সুরমা টাইমস ডেস্ক:: বাগেরহাটের মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কারিগররা রাত-দিন ব্যস্ত। অধিকাংশ মণ্ডপে মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, কারিগররা প্রতিমায় রং চড়াতে শুরু করেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সে কাজটুকুও শেষ হয়ে যাবে। আর তার পরপরই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা হবে। দেবীদুর্গা এবছর নৌকায় চড়ে আসবেন আর যাবেন ঘোড়ায় চড়ে। ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজা চলবে।
গত কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজাটি অনুষ্ঠিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদার বাড়ি। বাগেরহাটে দুর্গা উৎসব মানেই সিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা।
গত সাত বছর ধরে লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহাধূমধামে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। দিনদিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছর ছিল ৬০১টি প্রতিমা। এ বছর ওই মণ্ডপে ৬৫১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করেছেন পূজার আয়োজক ডা. দুলাল শিকদার ও তার ব্যবসায়ী ছেলে লিটন সিকদার। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয় করে প্রতিবছর জামজমকপূর্ণ দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন।
ভাষ্কর মিলন বাছাড় বলেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন কারিগর তাদের নিপূণ হাতে প্রতিমা তৈরির কাজ করে চলেছেন। শেষ সময়ে রং তুলির কাজ পুরোদমে চলছে। এখন আমাদের দম ফেলার সময় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, সিকদার বাড়ির এমন দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য আমরা দারুণ খুশি। সিকদার বাড়ির পূজার জন্য আজ আমাদের হাকিমপুর গ্রাম দেশ-বিদেশে সবার কাছে পরিচিত হয়েছে। আমরা সব ধর্মের মানুষ এই দুর্গোৎসবে মিলিত হই। দুর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, তার জন্য আমরা সবাই সহযোগিতা করে থাকি।
এছাড়া বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সার্বজনীন পূজা মন্দির, চুলকাঠি বাজারের বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, পোলঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির এবং ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের বেতাগা মমতলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপগুলোতে বেশিসংখ্যক প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে।
আয়োজক লিটন সিকদার বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিনদিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা দুর্গাপূজা দেখতে আসে। সকল ধর্মের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় দুর্গোৎসব। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বাগেরহাটের প্রত্যন্ত হাকিমপুর গ্রামের এই পূজাটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার বলেন, বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় এবছর প্রায় ছয় শতাধিক মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মত এবছরও জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। দুর্গাপূজা মানেই এখন বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদারবাড়ির দুর্গাপূজা। এই মণ্ডপকে ঘিরেই এখন বাগেরহাট। সিকদার বাড়ির পূজাটি আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে দর্শণার্থীদের বিপুল সমাগম ঘটে। এছাড়াও ফকিরহাটের বেতাগার মমতলা ও পোলঘাট দূর্গামণ্ডপে বেশি প্রতিমার পূজা হবে। উৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬০৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন সারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাগেরহাটে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2fbrk06
September 16, 2017 at 09:45PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন