চট্টগ্রাম, ০৭ সেপ্টেম্বর- দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ করল সমতায়। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট চার দিনেই অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৭ উইকেটে। সিরিজ ড্র হয়েছে ১-১ ব্যবধানে। ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক অফ স্পিনার নাথান লায়ন। তার অসাধারণ বোলিংয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানেই। ৮৬ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারালেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দৃঢ়তায় সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সফরকারীরা। ম্যাক্সওয়েল ২৫ ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই ম্যাচ জিতলেও টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ অবনমন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। স্টিভ স্মিথের দল চার থেকে নেমে গেছে পাঁচে। চারে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। দুই দলের রেটিং পয়েন্ট সমান ৯৭ হলেও ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে আছে কিউইরা। আর বাংলাদেশ ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে নয়ে আছে। আটে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ১। অস্ট্রেলিয়া শিবিরে জোড়া আঘাত: পরপর দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের ওভারে স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারে ম্যাট রেনশকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দী হয়ে ফেরেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার (২২)। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ৪৮। ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। স্মিথকে ফেরালেন তাইজুল: তাইজুল ইসলামের আগের ওভারের প্রথম দুই বলে টানা চার মেরেছিলেন স্টিভ স্মিথ। পরের ওভারে এসে প্রথম বলেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারের বল কাট শট খেলতে গিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্মিথ (১৬)। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ৪৪, সফরকারীরা জয় থেকে ৪২ রান দূরে। ম্যাট রেনশর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। আবার মুস্তাফিজের শিকার ওয়ার্নার: প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের বাউন্সার হুক করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নার (৮)। ৮৬ রান তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ১ উইকেটে ১৩। ম্যাট রেনশর সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৮৬ রান: দুই ম্যাচ টেস্টে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনতে চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের জন্য ৮৬ রান করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানকে সরাসরি বোল্ড করে বাংলাদেশকে অলআউট করেন স্টিভ ওকিফ। লায়নের ষষ্ঠ শিকার তাইজুল: বাংলাদেশ ইনিংসের ৬৯তম ওভারের চতুর্থ বলে লায়নের শিকার হয়েছেন তাইজুল ইসলাম। তাকে বোল্ড করে নিজের ষষ্ঠ শিকারে পরিণত করেন লায়ন। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩২ বলে ৪ রান করেন তাইজুল। মুমিনুলকে ফেরালেন লায়ন: দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট পেলেন ন্যাথান লায়ন। উপড়ে ফেললেন মুমিনুল হক বাধা। সুইপ করতে গিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্যাট কামিন্সের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়েছেন। ফলে ব্যক্তিগত ২৯ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। ফিরলেন মুশফিকও: মুমিনুল হকের সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে কিছুটা টানার চেষ্টা করেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু মুমিনুলকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। কামিন্সের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১০৩ বলে ৩১ রান করেছেন মুশফিক। শতরান ছাড়িয়ে বাংলাদেশ: ৪২ ওভারে দলীয় তিন অঙ্কে গেছে বাংলাদেশের সংগ্রহ। আস্থার সঙ্গে খেলছেন দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক। প্রথম ইনিংসে চার নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল এবার নেমেছেন আট নম্বরে। আবারও স্টাম্পড সাব্বির: প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন সাব্বির রহমান। দলের দুঃসময়ে হাল ধরতে পারেননি তিনি। নাথান লায়নের বল এগিয়ে এসে প্রতিহত করতে গেলে সেটি নিচু হয়ে ম্যাথু ওয়েডের হাতে জমা হয়। আর তাতেই উইকেট ভেঙে দিলে ব্যক্তিগত ২৪ রানে ফিরতে হয় সাব্বিরকে। বাংলাদেশের লিড: দ্রুত পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে লিড নিয়েছে। মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান খেলছেন আস্থার সঙ্গে। লাঞ্চের পর ফিরে তাদের কাছেই বড় কিছুর প্রত্যাশা থাকবে টাইগার ভক্তদের। দাঁড়াতে পারেননি নাসিরও: টপঅর্ডারদের ব্যাটিং বিপর্যয়ে দাঁড়াতে পারেননি নাসির হোসেনও। দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর ২০ ওভারের মধ্যেই শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেছেন। চার নম্বরে নামা নাসির হোসেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় হলেন তিনি। ১৮ বলে ৫ রান করে ফিরে যান নাসির। ফিরে গেলেন সাকিবও: বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি সাকিব আল হাসানও। তার আউটের ফলে দলীয় ৩৯ রানেই টপঅর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যানকে হারাল বাংলাদেশ। নাথান লায়নের বলে গালিতে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যাক্তিগত ২ রানে সাজঘরে ফিরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তামিমের পর সাজঘরে ইমরুল: তামিমের পর সাজঘরে ফিরতে দেরি করেননি ইমরুল কায়েস। ইনিংসের ১৭তম ওভারে নাথান লায়নের করা প্রথম বলেই এক্সট্রা কাভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ইমরুল কায়েস। জায়গায় দাঁড়িয়েই বলটি তালুবন্দি করেন ম্যাক্সওয়েল। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ১৫ রান করেন ইমরুল। স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন তামিম: তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের কাছে বোধহয় এমন আউট প্রত্যাশা করেন না ভক্তরা। নাথান লায়নের বল দুই পা এগিয়ে এসে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন তামিম। মিস হওয়ায় উইকেটের পিছনে বল পেয়ে স্টাম্প ভেঙে দিতে দেরি করেননি অসি উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েড। তাতেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৮ বলে ১২ রান করেন দেশসেরা এ ওপেনার। শুরুতেই সৌম্যর বিদায়: দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের শুরুতেই সাজঘরে ফিরে গেলেন বাংলাদেশি ওপেনার সৌম্য সরকার। অসি পেসার প্যাট কামিন্সের বলে ফার্স্ট স্লিপে রেনশর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় হন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে ২০ বলে ৯ রান করেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। আট মিনিটে অলআউট অস্ট্রেলিয়া: চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনে মাত্র আট মিনিট ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন নাথান লায়ন। স্লিপে দাঁড়ানো ইমরুল বল তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। ৭২ রানের লিড: কমপক্ষে ১০০ রানের লিডের প্রত্যাশার কথা গতকাল জানিয়েছিলন অস্ট্রেলিয়া ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।তবে ৭২ রানের লিড চতুর্থ দিন আর বাড়তে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। কোনো রান যোগ করার আগেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার। ৮৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার। ৫৬ রানে অতিথিদের শেষ ৫ উইকেট তুলে নিয়ে লিডটা একশ রানের নিচে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রান করা স্বাগতিকরা স্টিভেন স্মিথের দলকে থামিয়েছে ৩৭৭ রানে। মুস্তাফিজেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া: গতকাল ৩ উইকেট নিয়ে নিজের ফর্মের কথা জানান দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আজ দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া দলের শেষ উইকেটটিও তার দখলে গেছে। আজ মুস্তাফিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই স্লিপে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন অস্ট্রেলিয়া নাথান লায়ন। ডেভিড ওয়ার্নারকে গতকাল সেঞ্চুরির আগে থামানো যায়নি। তবে সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে ফেরানোর পর অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টি বিঘ্নিত দিন শেষে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রান ৯ উইকেটে ৩৭৭। আজ শেষ উইকেটটি তাড়াতাড়ি নেওয়ার প্রত্যাশা থাকবে টাইগার বোলারদের। আর/১৭:১৪/০৭ সেপ্টেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2f6F6gZ
September 07, 2017 at 11:30PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top