কলকাতা, ০৩ সেপ্টেম্বর- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য জনপদ দার্জিলিংজুড়ে জ্বলছে অশান্তির আগুন। বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও বনধ প্রত্যাহার করেনি এখানে আন্দোলনকারী সংগঠন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কার্যত এখনো বনধ চলছে দার্জিলিংজুড়ে। আজ রোববারও দার্জিলিংয়ের তিস্তা বাজারের ৬ মাইল আউটপোস্টে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এদিকে গোপন ডেরা থেকে এক বার্তায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরং ঘোষণা দিয়েছেন, পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের জন্য তাঁর আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে জঙ্গলে থেকে তিনি এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বিমল গুরুংকে গ্রেপ্তার করার জন্য সাঁড়াশি তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের দাবি, বিমল গুরুং এখন আত্মগোপন করে আছেন সিকিমে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য সিকিম পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে সহযোগিতা করছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গত ২৯ আগস্ট বৈঠকের পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমন্বয়ক বিনয় তামাং এক সাংবাদিক সম্মেলনে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণাকে মেনে নিতে পারেননি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং এবং সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। তাঁরা পাল্টা ঘোষণা দেন বনধ চালিয়ে যাওয়ার। অভিযোগ তোলেন বিনয় তামাং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে এই বনধ প্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই ঘোষণা মানবে না দার্জিলিংয়ের মানুষ। তারা এখনো পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে অনড় রয়েছে। এদিকে বিমল গুরুং সমন্বয়কের পদ থেকে সরিয়ে দেন বিনয় তামাংকে। এর ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দার্জিলিং। পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিমল গুরুং গোপন ডেরায় কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠক ডাকেন। এই গোপন ডেরাটি ছিল দার্জিলিং ও সিকিম রাজ্যের সীমান্ত এলাকার মাঝিটারের একটি রিসর্ট। কিন্তু এই বৈঠক হওয়ার কথা পুলিশ আগাম জানতে পেরে ওই এলাকা ঘিরে ফেললে ওই বৈঠকের জন্য জনমুক্তি মোর্চার জড়ো হওয়া ১৪ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। কিন্তু ধরতে পারেননি বিমল গুরুংকে। পুলিশের আসা টের পেয়ে তিনি রিসর্টের পেছনের দরজা দিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে পালিয়ে যান। এরপরই পুলিশ বিমল গুরুং, রোশন গিরি ও প্রকাশ গুরুংকে ধরার জন্য লুকআউট নোটিশ জারি করে। এদিকে এই ঘটনার পর আরও অশান্ত হয়ে ওঠে দার্জিলিং। শুরু হয় বিভিন্ন এলাকায় জনমুক্তি মোর্চার মিছিল। মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার সকালে কার্শিয়াং পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণ লিম্বু সুব্বাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ কারণে শান্তি ফিরে আসার পরিবর্তে এখন অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দার্জিলিংজুড়ে। এদিকে আজও সকাল থেকেই দার্জিলিংয়ে দোকানপাট খোলেনি। যানবাহন চলছে না। স্কুল, কলেজ, হাটবাজার বন্ধ রয়েছে। ২ মাস ২৪ দিন ধরে চলা অনির্দিষ্টকালের বনধ ঘিরে দার্জিলিংয়ে সহিংস আন্দোলনে প্রাণ গেছে জনমুক্তি মোর্চার বেশ কজন সমর্থকের। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু যানবাহন, সরকারি অফিস, পঞ্চায়েত অফিস ইত্যাদি। সেসব ঘটনায় রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় বিমল গুরুংকেও। এই ঘটনার পর আত্মগোপন করেন বিমল গুরুং। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা পড়ানোর ঘোষণা দিলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা তা না মেনে এর বিরোধিতায় মাঠে নামেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি জানান। কিন্তু প্রত্যাহার না হওয়ায় আন্দোলনকে চাঙা রাখার জন্য জনমুক্তি মোর্চার নেতারা শুরু করেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের আন্দোলন। পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে ১২ জুন থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের দার্জিলিং বনধ। আর/১০:১৪/০৩ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wyTyG0
September 04, 2017 at 04:27AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন