ঢাকা, ০৭ আগস্ট- ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রেমপিয়াসী ছবির ডাবিং করতে যান সালমান শাহ। সেখানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন নায়িকা শাবনূর। কিছুক্ষণ পর সালমান তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে বলেন, তাঁর স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসার জন্য। শ্বশুরের সঙ্গে সাউন্ড কমপ্লেক্সে এসে সামিরা দেখতে পান সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠভাবে খুনসুটি করছে। সালমান প্রায়ই এ ধরনের খুনসুটি করতেন। সামিরাকে উত্তেজিত করে তুলতেন। কিছুক্ষণ পর কমর উদ্দিন চলে গেলে সামিরাও দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। অবস্থা খারাপ দেখে একই গাড়িতে ওঠেন সালমান শাহ ও চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার। সালমানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন সামিরা। তাঁকে বোঝাতে থাকেন বাদল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালমান এফডিসির প্রধান ফটকের সামনে নেমে আড্ডা দেন, যা এর আগে কখনো করেননি। রাত ১১টার দিকে নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বি-১১ নম্বর ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন বাদল খন্দকার। সামিরাও তখন ঘরে। সাড়ে ১১টার দিকে সালমান বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখেন। তখনো তাঁদের মধ্যে কথা বন্ধ। ১২টার দিকে সালমানের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি বাথরুমে গিয়ে কথা বলে বেরিয়ে টিভি বন্ধ করে অডিও ক্যাসেট ছাড়েন। এ সময় আরো একটি ফোন আসে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। উত্তেজিত হয়ে সালমান মোবাইল ফোনসেটটি ভেঙে ফেলেন। ক্ষুব্ধ সামিরা ব্যাগ গুছিয়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে ফুফুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সালমানের পিএ আবুল ইন্টারকমে দারোয়ানকে গেট খুলতে নিষেধ করেন। সামিরা ফিরে এলে সালমান তাঁকে ফুফুর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে তুমি শুধু তুমি ছবির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সালমান ঘুমাতে থাকেন। বাজারে পাঠানো হয় তাঁর দেহরক্ষী দেলোয়ারকে। এ সময় কমর উদ্দিন তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে আসেন। সালমানকে বলেন, মা, ভাই ও তাঁকে নিয়ে সিলেটে যাবেন। এ সময় সিদ্দিক নামের এক প্রযোজকও আসেন। কমর উদ্দিন ও সিদ্দিক চলে যাওয়ার পর সামিরা তাঁর বেডরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ১১টার দিকে সালমান ঘুম থেকে উঠে দুই কাজের মেয়ের একজনকে ডেকে চা ও পানি খান। কিছুক্ষণ পর ড্রেসিংরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেন। ঢোকার আগে আবুলকে বলে যান, আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে। বলা হয়ে থাকে, সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন। পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন। পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। সালমান ফ্যান পর্যন্ত ওঠেন ঘরে থাকা একটি কাঠের মই দিয়ে। নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, শরীর এখনো গরম। উনি মরেননি। তখন মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পার্লার থেকে সামিরার বান্ধবী রুবি আসেন, অংশ নেন সালমানকে বাঁচাতে। হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম এসে সালমান শাহকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে সালমানের বাবা কমর উদ্দিনকে খবর দেন। খবর পেয়ে কমর উদ্দিন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী, ভাই শাহরান ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁরা গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য লিফট দিয়ে নামাতে যান। এ সময় লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ মিনিট দেরি হয়। পরে তাঁকে নামিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। সালমান শাহর মৃত্যুকে পরিকল্পিত খুন দাবি করে গত বছর গণমাধ্যমকে তাঁর মা বলেন, সালমানের শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন ছিল না, যাকে আত্মহত্যা বলা যায়। খালি ইনজেকশন পুশ করে এবং জেসকিন ইনজেকশন দিয়ে, গলায় চাপ দিয়ে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই প্রমাণ পুলিশ ঘটনার পরপরই পেয়েছিল। কিন্তু আজ সব উধাও হয়ে গেছে! গত বছর সালমান শাহ হত্যা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। সালমান শাহ মৃত্যুর ২১ বছর একজন নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করেছেন। নিজেকে সালমান শাহ মৃত্যুর সর্বশেষ প্রত্যক্ষদর্শী দাবিকৃত ওই নারীর নাম রুবি। আজ সোমবার নিজেই এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সব তথ্য ফাঁস করলেন রুবি! তাঁর স্বামী (চীনা নাগরিক, সাংহাই রেস্টুরেন্টের মালিক) জন চেন রুবির ভাই রুমিকে দিয়ে সালমানকে খুন করিয়েছেন। সেই রুমিকেও পরে খুন করা হয়েছে। আর এখন সালমান হত্যা মামলার সর্বশেষ প্রত্যক্ষদর্শী রুবিকেও খুন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে জন চেন। নিজের ও নিজের সন্তানের ওপর মৃত্যুর ছায়া নেমে আসার পর অবশেষে স্বীকার করলেন রুবি। এমনকি নীলা চৌধুরীর কাছেও সাহায্য চাইছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় কথা বলার সময় রুবিকে বেশ আতঙ্কিত দেখা গেছে। তিনি দাবি করেন, তাকেও হত্যা করার চেষ্টা চলছে। তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uz7LQC
August 08, 2017 at 01:02AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top