চট্টগ্রাম, ০৫ সেপ্টেম্বর- দিনের খেলার তখন মিনিট পনের বাকি। গরমে, ক্লান্তিতে-শ্রান্তিতে নুইয়ে পড়লেন পিটার হ্যান্ডসকম। খেলা বন্ধ থাকল কিছুক্ষণ, চলল শুশ্রূষা। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও তখন মনে হলো অবসন্ন। নিজেদের কন্ডিশনে অভ্যস্তই তারা, গরম তাই সমস্যা নয়। কিন্তু কাবু মানসিক ক্লান্তিতে। সমস্যাটি পুরোনো। কোনো জুটি দাঁড়িয়ে উঠতে শুরু করলেই বাংলাদেশের শরীরী ভাষা পড়তে শুরু করে। আর সে সময় তো ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে হ্যান্ডসকমের জুটি পেরিয়ে গেছে শতরান। কাটিয়ে দিয়েছে তারা প্রায় একটি সেশন। শরীর তখন যেন ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে! হ্যান্ডসকম ঠিকই দাঁড়িয়ে গেলেন শারীরিক সমস্যা সামলে। অপরাজিত থেকে শেষ করলেন দিন। বাংলাদেশ পারল না মানসিক ক্লান্তি জয় করে চাঙা হতে। শেষ সময়ে চাপ সৃ্ষ্টি করতে। দিনের শেষটা হলো হতাশায়। দু-একটি সময় ছাড়া হতাশা ছিল আসলে দিন জুড়েই। সকালে ব্যাটসম্যানরা পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে। বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম আউট হলেন সবার আগে। এরপর দলকে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব যার, সেই নাসির হোসেন পারলেন না বড় কিছু করতে। শেষ ৪ উইকেটে দ্বিতীয় দিনে যোগ হলো মাত্র ৫২ রান। তিনশ রান পার করার মনস্তাত্ত্বিক স্বস্তি যদিও ছিল। কিন্তু বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দেখা গেল না লড়াইয়ের মানসিকতাই। মুশফিকের অসাধারণ ক্যাচে শুরুতে উইকেট মিলেছিল। কিন্তু স্টিভেন স্মিথের একেকটি শট আর ডেভিড ওয়ার্নারের দৃঢ়তায় হারিয়ে গেল বাংলাদেশের চনমনে ভাব। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকল বোলিং পরিবর্তন। মাঠ সাজানোয় দেখা গেল রক্ষণাত্মক ভাবনার ছোঁয়া। টেস্টের আগে মুশফিক জানিয়েছিলেন আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার প্রতিজ্ঞা। কিন্তু সেই ভাবনার প্রতিফলন পড়ল না মাঠে। ওয়ার্নার-স্মিথের জুটি ৯০ রান পেরিয়ে গেলেও দেখা গেল না বোলিং পরিবর্তন। শেষ পর্যন্ত যখন বদলানো হলো বোলার, তাইজুল ইসলাম এসে প্রথম বলেই বোল্ড করলেন স্মিথকে। নতুন বোলার মানেই উইকেটের নিশ্চয়তা নয় অবশ্যই। তবে ব্যাটসম্যানকে নতুন করে ভাবানোর নিশ্চয়তা ঠিকই। একটা জুটি গড়ে উঠল সেই বাড়তি ভাবনার ঝামেলায় না ভুগেই। মোমেন্টাম নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ ছিল তখনই। পিটার হ্যান্ডসকম এখনও টেস্টের জগতে যথেষ্ট নবীন। উপমহাদেশে পরীক্ষিত নন। সুযোগ ছিল চাপে ফেলার। উল্টো হ্যান্ডসকম দারুণ কিছু শটে ফিরিয়ে দিলেন চাপ। যথারীতি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিল্ডিং ছড়ানো, গা-ছাড়া ভাব, বোলিংয়ে নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছাপ। দিনজুড়েই স্টাম্পের বাইরে বেশি বল করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাসির হোসেন ব্যাখ্যা দিলেন, স্টাম্পে বল খুব বেশি টার্ন করছিল না। স্টাম্পের বাইরে পায়ের ক্ষতচিহ্নে বল ফেলে তবু কিছু আদায় করা যাচ্ছিলো। অথচ অস্ট্রেলিয়া সফল হয়েছে স্টাম্পে বল করেই! ম্যাচের প্রথম দিন বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকেই এলবিডব্লিউ করেছেন ন্যাথান লায়ন। উইকেটে টার্ন নেই বেশি। লায়ন উইকেট নিয়েছেন সোজা বলেই। শুধু ফ্লাইট বৈচিত্র আর গতির হেরফের করিয়ে। বাংলাদেশে বেছে নিয়েছিল উল্টো পথ। বাইরে বল ফেলে রান না দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলতে বাধ্য করা। কিন্তু সেটির জন্য প্রয়োজন এক জায়গায় ক্রমাগত বল করে যাওয়া। ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়া। বাংলাদেশ পারেনি সেটি করতে। উইকেট বোলারদের জন্য খানিকটা কঠিন বটে। বেশ মন্থর, বাউন্স কম। টার্ন খুব বেশি মেলে না। মিললেও ধীরগতির টার্ন, যা ব্যাটসম্যানকে বিপাকে ফেলে না বেশি। কিন্তু এর পরও ঠিক উপায় বের করে নিয়েছেন লায়ন-অ্যাগাররা। তুলনায় বরং বাংলাদেশের স্পিনাররা উইকেট থেকে একটু হলেও বেশি সাহায্য পেয়েছে। দ্বিতীয় দিনে সামান্য হলেও বেশি টার্ন করেছে বল। বেশ কবারই বিপজ্জনকভাবে নিচু হয়েছে। কিন্তু সেটুকু কাজে লাগাতে পারেননি বোলাররা। সুযোগ হাতছাড়া তো ছিলই। ৫২ ও ৭৩ রানে বেঁচে গেলেন ওয়ার্নার। মুমিনুল হকের ক্যাচ বা মুশফিকুর রহিমের স্টাম্পিং, সুযোগ কঠিন ছিল দুটিই। কিন্তু ওয়ার্নারের উইকেট তো সহজে মেলার কথাও নয়। কঠিন সুযোগ তো নিতে হবে টেস্ট ক্রিকেটে! বাংলাদেশ পারেনি, দিনটি তাই অস্ট্রেলিয়ার। ক্যাচ ছাড়ার পর শরীরী ভাষা ম্রিয়মান হয়ে পড়ে আরও। নেতিয়ে পড়া দলকে উজ্জীবিত করতে না পাররার দায় অধিনায়ককে কিছুটা হলেও নিতে হয়। মুশফিকের বোলিং পরিবর্তন আর মাঠ সাজানো নিয়ে প্রশ্ন তো প্রায় সবসময়ের। ৮৮ রানের ইনিংসে ওয়ার্নার চার মেরেছেন মাত্র চারটি। তার কাজ আরও কঠিন করে তোলা যেত, তার ধৈর্যের পরীক্ষা আরও নেওয়া যেত সিঙ্গেল-ডাবল আটকে। কিন্তু ওয়ার্নার বা হ্যান্ডসকম, কাউকেই সেই চাপে ফেলতে পারেনি বোলারদের বোলিং বা মুশফিকের অধিনায়কত্ব। তবে সব শেষ হয়ে যায়নি এখনই। বরং ম্যাচের অনেকটাই বাকি। প্রথম টেস্টেও শেষ ইনিংসে ওয়ার্নার ও স্মিথের জুটি থামিয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই টেস্টের তো মোটে দুদিন গেল। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে আছে বটে, তবে ম্যাচ জিতে যায়নি এখনই। ৮০ রানে পিছিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। বোলিং-ফিল্ডিং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজ কঠিন করে তুললে এই রানও কম নয়। এই পিছিয়ে থাকাও এক পরীক্ষা। সব দিন সব কিছু পক্ষে আসে না। পরিকল্পনা মতো হয় না। মিরপুরে কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ানরা আর উইকেট। এখানে উইকেট অতটা সহায়ক নয়, অস্ট্রেলিয়ানরাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের এটি তাই চরিত্রের পরীক্ষা, মানসিকতার পরীক্ষা। নতুন পরিকল্পনা, প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা। দল আসলেই কতটা পরিণত হচ্ছে, সেটি প্রমাণ করার পরীক্ষা। অস্ট্রেলিয়ার লিড যদি ৫০-৬০ রানেও রাখা যায়, তবু হয়তো সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। সেটি অসম্ভব নয়। প্রয়োজন নতুন দিনে নতুন ভাবে শুরু করা। পরিকল্পনা নতুন, শরীরী ভাষায় আর ভাবনায় আগ্রাসন, নেতৃত্বে সৃষ্টিশীলতার ছাপ রাখা। দিনের শেষ ভাগে অসুস্থ হয়ে পড়া হ্যান্ডসকম আবার দাঁড়িয়ে যান পানির ছোঁয়ায় আর একটি ট্যাবলেট নিয়ে। বাংলাদেশেরও প্রয়োজন তেমন কোনো টনিক। তাহলেই হয়ত তৃতীয় দিন দেখা যাবে ভিন্ন বাংলাদেশকে। আর/১০:১৪/০৫ সেপ্টেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2eCDSJN
September 06, 2017 at 05:18AM
05 Sep 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top