নিউ ইয়র্ক, ০৪ আগষ্ট- ডিভি লটারি চিরতরে বন্ধসহ পারিবারিক কোটায় অবাধে গ্রীণকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রহিতের উদ্দেশ্যে নয়া একটি বিল উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইচ্ছার পরিপূরক এ বিল উঠিয়েছেন আরকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এবং জর্জিয়ার রিপাবলিকান সিনেটর ডেভিড পারড্যু। ২ আগষ্ট উত্থাপিত একটি মজবুত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে আমেরিকার অভিবাসন নীতির সংস্কার তথা রেইজ এ্যাক্ট (Reforming American Immigration for a Strong Economy (RAISE) Act) শীর্ষক এ বিল মূলত: কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন রীতির পরিপূরক। অর্থাৎ কেবলমাত্র দক্ষতাসম্পন্ন মেধাবি বিদেশীরাই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভিসায় আসার সুযোগ পাবে। পারিবারিক কোটায় কেবলমাত্র তারাই আসবেন যাদের বয়স কম এবং সিটিজেন অথবা গ্রীণকার্ডধারীর স্বামী-স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়েসী সন্তানেরা। এ বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে অর্থ শতাধিক বছরের রীতি পাল্টে অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আগমণের হার ৫০% হ্রাস পাবে। একইভাবে রিফ্যুজি হিসেবে বছরে ৫০ হাজারের বেশী বিদেশীকে ঢুকতে দেয়া হবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় এমন একটি বিল উত্থাপনের পর ডেমক্র্যাটিক পার্টি দূরের কথা অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান কিংবা সিনেটরও তা আমলে না নেয়া ২ আগষ্ট কিছুটা পরিবর্তন আকারে তা পুনরায় উত্থাপন করা হলো। এ বিলকে যুক্তরাষ্ট্রেে খেটে খাওয়া মানুষদের স্বার্থে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এবং হোয়াইট হাউজের নীতি নির্দ্ধারকরা বলেছেন, এই বিল আইনে পরিণত হলে যুক্তরাষ্ট্রের খেটে খাওয়া মানুষদের বেকারত্বের হার কমবে এবং একইসাথে মজুরি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি মেধাবি ও দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নেই অবদান রাখতে সক্ষম হবে। বিলের উত্থাপক দুই রিপাবলিকান সিনেটরও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সকলের আন্তরিক সহায়তা চেয়েছেন। সিনেটর টম কটন বলেছেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে যে ধরনের অভিবাসন নীতির প্রয়োজন, তা বহু বছর থেকেই অনুপস্থিত। এর ফলে কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানরাও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন সময় হচ্ছে সবকিছুকে জনগণের কল্যাণে ঢেলে সাজানোর। আমরা একটি অভিবাসন ব্যবস্থা চালূ করতে চাই, যেখানে শ্রমিকেরা ন্যায্য পারিশ্রমকি পাবেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, এবং প্রতিটি আমেরিকানই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে। আপনি অথবা আপনার পূর্ব পুরুষেরা ম্যা ফ্লাওয়ার দিয়ে ভেসে আসুক অথবা অন্য যে কোনভাবে এসে সিটিজেনশিপ গ্রহণ করুক না কেন, সকলেই আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবেন- বলেন সিনেটার কটন। সিনেটর ডেভিপ পারড্যু বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গিকারের অন্যতম হচ্ছে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো এবং বহু বছরের ভঙ্গুর অভিবাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। বিদ্বমান অভিবাসন ব্যবসা কোনভাবেই সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহায়ক নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়, তেমন মেধাবি বিদেশীদের আমরা স্বাগত জানানোর মত অভিবাসন ব্যবস্থা চাই। উত্থাপিত এই রেইজ এ্যাক্ট হচ্ছে সে স্বপ্নেরই পরিপূরক। যা দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশীদের স্বাগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদানের জন্যে। এই বিল আইনে পরিণত হলে বর্তমানের স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে দেয়া চাকরি-ভিসার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে। সে স্থলে দক্ষতাসম্পন্নরা ভিসা পাবে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বহু বছর যাবত এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইংরেজীতে কথা বলা, উচ্চ বেতনে চাকরির অভিজ্ঞতা ও তুলনামূলকভাবে কম বয়স এবং পেশাগতভাবে বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্নরা অগ্রাধিকার পাবেন স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা ইস্যুতে। এই বিলে আরো প্রস্তাব করা হয়েছে যে, পারিবারিক কোটায় শুধুমাত্র স্বামী/স্ত্রী ও কম বয়েসী সন্তানেরা আসতে পারবেন। বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নি, দুলাভাই, দাদা-দাদী-নানা-নানীরা আসতে পারবেন না। ১৯৮৮ সাল থেকে চালু ওপি ওয়ানের পর ডিভি লটারিও চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একইভাবে রিফ্যুজি হিসেবে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জনকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। এই বিলের প্রতি রিপাবলিকানদের নিরঙ্কুশ সমর্থন আদায়ের জন্যে হোয়াইট হাউজের সিনিয়ন এডভাইজার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য-লেখক স্টিফের মিলার, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারি জুলিয়া হাহ এবং এন্ড্যু ব্রেমবার্গ কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এই বিল পাশ হলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশীরা। কারণ, পারিবারিক কোটায় গ্রীণকার্ড নিয়ে বছরে কমপক্ষে ২৫ হাজার জন করে বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন গত ১০/১২ বছর যাবত। এদিকে, এই বিলের সংবাদ প্রকাশের পরই নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলন্ঠিত হবার মত এই বিল অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি এবং মুসলিম নিষিদ্ধ ও অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের গ্রেফতারেরও নিন্দা জানানো হচ্ছে। সূত্রঃ এনআরবি নিউজ আর/০৭:১৪/০৪ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vnReni
August 04, 2017 at 02:17PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন