চট্টগ্রাম, ০৩ সেপ্টেম্বর- সব টেস্ট খেলিয়ে দলের কিছু নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। থাকে নিজস্ব স্বকীয়তা। একেক দলের চিন্তা-ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিও একেক রকম। কিছু দল আছে, যারা মাঠের ক্রিকেটে লড়াইয়ের পাশাপাশি কথার যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়। আবার কোনো কোনো দল নীরবে-নিভৃতে সতর্ক ও সাবধানে নিজেদের রণকৌশল আঁটে। তবে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই খুল্লামখুল্লা, রাখঢাক নেই। প্রতিপক্ষ শিবিরকে দুর্বল করতে, তাদের দুর্বলতায় আঘাত হানতে কথার তুবড়ি ছোটানোর পাশাপাশি নিজ দলের প্রশংসা-স্তূতি গাইতেও ওস্তাদ অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের রণকৌশল ঠিক করাতেও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব অন্য যেকোনো দলের চেয়ে কম অজিদের। তাইতো দেশে ও বাইরে , অনুকূল-প্রতিকূল যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো টেস্ট শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে দল চূড়ান্ত করে ফেলে এবং ঘোষণাও দিয়ে বসে। এইতো ঢাকা টেস্টের আগের দিন, সংবাদ সম্মেলনে যেচে গড়গড়িয়ে নিজ দলের একাদশের নাম বলে গেলেন অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা, বন্দর নগরীতে এসেই বদলে গেল অজি অধিনায়কের রূপ। এবার আর একাদশের নাম ঘোষণা করলেন না। কোন ১১ জন খেলবেন? তাদের নাম প্রকাশ বহু দূরে, দলই নাকি চূড়ান্ত হয়নি। টেস্ট শুরুর আগের দিন একাদশ ঠিক করে মিডিয়ার সামনে তাদের নাম ঘোষণা যে দলের রীতি- সেই অস্ট্রেলিয়া চট্টগ্রাম টেস্টের আগের দিন দল চূড়ান্ত করেনি। একাদশ ঘোষণার প্রশ্ন তাই অবান্তর। ইতিহাস জানাচ্ছে গত তিন বছরে কোনো টেস্টেই এমনটা হয়নি। অজিরা ঠিক নিজেদের একাদশ চূড়ান্ত করে প্রেসের সামনে তাদের নাম-ধাম জানিয়ে দিয়েছে। এবারই তার ব্যতিক্রম। কেন? অনেক রকম হিসাব-নিকাশই হতে পারে। তবে সব কথার শেষ কথা বা সারমর্ম হলো- এটা বাংলাদেশের নৈতিক জয়। যে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে টেস্টে ওচ্ছুত ভাবত, তারাই এখন অনেক ভেবেচিন্তে, সতর্ক ও সাবধানী। অর্থাৎ প্রথম টেস্টে মুশফিক বাহিনীর তেজোদ্দীপ্ত পারফরম্যান্স অজিদের বাধ্য করেছে অনেক বেশি হিসাবী হতে। বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও এটাকে তার দলের নৈতিক জয় বলেই মনে করেন। অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ আগে কথা বলে গেলেন নিজ একাদশ ঘোষণা ছাড়াই। সে আলোকেই পরে মিডিয়ার সামনে আসা টাইগার অধিনায়কের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো- অস্ট্রেলিয়া গত তিন বছর ধরে ম্যাচের আগে একাদশ দিয়ে দেয়। কিন্তু চট্টগ্রামে সেটা করেনি। সেটা কেন? এটা কি বাংলাদেশের নৈতিক জয় নয়? টাইগার অধিনায়কের ধারণা, অজিরা নির্ঘাত চাপে আছে। আর সে কারণেই হয়তো উইকেট, আবহাওয়া ও পরিবেশ- পরিস্থিতি ঠাউরে তার পর দল সাজানোর চিন্তা-ভাবনা করছে। মুশফিকের আত্মবিশ্বাসী ও চিবুক দৃঢ় করা ব্যাখ্যা, হ্যা, অবশ্যই। নৈতিক জয় তো অবশ্যই। তারা (অস্ট্রেলিয়ানরা) হয়তো চাপে আছে। তাই দীর্ঘ দিনের ধারার ব্যতিক্রম করেছে। তবে এটুকু বলেই থামেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওপরের কথাগুলো শুনলে মনে হতে পারে মুশফিকের ধারণা, অস্ট্রেলিয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার টেস্ট শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে একাদশ ঘোষণা করেনি বা দল চূড়ান্ত করতে পারেনি মানে তারা বাংলাদেশের ভয়ে তটস্ত। বিষয়টা তেমন নয়। মুশফিক জেনে-বুঝেই অমন কথা বলেছেন। তার ধারণা, বাংলাদেশ ঘরের মাঠে বিপজ্জনক দল- এ সত্য উপলব্ধি থেকেই আরও বেশি সতর্ক সাবধানী অস্ট্রেলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্ট। তাইতো মুশফিকের মুখে এমন কথা, আবার চাপে থাকলেই যে অজিরা হেরে যাবে, তা কিন্তু নয়। আবার চাপ না থাকলেই যে ভালো করবে, ব্যাপারটা সে রকমও নয়। আসলে অস্ট্রেলিয়ানরা অনেক পেশাদার একটা দল। তারা জানে তাদের কী করতে হবে। এটাও সত্য যে, গত টেস্টে তারা যে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তাতে তারা জেনে গেছে যে হোম কন্ডিশনে আমরা কতটা ডেঞ্জারাস। আমার বিশ্বাস, এই মেসেজটা খুব ভালোভাবে তাদের কাছে গেছে। তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে যে, আমাদের বিপক্ষে কিছু করতে হলে অনেক ভেবেচিন্তেই করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক অজিদের টেস্ট শুরুর আগে দল চূড়ান্ত না করা আর ঘোষণা না দেয়াকে নৈতিক জয় ভেবেই বসে থাকতে নারাজ। তাইতো মুখে এমন কথা, তবে আমাদের এটা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাক করতে হবে। আমার মনে হয় প্রথম টেস্টে আমরা যা করেছি; তা করতে হবে। অনেক চাপের মুহূর্ত থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। যেমন ১০ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। দ্বিতীয় ইনিংসে স্মিথ-ওয়ার্নারের জমে যাওয়া জুটিটাও আমরা ভাঙতে পেরেছি। এই বিশ্বাসগুলো আর কঠিন কাজগুলোর সফল বাস্তবায়নই আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। প্রথম টেস্টের আগেও বলেছি যে, আমাদের এমন কিছু খেলোয়াড় আছে যারা এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে দলকে বের করে আনতে পারে। এই আত্মবিশ্বাসগুলো আমাদের থাকতে হবে। জায়গামতো এমন বোধ ও অনুভব থাকলেই মঙ্গল। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা মুশফিক বাহিনীর কাছ থেকে এমন পরিণত চিন্তা-ভাবনা আর আত্মবিশ্বাসী রূপ দেখতেই উন্মুখ। আর/১০:১৪/০৩ সেপ্টেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wzfjFY
September 04, 2017 at 04:31AM
03 Sep 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top