বার্সেলোনা, ২০ আগষ্ট- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এক আইটি বিশেষজ্ঞের মালিকানাধীন কোম্পানির অর্থায়নে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্পেনের বার্সেলোনায় হামলা চালিয়েছে বলে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য সানডে টাইমস এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে। সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেয়া এই বাংলাদেশির একটি আইটি কোম্পানি অাছে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে। রোববার ব্রিটিশ এই দৈনিক বলছে, বাংলাদেশি ওই জঙ্গির মালিকানাধীন কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় ও অর্থায়নে স্পেনে জঙ্গি হামলা হয়েছে। ১৭ আগষ্ট স্পেনের বার্সেলোনা শহরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা লাস রামব্লাস অ্যাভিনিউয়ে একটি সাদা ভ্যান চালিয়ে দেয়া হয়। এতে অন্তত ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং অনেকেই চাপা পড়েন। এর আট ঘণ্টা পর স্পেনের ক্যাম্ব্রিলসের সমুদ্র সৈকতে হামলাকারীরা আবারও হামলা চালায়। পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয়া হয়। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত এক ব্যক্তি মারা যান। মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইর কিছু নথি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক সানডে টাইমস। এতে বলা হয়েছে, স্পেনে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হামলায় নজরদারির যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে; সেগুলো যুক্তরাজ্যে তৈরি এবং আইএসে যোগ দেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাইফুল সুজন নামের এক জঙ্গির কোম্পানির তৈরি। ওয়েলস থেকে সেগুলো স্পেনে পাঠানো হয়। অন্যান্যরা বলছেন, ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ হয়ে স্পেনে নজরদারি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছিল। এ সরঞ্জামের মধ্যে একটি সফটওয়্যার ছিল; যার সাহায্যে রকেট নিক্ষেপ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কিছু নথি সানডে টাইমস দেখেছে। যেখানে দেখা যায়, ওয়েলসের ওই কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের কর্মকাণ্ড আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন। স্পেনের মাদ্রিদে নজরদারি সরঞ্জাম পাঠানো একটি সংস্থা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পিটার সরেন নামের একজনকে ভুয়া পরিচালক ও অংশীদার নিযুক্ত করেন। তবে এই ব্যক্তি আসলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আইটি বিশেষজ্ঞ সাইফুল সুজন; যিনি উপনাম ব্যবহার করে কোম্পানিটির পরিচালক হয়েছিলেন। সানডে টাইমস বলছে, সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে তিন বছর আগে পরিবারের সদস্যদেরসহ ওয়েলস ত্যাগ করেছেন সুজন। পরে আইএসের তথাকথি রাজধানী রাক্কায় মার্কিন ড্রোন হামলায় মারা যান এই জঙ্গি। সুজন ও তার সহযোগীরা ওয়েলসে আইব্যাকস নেটওয়ার্ক নামে ওই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। এই কোম্পানি ওয়েবসাইট তৈরি, প্রিন্ট ও সফটওয়্যার তৈরির কাজ করে। কার্ডিফের ট্রিমোর্ফা এলাকার অ্যালেক্সান্দ্রা গেইট বিজনেস পার্কে তাদের একটি অফিস আছে। তবে সুজন সিরিয়ায় যাওয়ার পর আরো কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হন বলে ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ ও এফবিআইয়ের যৌথ একটি তদন্তে উঠে এসেছে। যেখানে তিনি ইসলামিক স্টেটের হ্যাকিং অপারেশন এবং অস্ত্র উন্নয়ন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। এদিকে কার্ডিফভিত্তিক সংস্থা অাইব্যাকস টেল ইলেক্ট্রনিকস যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে আইএসের হয়ে হামলা চালাতে মোহাম্মদ এলিশনাই (৩২) নামে আইএসের এক সমর্থকের কাছে ৭ হাজার ৭০০ ডলার পাঠান। অভিযুক্ত এলিশনাই গত সপ্তাহে অাইব্যাকস টেল ইলেক্ট্রনিকসের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এফবিআইয়ের দাবি, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অ্যালেক্সান্দ্রা গেইট বিজনেস পার্কে অ্যাডভান্স টেকনোলজি গ্লোবাল (অ্যাটিজি) নামে নতুন একটি কোম্পানি চালু করা হয়। সুজন ও আইব্যাকসের কার্ডিফ শাখার পরিচালকের স্কাইপি কথোপকথনের রেকর্ডে নতুন এই কোম্পানি তৈরির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই আইটি বিশেষজ্ঞ। ২০০৩ সালে পড়াশোনার উদ্দেশে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সুজন। এর দুই বছর পর তার স্ত্রীও ব্রিটেনে যান। সুজনের এক ছেলে; লন্ডনের পন্টিপ্রিডে বসবাস করলেও পরে কার্ডিফের অ্যালেক্সান্দ্রা গেইট বিজনেস পার্কে ভাড়া বাসায় উঠেন। পরে তুরস্কে যাওয়ার আগে ছেলেসহ সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসে এই দম্পতি। ২০১৬ সালের মার্চে সুজনের অাইব্যাকস টেল ইলেক্ট্রনিকস হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এর আট মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় অ্যাটিজি। আর/১৭:১৪/২০ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2we5OOy
August 21, 2017 at 02:03AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন