ঢাকা, ০৭ আগস্ট- সালমান শাহ সম্পর্কে যারা খোঁজ-খবর রাখেন তাদের কাছে রুবি পরিচিত নাম। দুই দশকে এই নারী বারবার বলে এসেছেন সালমান আত্মহত্যা করেছেন, এমনকি এ নায়কের মা নীলা চৌধুরীকে ভিডিওবার্তায় নানা সময়ে অপমানও করেছেন। রোববার হুট করে সেই রুবিই বলছেন সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনিই একমাত্র জীবিত ব্যক্তি যার কাছে প্রমাণ আছে সালমান আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এমন দাবিও করেন রুবি। সালমান হত্যা মামলার ১১জন আসামির মধ্যে অন্যতম রুবির পুরো নাম রাবেয়া সুলতানা রুবি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে চাইনিজ স্বামী ও দুই সন্তানসহ বসবাস করছেন। রুবির সঙ্গে সালমানের পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু ওঠে এসেছে নব্বই দশকে সুপন রায়ের বই সালমান শাহ অজানা কথায়। সুপন লিখেছেন, রাবেয়া সুলতানা ওরফে রুবি থাকেন সালমানের ফ্ল্যাটের অর্থাৎ ইস্কাটন প্লাজার উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। তিনি রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে। প্রয়াত স্বামী ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন তার বর। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় তার স্বামী ছিলেন তাদের একজন। বর্তমানে তিনি মে-ফেরার নামক বিউটি পার্লারের স্বত্ত্বাধিকারী। জানা যায়, সালমান জীবিত থাকাকালে রুবিকে তার ফ্ল্যাটে কখনো না আসার নির্দেশ দিয়ে বের করে দেন। সেই থেকে রুবির মন কষাকষি চলতে থাকে সালমানের মায়েরও। রোববারের ওই ভিডিওতে রুবি দাবি করেছেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি। তাকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের সঙ্গে জড়িত সালমানের স্ত্রী ও তার বাড়ির লোকজন। খুনের সঙ্গে আরও জড়িত রুবির ছোট ভাই রুমি ও তার স্বামী। পরে রুমিকেও মেরে ফেলা হয়। সালমান শাহর অজানা কথা আরো বইতে উল্লেখ আছে, সালমান-সামিরার দাস্পত্য কলহের পশ্চাতে রুবির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। সালমানকে তিনি দেখে নেবেন, এরকম কথাও বলেছেন অনেকের কাছে। যাদুশিল্পী আজরা জ্যাবিনের কাছে এই রুবি বলেছিলেন, সালমানের সব টাকা তার মা নিয়ে যাচ্ছে সামিরার কী হবে? এবং এ অভিযোগটি করেছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তার ভাষ্য, আমার ছেলের টাকা আমি নিলাম না তার বাবা নিল এসব নিয়ে রুবির মাথা ব্যথা কেন? রুবি কে, যে আমার সংসার জীবনে হস্তক্ষেপ করবে? শোনা যায়, রুবি চেয়েছিলেন তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে সামিরার বিয়ে হোক। কিন্তু তাতে বাধ সাধে সালমানের সঙ্গে বিয়ে। মৃত্যুর দিনও সালমানের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন রুবি। এ প্রসঙ্গে সুপন রায়কে বলেন, ইমনের (সালমান শাহ) আত্মহত্যার খবর শুনে সাথে আমার ছেলে ভিকি, পার্লারের মেয়েরা। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুহূতেই দেখলাম- ধরাধরি করে ইমনকে বের করে আনা হচ্ছে। আমি ভাবলাম, স্লিপিং পিল খেয়েছে, স্টমাক ওয়াশের জন্যে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ভিতরে ঢুকে দেখি ডাইনিং টেবিল-কিচেনের মাঝামাঝি মেঝেতে সামিরা বসা। কাঁদছে। আমাকে দেখেই ও দৌড়ে এলো। ওকে সান্ত্বনা দেয়ার সময় ৮১ সালের ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর ভেতরে তোলপাড় করা অবস্থা। টের পেলাম সুইটি ভাবী, ইয়াসমিন তখনো দাঁড়িয়ে। একটু পরেই ইমনের মা এসে বললো, দরজা বন্ধ কর, কাউকে ঢুকতে দেবে না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি সামিরাকে বলে উঠবেন, সামিরা কাইন্দো না, তুমিই ইমনকে মেরেছ। তখন সামিরা হিস্টিরিয়া রোগীর মতো বলে উঠল, আমি কেমন করে আপনার ছেলেকে মারলাম। তখনো হীরা ভাইকে (সামিরার বাবা) জানানো হয়নি ইমনের খবর। সুইটি ভাবীর বাসায় গিয়ে ফোনে চট্টগ্রামে হীরা ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। কিছুক্ষণ পরে ফ্ল্যাটের ম্যানেজার ডাক্তার নিয়ে এসেন। ডাক্তার কিছু না বলেই চলে গেলেন। আমি স্লাভো ক্লিনিক গিয়ে জিজ্জেস করাতে তিনি বললেন, সালমান মৃত। আমি উল্টো প্রশ্ন করলাম, আপনি নিশ্চিত? ডাক্তার সম্মতি জানাতেই, ভালো হলো না বলে চলে এলাম। সাথে আমার ছেলে ভিকি। এসেই সামিরা, সালমান মহসীন (সুইটি ভাবির বর) ভাইকে জানালাম ইমন মারা গেছে। কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাট থেকে ফোন করলাম এক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে। বললাম পুরো ঘটনা। ও অবস্থায় সামিরাকে নেব প্রশ্ন করাতেই তিনি বললেন, আপনি ভুলেও এ কাজ করবেন না। জড়িত হয়ে পড়বেন। সামিরা তখন আমাকে বলল, ইমন একটা চিঠি লিখে গেছে। আমি বললাম, কোথায় সেটা? সামিরা বলল, আবুলের হাতে। আমি তখন তাকে বললাম, তুমি কি একটা বুদ্ধু মেয়ে? তুমি জানো এ চিঠির মূল্য কত? এরপর ১/বি-র রুমির আব্বা এসে সামিরাকে উনার ফ্ল্যাটের নিয়ে যান। আমি আমার বাসায় চলে যাই। আমি বুঝতে পারছি না আমাকে কেন ইমনের আত্মহত্যার সাথে জড়ানো হচ্ছে। গত অক্টোবর ১৯৯৫ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সামিরার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ফ্ল্যাটের দারোয়ানই তার প্রমাণ। সুপন রায় তার বইতে আরো উল্লেখ করেছেন, রুবির দেয়া ব্যাখ্যাই যে পুরোপুরি সত্যি তারও যথাযথ প্রমাণ নেই। রশি কেটে নামানোর পর সালমানের গায়ে তেল মালিশ করার সময় রুবি যে উপস্থিত ছিলেন সেটা সামিরা নিজেই বলেছেন। অথচ রুবি বলেছেন, সালমানকে ধরাধরি করে ডাক্তারের কাছে নেয়ার পরেই তিনি ফ্ল্যাট ঢোকেন। অথচ নীলা চৌধুরী তাকে ফ্ল্যাটে ঢুকেই দেখতে পান। এদিকে অনেকবার সামিরার সঙ্গেও রুবির নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেছেন সালমানের মা নীলা। কিন্তু নানা ভিডিও বার্তায় পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রুবি। চলতি বছরের মে মাসেও রুবি একই ধরনের ভিডিও প্রকাশ করেন ফেসবুকে। রোববারের ওই ভিডিওতে রুবি জানান, তিনিই নাকি একমাত্র জীবিত মানুষ যার কাছে প্রমাণ আছে সালমানকে খুন করা হয়েছে। তাই তাকেও মেরে ফেলা হতে পারে। কেন খুন করা হতে পারে রুবিকে? তার ভাষ্যে, কারণ আবার (সালমানের মৃত্যুরহস্য) কেস ওপেন হইছে। তিনি দাবি করেন, সালমানের অন্য হত্যাকারীদের মধ্যে কয়েকজন চীনা নাগরিক ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি সালমানের শাশুড়ি লুসি ও নিজের স্বামীর দিকে ইঙ্গিত দেন। ভাই রুমির হত্যার সঙ্গে খালু, খালাতো ভাই ও স্বামী চীনা নাগরিক চ্যান লিং চ্যান ওরফে জন চ্যান (ধানমন্ডির সাংহাই রেস্টুরেন্টের মালিক) জড়িত আছেন বলে সন্দেহ রুবির। এ হত্যারও বিচার চান তিনি। ১৯৯৩ সালে প্রথম চলচ্চিত্র কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান সালমান শাহ। সব মিলিয়ে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার বেশিরভাগই হিট। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন এ নায়ক। সালমানের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে দুই দশক ধরে বিতর্ক চলছে।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uipxfY
August 08, 2017 at 01:05AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন