উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যার্তদের পাশে সেনাবাহিনী

সুরমা টাইমস ডেস্ক: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। নদনদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় উত্তরের ছয়টি জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।সেনাবাহিনী মোতায়েন করা ছয়টি জেলা হলো: ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ।আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সোমবার বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ সকালে স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে গাইবান্ধা সদরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার বাঁধ পুনঃনির্মাণে সেনাবাহিনীর তিন প্লাটুন সদস্য পাঁচটি স্পিডবোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রীসহ মোতায়েন করা হয়েছে।এছাড়াও ১৯ পদাতিক ডিভিশন হতে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষক দল আজ সিরাজগঞ্জের বন্যা দুর্গত এলাকা কাজিরপুর উপজেলার বাহুকায় যায় এবং দুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে।আইএসপিআর জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে যেকোনো সময় সেনাবাহিনীর আরও সদস্য বন্যা দুর্গত এলাকায় দ্রুততম সময়ে অংশগ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।এর আগে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হয়ে তলিয়ে গেলে সরকারের নির্দেশে জনস্বার্থে প্রাথমিকভাবে গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় ৬৬ পদাতিক ডিভিশন হতে এক প্লাটুন সেনাসদস্য ঠাকুরগাঁও শহরে মোতায়েন করা হয়। এই সেনাসদস্যরা রাতভর উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
পরবর্তী সময়ে ১৩ আগস্ট সকালে প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর সদর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় দুই প্লাটুন করে সেনাসদস্য উদ্ধার কাজে মোতায়েন করা হয়। বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটলে বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে গতকালই পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য আরও অধিকসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়।
বর্তমানে দিনাজপুর সদরে তিনটি প্লাটুন ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় এক কোম্পানি সেনাসদস্য বন্যা দুর্গত মানুষে সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই এলাকা দুটিতে সেনাবাহিনী দুই শতাধিক বন্যা দুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদি পশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করেছে।
এছাড়াও গত ১৩ আগস্ট সৈয়দপুরে বাঁধ রক্ষা কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দুই প্লাটুন সেনাসদস্য নিয়োগ করা হয়। এই সেনাসদস্যরা সফলভাবে বাঁধ রক্ষা কাজ সম্পন্ন করে সন্ধ্যায় সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন করেন।একই দিনে সেনাবাহিনীর তিনটি বিশেষ পর্যবেক্ষক দল গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও তিস্তা ব্যারেজে বন্যা দুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করে।এছাড়া, সেনাবাহিনী সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা পরিস্থিতিদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। উজানের ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া জেলার কয়েকটি স্থান নতুন করে বন্যা প্লাবিত হয়েছে।উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা নতুন করে বন্যা প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশের ফলে নওগাঁ শহরের কয়েকটি এলাকা আজ প্লাবিত হয়েছে। শহরের বন্যাপ্লাবিত মহল্লাগুলোর রাস্তাসহ বাড়িঘরে পানি ঢুকায় এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমোর-এ তিনটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এ জেলার নয়টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার সকালে জেলার রাজার হাটের টগরাইহাট গ্রামের বড়কুলের পার এলাকায় রেল ব্রিজের গার্ডার ধসে পড়ায় সারা দেশের সাথে এ জেলার রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়া ও সড়কে পানি ওঠায় জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ৬০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ নদীর সংযোগ নদী ‘বাঙালি’র পানিও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ‘বাঙালি’ নদী সংলগ্ন এ জেলার তিনটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আজ সোমবার মিডিয়ায় পাঠানো বন্যা সংক্রান্ত বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় পানি বাড়ার ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের নিমণাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল রয়েছে। পানি বড়ার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলেও বন্যা বিস্তৃত হতে পারে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2uVzPOt

August 15, 2017 at 12:33AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top