নিজস্ব প্রতিবেদক ● ষাটের দশকের গোড়ার দিকেও কুমিল্লার মোট শ্রমশক্তির ৯৩ শতাংশই ছিল কৃষিমজুর। ভূমির উৎপাদনই ছিল তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি। কিন্তু ভূমির উৎপাদন আশানুরূপ ছিল না। ক্ষুদ্রায়তন কিছু কুটির শিল্প গড়ে উঠলেও জেলায় বৃহদায়তন ও ভারী শিল্প তখনো গড় ওঠেনি। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তাই বিকল্প পেশা খুঁজতে থাকে জেলার অধিবাসীরা। স্বাধীনতার পর থেকেই বিদেশে পাড়ি জমাতে থাকে তারা। আশির দশকে তা ব্যাপকতা পায়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিকের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা কুমিল্লা।
কুমিল্লা অর্থনৈতিক সূচকে উন্নত এলাকা হওয়ায় জীবনযাত্রার মানের সাথে তাল মেলাতেও অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন প্রবাসে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত এক দশকে শুধু কুমিল্লা জেলা থেকেই বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে ছয় লাখের বেশি মানুষ, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া মোট জনশক্তির যা প্রায় ১১ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে শ্রম অভিবাসনে এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলা। চাঁদপুর, নোয়াখালী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন দেশে কর্মরত।
জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এগিয়ে থাকা অঞ্চলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি বেশি। এসব অঞ্চল থেকে শ্রমিক অভিবাসনের হারও তাই বেশি। এছাড়া আগে থেকেই যেসব জেলার লোকজন বিদেশে রয়েছে, সেখান থেকেও বেশি সংখ্যায় বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে লোকজন।
বিদেশে শ্রম অভিবাসনে আগে থেকেই ভালো অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা। সেই ধারাবাহিকতা এখনো ধরে রেখেছে জেলাটি। বিএমইটির হিসাবে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু কুমিল্লা থেকেই চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ১৩৮ জন। তাদেরই একজন দাউদকান্দির নয়াকান্দি গ্রামের ইউসুফ হোসেন রাজু। ২০১০ সালে চাকরি নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান তিনি। দুই বছর পর তার আরেক ভাই আবুল বাশারও পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সম্প্রতি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন ছোট ভাই জিশান আহমাদ। তিনিও চেষ্টা করছেন জার্মানি যাওয়ার।
অন্যান্য জেলার চাইতে এ জেলার মানুষের মাঝে ভাতৃত্ববোধ বেশি থাকায় একে অপরকে সহজেই বিদেশ যেতে উৎসাহ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে জিশান আহমাদ বলেন, তার দুই ভাই আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য বিদেশে গেছেন। দেশে চাকরির সীমিত সুযোগ ও কম বেতনের কারণেই বিদেশে পাড়ি দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তারা।
চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার এ প্রবণতা কুমিল্লার মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান জেলা জনশক্তি রফতানি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদ উল্লাহ আকন্দ। তিনি বলেন, কয়েক বছরে চাকরি নিয়ে এ জেলার মানুষের বিদেশ গমনের হার বেড়ে গেছে। গত বছরও কুমিল্লা থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে ৪২ হাজার ৫১১ জন।
The post কুমিল্লার মানুষ যে কারণে বেশি বিদেশ যায় appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2fuck9M
September 28, 2017 at 04:45PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন