বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেটে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনায় সমালোচনার মুখে ছাত্রলীগ। বিয়ানীবাজারে গুলিতে কর্মী নিহত, এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাস ফের ভাঙচুর, দক্ষিণ সুরমায় গোলাগুলিসহ নানা ঘটনায় সিলেট ছাত্রলীগকে নিয়ে এখন আতঙ্ক সর্বত্র। আর গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রক দাতাদের চাপের কারণে প্রশাসনও নির্বিকার। গত ৯ বছরে সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কখনোই সুখকর ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, রাজপথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টেন্ডারবাজি, এমসি কলেজের হোস্টেলে আগুন, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধে সংঘর্ষ, খুনোখুনির কারণে সিলেট ছাত্রলীগ সব সময় ছিল আলোচনায়। এসব আলোচনার মধ্যেই অনেকাংশে স্বচ্ছ ধারার নেতাদের দিয়ে প্রায় দুই বছর আগে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির ছাত্রলীগের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বিতর্ক মুক্ত করতে পারেনি।
নানা অভিযোগে অনেক পদবিধারী নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় খালেদ আহমদ লিটু নামে এক ছাত্রলীগকর্মী গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৪ কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নিজের এলাকা বিয়ানীবাজার। আর ওই এলাকায় কলেজের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে গুলিতে কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনায় রীতিমতো সিলেটে তোলপাড় হয়েছে।
তবে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে- লিটু ছাত্রলীগের কেউ নয়। সে একজন ব্যবসায়ী। জেলা ছাত্রলীগের এই ঘোষণার ঠিক আগের দিন সিলেট সফরকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেছিলেন- লিটুকে বহিরাগতরা কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ জানিয়েছেন- লিটু চারবছর ধরে পেশায় ব্যবসায়ী। তার কোনো ছাত্রত্ব নেই। সে ছাত্রলীগের কেউ নয়। আর এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সিলেটের এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধিক্কার শুরু হয়েছিল। খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও এ ঘটনার জন্য কেঁদেছিলেন। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পুরাতন আদলে এমসি কলেজের ছাত্রাবাস নতুন করে নির্মাণ করেন।
চলতি মাসে এমসি’র নতুন ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের তোলা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের এক গ্রুপের নেতারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রাবাসে ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা দু’টি ব্লকের অর্ধশতাধিক দরজা-জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রাবাসটি বন্ধ ঘোষণা করেন। ফের বন্ধ হওয়ার ১০ দিন পর গত শনিবার ফের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের তোলা হয়েছে।
এর আগে ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। কলেজের ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- ছাত্রলীগের কারণে ছাত্রাবাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আর এর কারণে ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তবে- সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষার জানিয়েছেন- এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো ইউনিট নেই। কেউ ছাত্রলীগের নামে এসব অপকর্ম করলে এর দায় নেবে না সিলেট ছাত্রলীগ। তিনি বলেন- অতীতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। এতে দুই ছাত্রলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় কুশিঘাট এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ফাহিম স্মৃতি সংসদ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের অভিষেক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সামনে ঘটেছে এ ঘটনা। সংঘর্ষের সময় যেসব অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সেগুলোও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আর ঘটনার পর ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা রয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তুষার জানিয়েছেন- কুশিঘাটের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন ছাত্রলীগের পদবিধারী কেউ এতে জড়িত নয়। এরপরও তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন। যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে দল থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত- যৌন হয়রানির অভিযোগ থেকেও রক্ষা পায়নি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে বৃহস্পতিবার দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পার্থসহ তিন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলাও হয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়- সিলেটে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে নেই। নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা ও মহানগরের কয়েক জন নেতা। বেশ কয়েকটি উপ-গ্রুপ রয়েছে সিলেটে। এসব উপ-গ্রুপে এখন কর্মীদের অভাব নেই। এরা ছাত্রলীগের পদবিধারী না হলেও কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রয়েছে অনেক অছাত্র। বিতর্কিত ঘটনা ঘটায় এরা। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ এর দায় নেয় না। আবার কোনো কর্মী মারা গেলেও তাকে ছাত্রলীগের বলে স্বীকারও করে নেয়া হয় না। এ বিষয়টি নিয়েও ছাত্রলীগের ভেতরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে- মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সিলেট শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কর্মী বাহিনী নিয়ে শোডাউন করেছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমীন। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে শোডাউন করে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এ সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2vp57B3
August 02, 2017 at 09:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.