তিতাস প্রতিনিধি ● তিতাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে মা হয়েছে এক কিশোরী। এই নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এলাকায় দেন-দরবারে ধর্ষণকারী সনাক্ত হলেও মোটা অংকের টাকায় রফা হয়ে যায়। ফলে পিতৃ পরিচয়হীন ভাবে বেড়ে উঠছে শিশু ইব্রাহীম। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার শাহপুর গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে ভিকটিম ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শাহপুর বড় কান্দা চকের বাড়ীর সফর আলীর ভাগনী রানু আক্তারকে (১৮) গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে নানাহ ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার পালাক্রমে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি জালাল মিয়ার ছেলে মোস্তাফা (২২) ও আনোয়ার হোসেনের ছেলে আলাউদ্দিনসহ অজ্ঞাতরা।
ঘটনার ৩মাস পর ওই কিশোরী অন্তঃসত্তা হয়ে পরলে এলাকায় কিছুটা কানাঘোষা হলেও সেসময় ফের ঘটনাটি চুপ মেরে যায়। এরপর চলতি বছরের জুলাই মাসের দিকে রানু একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। শিশুটি জন্মে পর থেকেই পিতৃত্বের দাবী নিয়ে গোপনে বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় অসহায় কিশোরী ও তার পরিবার।
তবে ধর্ষণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানা পুলিশের দারস্থ হতে পারেনী বলে অভিযোগ উঠে অসহায় ভিকটিমের পরিবার থেকে। সব শেষ গত মাসের মধ্যবর্তী সময়ে মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া সরকারের নেতৃত্বে গোপনে একটি শালিস হয়। এতে মোস্তফা ও আলাউদ্দিন নামের দুইজন ধর্ষণকারীকে সনাক্ত করা হলেও অজ্ঞাত রয়ে যায় অন্যরা।
পরে দুই ধর্ষণকারীকে ও ভিকটিম রানুর পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে টাকা এখনো আদায় হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান চেয়ারম্যান নিজেই। চলতি মাসের সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে টাকা আদায় হওয়ার কথা জানান তিনি। তবে শিশু ইব্রাহিমের পিতৃ পরিচয় সনাক্ত হয়নি ওই শালিস বৈঠকে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার শালিস বৈঠকের রায় শুনে পুরো মজিদপুর ইউনিয়নসহ আশে পাশের গ্রামগুলোতে চলছে মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা। সকলের মুখে একই প্রশ্ন, কে হবে এই অবুঝ শিশু ইব্রাহিমের পিতা? কে নেবে এই ৬ লাখ টাকা?। এভাবেই কি পিতৃ পরিচয়হীনভাবে বেড়ে উঠবে নিষ্পাপ শিশু ইব্রাহীম?
দুই মাসের শিশু ইব্রাহীমের মা রানুর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে সাংবাদিকদের জানান, মোস্তফা ও আলাউদ্দিন আমাকে নানাহ ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিরাতেই ধর্ষণ করতো। তাদের হুমকির ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারতাম না। পরে চেয়ারম্যান সাহেব হেগো দুইজনকে দুই লাখ টাকা করে এবং আমাদেরকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু আমার সন্তানের পিতা কে হবে, তা কোন সমাধা করা হয়নি। তবে তার সন্তানের পিতার পরিচয় আদায়ের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়ার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সামাজিকভাবে বসে মোস্তফা ও আলাউদ্দিন নামের দুইজনকে সনাক্ত করতে পেরেছি। প্রথমে চেয়েছিলাম আলাউদ্দিনের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে মোস্তফার নিকট মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেই। পরে মোস্তফার পরিবারের নানাহ অভিযোগের বিষয় বিবেচনা করে দেখলাম এমন পিতার চেয়ে শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য টাকাটাই উত্তম। তাই মোস্তফাকে ২লাখ, আলাউদ্দিনকে দুই লাখ ও মেয়েটির পরিবারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এই টাকা আদায় করে শিশুটির নামে ব্যাংকে একটি ফিক্সট ডিপোজিট একাউন্টে রাখা হবে এবং এই শিশুটিকে যে লালন পালন করবে, তাকে নমিনি করা হবে। এখনো কোন টাকা আদায় করতে পারেনী। তবে শিশুটির পিতৃ পরিচয় নিয়ে তিনি তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেন নী।
The post তিতাসে গণধর্ষণে মা হলো কিশোরী appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2h2tOuu
September 12, 2017 at 09:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন