঙ্গি অর্থায়নে সহযোগিতার অভিযোগে মামলা করা হয়। তেজগাঁও থানার ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত ওই পাঁচজন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বা সমর্থক। বিদেশে থাকা সুজন ও তার ভাই জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইব্যাকসের মাধ্যমে তাদের টাকা পাঠিয়ে আসছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বার্তা সংস্থা বিডিনিউজকে জানান, সুজনের বাবা কারাগারে থাকা অবস্থায় কিছুদিন আগে মারা গেছেন। আর সুজনের ভাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। আইব্যাকস টেকনোলজিসের মূল কার্যক্রম চলত যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ থেকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ছিল। ওই ব্যবসার আড়ালে সুজন অর্থ পাচারে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। আইব্যাকসের মাধ্যমে সুজন কয়েক লাখ পাউন্ড ঢাকা হয়ে সিরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন বলে সে সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলো। এফবিআইয়ের এফিডেভিটে বলা হয়েছে, আইএসের এই নেটওয়ার্ক থেকে মোট ৮৭০০ ডলার পেয়েছিলেন মোহাম্মদ এলশিনাওয়ি। এর মধ্যে পেপ্যালের মাধ্যমে পাঁচটি পেমেন্ট তিনি পেয়েছিলেন সুজনের কোম্পানির কাছ থেকে।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uxCRJj
August 12, 2017 at 07:17AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top